ডেল স্টেইন-মর্নি মর্কেলদের বাউন্সারের পাল্টা উত্তর তাঁর কী?
মহম্মদ শামির সঙ্গে কথা বললে মনে হবে, উত্তরটা দক্ষিণ আফ্রিকায় পা রাখার আগেই তিনি পেয়ে গিয়েছেন!
ইডেনে অভিষেকের নমুনা-সদৃশ মারাত্মক কাট? নাহ্। ওটা যেমন আছে, থাকবে। পেস? এটাও ঠিক নয়। ঘণ্টায় একশো চল্লিশ কিলোমিটারে বলগুলো ব্যাটসম্যানের দিকে যেমন আগুনে গতিতে ছুটে যায়, তেমনই যাবে।
‘ব্রহ্মাস্ত্রে’র নাম রিভার্স সুইং।
“দক্ষিণ আফ্রিকা আমি দু’বার গিয়েছি আগে। নতুন কিছু নয়,” বলে মোবাইলের কললিস্ট চেক করতে করতে পরেরটা এল, “কী বলছিলাম...ও হ্যাঁ।দেখুন, ওখানে বাউন্স আমি পাবই। দেশে যে রকম উইকেট পাই, তার চেয়ে ওখানে অনেক আলাদা হবে। তবে আমার রিভার্স সুইং যদি ঠিকঠাক পড়ে, যদি লাইন লেংথটা ঠিক রাখতে পারি, আমাকে আটকানোও কিন্তু খুব সহজ হবে না।”
প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের নতুন ফ্ল্যাটের তলায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলার সময় যে মহম্মদ শামিকে পাওয়া গেল, তাঁকে দেখলে মনে হবে না আদৌ তাঁর সামনে কোনও দক্ষিণ আফ্রিকা সফর অপেক্ষা করছে বলে। এতটাই নির্বিকার! এতটাই তাপ-উত্তাপহীন! কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, এটা শুধুমাত্র ভারতীয় পেসারের বহিরঙ্গ। যেখানে আসন্ন সফরের নিভৃত প্রস্তুতির কোনও ইঙ্গিত নেই। দেখলে কে বলবে, এই একই লোকের মস্তিষ্কে নিরন্তর ঘুরছে প্রোটিয়া ব্যাটিংয়ের দু’টো নাম, সময় পেলেই ওই দু’জনের ব্যাটিং-ভিডিও নিয়ে বসে পড়ছেন বঙ্গ পেসার। |
ক্রিকেটের ফাঁকে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে দৌড়ঝাঁপও চলছে। শুক্রবার শামি। ছবি: উৎপল সরকার। |
ওঁরা হাসিম আমলা আর জাক কালিস। শামির কথাবার্তার নির্যাসে তাঁর আসন্ন সফরের দুই সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী। “প্র্যাকটিসের সময় তো আর বিশেষ নেই এখন। বল নিয়ে যা করছি ম্যাচেই। আর ওদের নিয়ে আলাদা প্রস্তুতি বলতে কালিস, আমলার ব্যাটিং ভিডিও নিয়ে বসা। নিজেকে তো তৈরি রাখতে হবে,” বলছিলেন শামি। যিনি মোরাদাবাদ থেকে কলকাতায় এসেছেন মোটে এক দিনের জন্য, এসেছেন নিজের আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত ব্যাপারস্যাপার মেটাতে এবং শনিবারই আবার চলে যাচ্ছেন মোরাদাবাদে নিজের গ্রামে। “সময় তো বিশেষ পাচ্ছি না এখন। সবই করতে হচ্ছে এই অল্প সময়ে।” ফলে নতুন গাড়ির অর্ডারও দিয়ে ফেলতে হল এ সবের মধ্যেই।
তবে অল্প সময়েও শামি শুনেছেন তাঁকে নিয়ে জাহির খানের শংসাপত্র। জানেন, তাঁকে নিয়ে বারবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অকুণ্ঠ প্রশংসার কথাও। যা নিয়ে কথাবার্তা উঠলে মুখচোখ আজও অতীতের মতোই লাজুক, শিশুসুলভ দেখায়। “এত বড় বড় ক্রিকেটার যখন বলছেন আমাকে নিয়ে, তখন নিশ্চয়ই ভাল কিছু দেখেছেন। আমাকে শুধু এই ফর্মটা রাখতে হবে। সম্মান দিতে হবে ওঁদের প্রশংসার।”
যিনি ইডেনে স্বপ্নের অভিষেক ঘটানোর পর এখনও মনে করেন, কৃতিত্ব তাঁর না যত বেশি, তার চেয়ে বেশি ‘আল্লাহ্’-র। “আল্লাহ্ এখন আমাকে সব কিছু দিচ্ছেন। মেরে হাথ মে তো কুছ নহি হ্যায়। যে জায়গা থেকে উঠে এসেছি আমি, এত কিছু এত তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব, ভাবিনি। আমাকে এখন মেহনত করে সেটার মর্যাদা দিতে হবে। ভারত কোনও দিন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সিরিজ জিতে ফেরেনি। চেষ্টা করতে হবে এ বার জিতে ফিরতে। বাকিটা আল্লাহ্-র উপর ছাড়া থাকল।”
আর স্টেইন বনাম মহম্মদ শামি? ওই যুদ্ধটার কী হবে? “উল্টো দিকে কোন পেসার বল করছে, তার সঙ্গে কী ভাবে পাল্লা দিতে হবে, সে সব ভেবে কোনও দিন ক্রিকেট খেলিনি। আশা করি, কোনও দিন খেলতে হবেও না। কোনও সন্দেহ নেই স্টেইন, মর্কেল এরা মারাত্মক বোলার। কিন্তু এটাও ঠিক যদি রিভার্স ঠিকঠাক পাই আর একশো চল্লিশে যদি সেগুলো পড়ে, তা হলে পড়বে আর...।”
আর?
মুচকি হেসে উত্তর আসে, “খতম!” |