দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টিম ইন্ডিয়ার অতীত রেকর্ড দেখলে ভারতীয় সমর্থকদের রাতের ঘুম উড়তে পারে। টেস্ট সিরিজ জয় দূরে থাক, আজ পর্যন্ত সবচেয়ে ভাল ফল ২০১০ সিরিজের ১-১ ড্র। কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনি সে সব আতঙ্কের রেকর্ডকে পাত্তা দিলে তো!
ভারত অধিনায়ক বলে দিচ্ছেন, তাঁর বর্তমান ভারত অতীতের সব ইতিহাস মুছে নতুন ইতিহাস লিখবে। ভারত অধিনায়ক ইঙ্গিত দিচ্ছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা যদি ভারতীয়দের জন্য আসন্ন সিরিজে আগুন বরাদ্দ রাখে, তা হলে তাঁর টিমও পাল্টা জবাব আগুন দিয়েই দেবে। আর সবই মহেন্দ্র সিংহ ধোনি করে রাখলেন দক্ষিণ আফ্রিকা উড়ে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে।
গত সিকি শতাব্দীতে এই প্রথম টিম ইন্ডিয়া কোনও টেস্ট সিরিজ খেলতে নামছে, অথচ সচিন তেন্ডুলকর নেই। তিন ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজের পর আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে টেস্ট সিরিজ। “আমাদের টিমে যারা আছে তাদের টেস্টের অভিজ্ঞতা বিশেষ না থাকতে পারে, কিন্তু ওয়ান ডে-র আছে। এই সফরটা তাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ। টিমের ক্রিকেটারদের কাছে একই সঙ্গে একটা লার্নিং কার্ভ। বিদেশে গেলে সেখানকার উইকেটের বাউন্স, কোন লেংথে বল করা উচিত, সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়,” বলছেন ধোনি। সঙ্গে আরও যোগ করছেন, “এক দিক থেকে ভাল যে, আমরা ওয়ান ডে দিয়ে শুরু করছি। তাতে ব্যাটসম্যানরা নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগটা পাবে টেস্টের আগে।” ধোনিকে আরও স্বস্তি দিচ্ছে শিখর ধবনের ফর্ম। সদ্যপ্রকাশিত আইসিসি ওয়ান ডে ব্যাটসম্যানদের র্য্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশে ঢুকে পড়েছেন ধবন। জীবনে প্রথম বার। আপাতত ন’নম্বরে আছেন তিনি। এক নম্বরে বিরাট কোহলি। |
“মাহি তোমাকে খুব মিস করব...আবার ২০১৪-তে দেখা হবে।” —সাক্ষী
|
ধোনির কথাবার্তা থেকে যা ইঙ্গিত, তাতে আসন্ন সফর নিয়ে চাপ নেই। বরং ভারত অধিনায়ক ফুরফুরে মেজাজেই আছেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে ঠাট্টা-ইয়ার্কিও করছেন। যা বোঝা গেল গৌতম গম্ভীর প্রসঙ্গে। ধোনিকে এ দিন জিজ্ঞেস করা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকায় আপনার টিমের তৃতীয় ওপেনার কে? সবাইকে অবাক করে দিয়ে ধোনি বলে দেন, “গৌতম গম্ভীর।” যিনি কি না ওয়ান ডে তো বটেই, ভারতের টেস্ট স্কোয়াডেও নেই। যাঁকে টেস্টে না নেওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক চলছে দেশের ক্রিকেটমহলে। ধোনি শুধু গম্ভীরের নাম উত্থাপন নয়, আরও বলে দেন যে শিখর ধবন আর মুরলী বিজয়কে বাদ দিলে তৃতীয় ওপেনার যদি কেউ থাকেন, তো সেটা গম্ভীর। তাঁর উত্তরে উপস্থিত মিডিয়াকে বিস্ফারিত হতে দেখে ধোনি বলেন, “আমি জানি গম্ভীর টিমে নেই। কিন্তু ও-ই আমাদের থার্ড ওপেনার। আর আমাকে যিনি প্রশ্নটা করেছেন, তিনি এক বারও জিজ্ঞেস করেননি গম্ভীর টিমের অংশ কি না?”
তবে ভারত অধিনায়কের এমন মন্তব্যের পর মিডিয়ার একাংশে বলাবলি চলছে, গম্ভীর তা হলে একেবারে বিস্মৃতির তালিকায় চলে যাননি। টেস্টে অন্তত তাঁর ফেরার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু গম্ভীরের ভাগ্য নিয়ে ধোঁয়াশা কিছুটা কাটলেও সচিন তেন্ডুলকরের জায়গায় আসন্ন সফরে কে নামতে চলেছেন, সেটা এখনও অনিশ্চয়তার গর্ভে। “চার নম্বরে কে নামবে সেটা এখনও ঠিক করিনি,” বলে ফের ধোনির রসিকতা, “সম্ভব হলে আমরা ব্যাটিং অর্ডার থেকে চার নম্বর স্লটটা তুলে দেব। এক, দুই, তিন, পাঁচ, ছয়... এ ভাবে বারো নম্বর পর্যন্ত চলবে!” পরে সিরিয়াস হয়ে ধোনি বলেন যে, স্লগ ওভার বোলিং নিয়ে বর্তমানে টেনশনের মেঘ থাকলেও আসন্ন সফরে সেটার উন্নতি ঘটবে। “শেষ কয়েকটা ম্যাচে আমরা ভাল বল করেছি। কিন্তু দেখতে হবে আরও ভাল কী ভাবে করা যায়।” সঙ্গে আরও বলেন, “ভিন্ন পরিবেশে পরিসংখ্যান তো আলাদা হবেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় ফাস্ট বোলারদের জন্য অনেক বেশি পেস আর বাউন্স থাকে। ইয়র্কারের সঙ্গে ওরা বাউন্সারও ব্যবহার করতে পারবে।”
এ ছাড়া আরও একটা প্রতিশ্রুতি আগাম দিয়ে রাখলেন ধোনি। জানিয়ে দিলেন একপেশে বা অসম লড়াই নয়, আসন্ন সিরিজে যুদ্ধটা সমানে-সমানেই হবে। “দুটো টিমের র্যাঙ্কিংই খুব ভাল জায়গায়। ওয়ান ডে ক্রিকেটে আমরা বিশ্বসেরা, টেস্টে ওরা। মনে হয় একটা উত্তেজক সিরিজ হতে চলেছে। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।” কিন্তু ইশান্ত শর্মা? তাঁর কী হবে?
ধোনির উত্তর, “ওটা সিক্রেট থাক না!”
|
যুদ্ধের নির্ঘণ্ট |
ওয়ান ডে
৫ ডিসেম্বর জো’বার্গ
৮ ডিসেম্বর ডারবান
১১ ডিসেম্বর সেঞ্চুরিয়ন
টেস্ট
১৮-২২ ডিসেম্বর জোহানেসবার্গ
২৬-৩০ ডিসেম্বর ডারবান |
|