“ড্রেসিংরুমে কম্পিউটার কেন?”
প্রশ্নটা ছিল সচিন তেন্ডুলকরের।
যাঁর ব্যাটিংয়ের সামান্যতম দুর্বলতা খুঁজে বার করতে মরিয়া বিপক্ষ দলের কাছে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হয়ে উঠেছিল যে যন্ত্র, সেটাই বছর বারো আগে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে দেখে কিছুটা অস্বস্তি হয়েছিল কিংবদন্তি ক্রিকেটারের। “দেশের হয়ে তখন আমার বারো-তেরো বছর খেলা হয়ে গিয়েছে। মরসুমটা ২০০২-’০৩। তখনই ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমে প্রথম কম্পিউটার আনা হয়। আমাদের বলা হয়েছিল কম্পিউটারে সমস্ত তথ্য জমা করা যায়। আর চাইলেই যে কোনও তথ্য পাওয়া সম্ভব,” মুম্বইয়ে এ দিন এক বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানে স্মৃতির অতলে ডুব মাস্টার-ব্লাস্টারের।
পরে অবশ্য যন্ত্রের ‘গুণে’ই নাকি অস্বস্তি কাটাতে সময় লাগেনি সচিনের। নিজেই বলছেন, “কম্পিউটার আমার জন্য ব্যাট করবে না, জাহির খান বা হরভজন সিংহের জন্য বল করে দেবে না। কিন্তু দেখলাম, যে তথ্য জমা করে রাখা হচ্ছে সেটা কয়েক মুহূর্তেই পাওয়া যায়। ধরা যাক, নিরানব্বই কিংবা দু’হাজার সাতে অস্ট্রেলিয়ায় কী ভাবে ব্যাট করেছিলাম দেখতে চাইলে সেটা পাঁচ সেকেন্ডেই হাজির। আমার সব স্ট্রেট ড্রাইভ। অফ স্টাম্পের বাইরে ছাড়া বল। এ সবও। তার পরই ড্রেসিংরুমে কম্পিউটারকে মেনে নিয়েছিলাম।”
শুধু নিজের ক্ষেত্রেই নয়, প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে স্ট্র্যাটেজি তৈরিতেও সেই যন্ত্রই পরে হয়ে ওঠে সচিনদেরও অন্যতম ভরসা। কিংবদন্তি ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব বলে দেন, “এর পর ছবিটা আরও বদলাতে শুরু করে। প্রতিপক্ষের শক্তি কী, দুর্বলতাই বা কোথায়, সেটা বুঝতে আর তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পনায় অনেক সাহায্য করেছে কম্পিউটার। সময় যত গড়ায় এ সব ব্যাপারের সঙ্গে তত মানিয়ে নিতে শিখেছি আমরা। জীবনেরই অন্যতম অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায় এগুলো।”
|
এখন শিক্ষক। মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে সচিন। ছবি: পিটিআই। |
অনুষ্ঠানে বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলতে গিয়ে ক্রিকেটের প্রসঙ্গও ওঠে। সচিন বাচ্চাদের উদ্দেশে বলেন, “নিজেকে নিয়ে সৎ থাকবে। নিজের জীবন নিয়ে সিরিয়াস হওয়াটা জরুরি। হ্যাঁ, তার পাশাপাশি অবশ্য আনন্দও করবে। আমি বহু বছর ক্রিকেট খেলেছি। আবার প্রচুর মজাও করেছি। জীবনে যা করতে চেয়েছি সেটা করতে পারাটা দারুণ উপভোগ করেছি। আর সেটায় যে তৃপ্তি পাওয়া যায় তার সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা চলে না।”
সচিনের নিজের দুই ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা? অর্জুন-সারার বাবা বলেন, “আমি অর্জুন আর সারা-কে সব সময় বলি, জীবনে যা হতে চাও সেটাই হও। আমাদের পুরো সমর্থন থাকবে। আমার মেয়ে ডাক্তার হতে চায়। ওর মায়ের পথে চলার ইচ্ছা দেখানোয় আমি খুব খুশি। আর আমার ছেলের তো ধ্যানজ্ঞান ক্রিকেট। ওর বাবার মতোই।”
দেশের প্রথম ক্রীড়াবিদ ‘ভারতরত্ন’ নিজের স্বপ্নপূরণের যাত্রাপথ কতটা কঠিন ছিল সেই অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নেন। বলেন, “সঠিক পথে চললে তাঁকে কেউ আটকাতে পারে না। নিজের উপর বিশ্বাসটা চাই। জীবনে যাই হতে চাও না কেন সফরটা সব সময় একই রকম থাকে না। খারাপ সময় আসতে পারে। তখন নিজেকে এ ভাবে তৈরি করতে হবে যে, যতই বাধা আসুক, সঠিক পথ থেকে যেন না সরে আসতে হয়। রেড সিগন্যালে কেউ অনন্তকাল দাঁড়িয়ে থাকে না। সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয়। হাল ছেড়ে দিতে নেই।”
তাঁর জীবনের পরিকল্পনা কী ছিল প্রশ্ন উঠলে সচিন বলেন, “জীবনে বড় পরিকল্পনা করাটা জরুরি। আমি এটা বলব না, যখন আমার দশ-এগারো বছর বয়স, তখনই বুঝতে পেরেছিলাম পরের তিরিশ বছরে কী হবে। তবে আমারও একটা পরিকল্পনা ছিল।” আর সেটা কী? “নিজের উপর বিশ্বাস। লক্ষ্যে স্থির থাকা আর সব সময় নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করা,” বলে দেন তেন্ডুলকর। |