দক্ষিণ আফ্রিকার এই পিচে এমনিতেই তিনশো বা তার বেশি রান ওঠে। এ রকম পিচেই তো দক্ষিণ আফ্রিকা এক বার ৪৩৪ তাড়া করে ফেলেছিল। এক ওভারে পাঁচ বা তার কম রান দিতে পারলে বোলাররা নিজেই নিজেদের পিঠ চাপড়ায়! তা হলে কী করে বলব যে, ওয়াংখেড়ে আর ওয়ান্ডারার্সের মধ্যে একটা গোটা পৃথিবীর দূরত্ব?
বাউন্সের কথাই ধরুন। সব সময় ফ্রন্টফুটে থাকা মোটেও সহজ হবে না। বেশি উচ্চতার জন্য এখানকার হাওয়া পাতলা, তাই বল বেশ তাড়াতাড়ি ব্যাটে আসে। ভাল ব্যাকফুট প্লেয়ার হলে তাকে বলব স্কোয়্যারের দিকে শট খেলতে। ওয়ান্ডারার্সের মাঠটা খুব বড়, তাই সব গ্যাপগুলো আটকানো বেশ কঠিন। আর হ্যাঁ, ওয়ান ডে-র নতুন নিয়মগুলোও কাজে আসবে। এই মাঠে ভারতের যে রকম পারফরম্যান্স, মনে হচ্ছে এ বার তার চেয়ে ভাল খেলবে ধোনিরা। আমার তো মনে আছে এক বার এখানে মাত্র এক রানে জিতেছিল ভারত। সব মিলিয়ে ওয়ান্ডারার্সে ভারতের পরিসংখ্যান কিন্তু খুব একটা ভাল নয়। তার সঙ্গে এ বার আরও একটা সমস্যা আছে দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রায় কোনও সময়ই পাচ্ছে না ভারত।
কয়েকটা ব্যাপার মনে করলে অবশ্য ভারতীয় সমর্থকরা স্বস্তি পাবেন। ওয়ান ডে ক্রিকেটে এখন টিম ইন্ডিয়া খুব শক্তিশালী। শিখর ধবন, বিরাট কোহলি আর রোহিত শর্মা— এই তিন জনই সম্ভবত জীবনের সেরা ফর্মে রয়েছে। ফিল্ডিংটাও এখন দারুণ করছে ভারত। যার সঙ্গে রয়েছে এক-দু’রান নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা। আর একটা ব্যাপার হল, পাকিস্তানের সৌজন্যে এখন দক্ষিণ আফ্রিকা টিমটা বেশ নড়বড়ে হয়ে আছে।
ভারতীয় ওপেনারদের পক্ষে ডেল স্টেইন আর বাকি বিপক্ষ পেসারদের ভয়ডরহীন ভাবে আক্রমণ করাটা খুব জরুরি। একই রকম গুরুত্বপূর্ণ হল যুবরাজ সিংহ আর সুরেশ রায়নার টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার কথা মাথায় রেখে খেলা, টেস্ট সিরিজের আগে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ছন্দে থাকা আর ভুবনেশ্বর কুমার-মহম্মদ শামির যুগলবন্দি।
দুটো দলের যুদ্ধের মধ্যে নিশ্চয়ই একটা বাড়তি তেজ থাকবে। ছ’মাস আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যখন শেষ বার দু’দলের দেখা হয়েছিল, তখন ভারত অসাধারণ একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। ধোনিরা সেই ম্যাচে তিনশোর উপর তুলেছিল, আর জিতে গিয়েছিল। এই সিরিজেও ভারতকে বড় রানের একটা কুশন তৈরি করতে হবে, যাতে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখা যায়।
এই সফরটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশের মাঠে নিজেদের পরিসংখ্যান পাল্টানোর লড়াই ভারতের সামনে। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের নতুন প্রজন্মের উপরেও লোকের চোখ থাকবে। ঘরের বাইরে ওরা কী ভাবে মানিয়ে নিতে পারছে, সেটা দেখে নেওয়া কিন্তু খুব জরুরি। মনে রাখবেন, এই মরসুমেই কিন্তু নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সফর আছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় কাজটা ভাল ভাবে শুরু করতে পারলে পরের বছরের দিকে আরও বেশি আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকতে পারব। |