ধোনির তরুণ ব্রিগেডের আসল পরীক্ষা এই বার শুরু হল। আজ ওয়ান্ডারার্সে সবার নজর থাকবে টিম ইন্ডিয়ার দিকেই। এমনিতে এক দিনের ক্রিকেটের বিচারে বছরটা অসাধারণ কাটছে ভারতের। যার শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডের মাটিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতা দিয়ে। শেষ হবে দক্ষিণ আফ্রিকায়। আর স্টেইন, কালিস, মর্কেলদের ডেরায় গিয়ে ওদের চ্যালেঞ্জ করার ঠিক আগে, ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোটা ধোনিদের আত্মবিশ্বাসকে নিশ্চয়ই আরও কয়েক ধাপ উপরে তুলে দিয়েছে।
সব থেকে বড় কথা, ভারতের এই একদিনের দলটা ক্রমশ উন্নতি করছে। গত ছ’মাসে বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, রবীন্দ্র জাডেজা, মহম্মদ শামি আর শিখর ধবনের মতো ক্রিকেটাররা কিছু অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স করে দেখিয়েছে। ওরা শুধু জেতাচ্ছেই না, নিজেদের খেলার মান প্রতিবার নতুন উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়ে জয় ছিনিয়ে আনছে। যা আমার কাছে একটা ভাল টিমের সব থেকে বড় লক্ষ্মণ।
এ বার আগামী পনেরো মাস ভারতীয় দলের হয়ে এরা প্রত্যেকে ক্রিকেট বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে খেলবে। আমি মনে করি এই বিদেশ সফরগুলোয় ভারতের কপালে যা-ই জুটুক না কেন, অভিজ্ঞতাটা এই দলকে আরও মজবুত, জমাট আর শক্তিশালী করে তুলবে। |
|
দক্ষিণ আফ্রিকা দলে জাক কালিস আর ডেল স্টেইনের প্রত্যাবর্তন দেখে আমি মোটেই অবাক নই। বরং, এটাই হওয়ার কথা ছিল। ভারতের মতো জবরদস্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলার জন্য বড় প্লেয়াররা সব সময় মুখিয়ে থাকে। দক্ষিণ আফ্রিকাও জানে, এই ভারতকে হারাতে হলে ওদের পূর্ণ শক্তি নিয়ে ঝাঁপাতে হবে। টাটকা-টাটকা ঘরের মাঠে পাকিস্তানের কাছে অপ্রত্যাশিত হেরেছে ওরা। যে হার ওদের বড়সড় একটা ঝাঁকুনি দিয়ে গিয়েছে। নিট ফল, ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজে বাড়তি সতর্কতা আর প্রস্তুতির সঙ্গে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা। হাসিম আমলা, ফাফ দু’প্লেসি, এবি ডে’ভিলিয়ার্স, ডেভিড মিলারের মতো জাত ক্রিকেটার সেরাটা উজাড় করে দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকবে।
ব্যাটিং চিরকাল ভারতের আসল শক্তি। কিন্তু এ বার দক্ষিণ আফ্রিকায় যে দলটা পাঠানো হয়েছে, সেটার বোলিং-ভারসাম্য খুব ভাল। এক দিকে জাহির খানের (যদিও ওয়ান ডে-তে নেই) অভিজ্ঞতা আর ছোবল থাকায় উল্টো দিকে উমেশ যাদব আর শামির মতো প্রতিভাবানরা গিয়ার বদলানোর সুযোগ পাবে। দক্ষিণ আফ্রিকার পিচগুলো বোলারদের স্বর্গ। এ বার সেখানে আমাদের বোলাররাই কিন্তু ফারাক গড়ে দিতে পারে। শামিদের উপর আস্থা রাখছি।
ওয়ান্ডারার্স পিচের গতি, বাউন্স আর মুভমেন্টের জন্য ভারত আশা করি তৈরি। অভিজ্ঞতা থেকে জানি, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে বেশ কিছুটা উচ্চতায় বলেই ওয়ান্ডারার্সে বল সুইং করে অনেক বেশি, ক্যারিও হয় অনেকটা করে। ব্যাটে বলটাও ভাল আসে। যে কারণে ওয়ান্ডারার্সে বড় রান ওঠার একটা ধারা রয়েছে। ভারতের কাছে এই মাঠটার তাৎপর্যও আলাদা! এখানেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল ধোনিরা। সেই সুখস্মৃতি ওদের মানসিক ভাবে অনেকটাই টগবগে রাখবে। খালি একটা ব্যাপার খচখচ করছে। সেটা হল, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য খুব কম সময় পাচ্ছে ভারত। এক দিনের সিরিজের আগে আমাদের ছেলেরা মাত্র দু’দিন ট্রেনিং করতে পেরেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পরিবেশ আর আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য মাত্র আটচল্লিশ ঘণ্টা যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। স্টেইন, মর্কেল, ফিল্যান্ডার, কালিসের মতো সেরা বোলারদের মহড়া নিতে নামার আগে ধোনির যেন মনে না হয় প্রস্তুতিতে ওরা পিছিয়ে।
এর আগেও ভারত এত কম প্রস্তুতিতে বিদেশে খেলতে নেমেছে। যার ফল অনেক সময়েই কিন্তু ভাল হয়নি। প্রার্থনা করি, এ বার তেমন কিছু যেন না হয়। |