|
|
|
|
|
বিশ্বকাপ ফুটবলের ঢাকে কাঠি আজ |
ব্রাজিলকে নিয়ে ‘ভয়’ পাচ্ছেন পেলে
নিজস্ব প্রতিবেদন
৫ ডিসেম্বর |
|
বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিলের ভাগ্যবিধাতা নন পেলে! ফুটবলসম্রাটের দেশে তেষট্টি বছর পর বসতে চলা বিশ্বকাপের ‘ড্র’ অনুষ্ঠানের চব্বিশ ঘণ্টা আগে অন্তত এমনটাই অবিশ্বাস্য ছবি। নিজের দেশে বিশ্বকাপ ফুটবলের ড্র-য়ে পেলে-ই অংশ নেবেন না!
চার বার বিশ্বকাপ খেলে তিন বার ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন করা পেলে ভয় পাচ্ছেন, তাঁর হাতে তোলা চিরকুটে না ব্রাজিল ২০১৪ বিশ্বকাপে গ্রুপ অব ডেথ-এ পড়ে যায়! বলেই ফেলেছেন, “আমি দর্শকাসনে থাকব। আর সেটা একান্তই আমার নিজের সিদ্ধান্ত। আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট দিলমা পর্যন্ত আমাকে অনুরোধ করেছিলেন, ড্র-এ যখন ব্রাজিলের নাম তোলার সময় আসবে তখন যেন আমি গামলা থেকে সেই চিরকুটটা তুলি। যে কাজ অতীতে অনেক বিশ্বকাপের ড্র-এ আমি করেছি। কিন্তু এ বার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করাটাই আমার পক্ষে ঠিক কাজ হবে বলে ভাবলাম। কারণ, নিজের দেশে বিশ্বকাপে ব্রাজিল আমার হাতে কঠিন গ্রুপে পড়ে গেলে সেটা আমার কাছে খুব অস্বস্তিকর একটা ব্যাপার হবে।” |
|
বিশ্বকাপ ড্র-এর অনুষ্ঠানের আগে কার্লোস আলবার্তো-রোনাল্ডোরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: এএফপি। |
বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি অর্জন করলেও পেলের কিন্তু ব্রাজিলেই সেই দেশের জাতীয় দলের পক্ষে ‘অপয়া’ বলে বদনাম আছে। সাম্প্রতিককালে যে ক’টা বিশ্বকাপের আগে পেলে ব্রাজিলকে ফেভারিট বেছেছেন, তাঁর দেশ টুর্নামেন্টে মুখ থুবড়ে পড়েছে। যদিও এ দিন সেই প্রসঙ্গে পেলের কটাক্ষপূর্ণ জবাব, “আমি পাঁচটা বিশ্ব খেতাব জিতেছি। তিনটে ব্রাজিলের জাতীয় দলের হয়ে। দু’টো সান্তোসের হয়ে। খেলোয়াড়জীবনে এক হাজারের বেশি গোল করেছি। হ্যাঁ, আপনারাই ঠিক। আমি ব্রাজিলের কাছে অপয়া!”
ফিফা এবং ২০১৪ বিশ্বকাপ সংগঠনের শীর্ষকর্তারা অবশ্য এখনও দাবি করছেন, শুক্রবার দুপুরে (ভারতীয় সময় রাত সাড়ে দশটা) উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলের বাহিয়া প্রদেশের এক রিসর্টে জমকালো ড্র অনুষ্ঠানে পেলে-ই হবেন অন্যতম ‘চমক ফ্যাক্টর’। পেলে নিজে কী বলছেন? “আমি অনুষ্ঠানে থাকব। ঈশ্বর চাইলে সাক্ষাৎকার দেব। বিশিষ্ট বিদেশি অতিথিদের সঙ্গ দেব। প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি হয়ে যা-যা করার করব। কিন্তু ড্র-এ অংশ নেওয়া নেই!”
নিজের দেশের বিশ্বকাপে পেলের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে যখন ফুটবলমহলে জোর জল্পনা, তখন ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রীর চিন্তায় টুর্নামেন্টের সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে। মাস ছয়েক আগেই ব্রাজিলে কনফেডারেশনস্ কাপ চলাকালীন হাজার হাজার মানুষের যে প্রতিবাদ মিছিল, ধর্না, সময় বিশেষে হিংসাত্মক ঘটনা প্রায় প্রতি ম্যাচের আগে হয়েছিল তার পর আগামী জুন-জুলাইয়ে বিশ্বকাপের তিরিশ দিন সে দেশের পরিস্থিতি কী চেহারা নেবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। ব্রাজিলের বর্তমান প্রবল অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় দেশের এক ডজন ফুটবল স্টেডিয়ামের আধুনিকরণের পিছনে সরকারের তিন কোটি ডলার ব্যয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর ক্ষোভের আগুন এখনও নেভেনি। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বিশ্বকাপের সময় আবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠতে পারে। তার উপর ইউরোপীয় ফুটবলগুন্ডাদের দাপাদাপি তো লেগে থাকবেই। ইদানীং বিশ্বকাপ এলেই যা প্রশাসনের কাছে একটা বাড়তি মাথাব্যথা।
এই সব ভেবেই হয়তো ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রী রেবেলো বিশ্বকাপ ড্র-এর আগের দিনই শুনিয়ে রাখলেন প্রশাসনিক ভাবনার কথা। “দেশের প্রতিটা বিমানবন্দর, রেল আর বাস স্টেশন নিরাপত্তার চাদরে মোড়া থাকবে বিশ্বকাপের আগাগোড়া। হিংসাত্মক ঘটনা থামাতে পুলিশ প্রয়োজনে রাবার বুলেট ছুড়বে। তাতে হয়তো আহতের সংখ্যা বাড়বে। কিন্তু শুধু জলকামানে কি দাঙ্গা থামানো সম্ভব?” এ দিন বলে দিয়েছেন তিনি।
ফুটবলজ্বরের তাপমাত্রা অবশ্য আপন নিয়মে বেড়ে চলেছে। ড্র-এর আগের দিনই শুরু হয়ে গেল, এ বারের বিশ্বকাপের ফেভারিট বাছা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো হাইপ্রোফাইল তারকার তিন বাজির মধ্যে নিজের দেশ নেই। পর্তুগাল অধিনায়ক বলেছেন, “স্পেন, ব্রাজিল আর জার্মানি ফেভারিট। ড্র-এ এই তিন দেশের কারও সঙ্গে এক গ্রুপে পর্তুগালের পড়ে যাওয়াটা মোটেই ভাল ব্যাপার হবে না আমাদের কাছে। এখন দেখা যাক, কাল কী হয়! তবে আমরাও আত্মবিশ্বাসী। আশা করি ব্রাজিলে আমাদের লক্ষ্যপূরণ করতে পারব। সঙ্গে অবশ্য এটাও আশা রাখছি, ওই তিন সত্যিকারের শক্তিশালী টিমের কারও সঙ্গে একই গ্রুপে পড়বে না পর্তুগাল।”
|
যে ভাবে হবে ড্র |
প্রথম পাত্র
আট বাছাই দল। অক্টোবর ২০১৩-র ফিফা র্যাঙ্কিং অনুযায়ী বাছাই। ব্রাজিল ছাড়া বাকি সাত দেশ স্পেন, জার্মানি, আর্জেন্তিনা, কলম্বিয়া, উরুগুয়ে, সুইৎজারল্যান্ড এবং বেলজিয়াম। এই আট দেশই গ্রুপ ‘এ’ থেকে ‘এইচ’-এর শীর্ষ বাছাই।
দ্বিতীয় পাত্র
আছে আফ্রিকার পাঁচ এবং লাতিন আমেরিকার দুই অবাছাই দল। এরা আইভরি কোস্ট, ঘানা, আলজিরিয়া, নাইজিরিয়া, ক্যামেরুন, চিলি এবং ইকুয়েডর।
তৃতীয় পাত্র
এশিয়া এবং কনকাকাফ (উত্তর আমেরিকা)-এর আট দেশ। জাপান, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, কোস্তারিকা, হন্ডুরাস।
চতুর্থ পাত্র
থাকবে ইউরোপের নয় দেশ। বসনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, গ্রিস, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, রাশিয়া, ফ্রান্স।
ড্র যে ভাবে হবে
প্রথমে চতুর্থ পাত্র থেকে একটি দেশকে তুলে রাখা হবে দ্বিতীয় পাত্রে। এ বার চার পাত্রেই রইল আটটি করে দেশ।
প্রথম পাত্র থেকে সবার প্রথমে তোলা হবে ব্রাজিলকে। ব্রাজিল যাবে গ্রুপ ‘এ’-তে। বাকি দলগুলিকে ফেলা হবে যথাক্রমে গ্রুপ ‘বি’ থেকে ‘এইচ’।
দ্বিতীয় পাত্র থেকে লটারির সময় দেখা হবে দুটো ব্যাপার। এক, তিনটে ইউরোপের দল যেন এক গ্রুপে না পড়ে। দুই, চিলি এবং ইকুয়েডর যেন কোনও ভাবেই লাতিন আমেরিকার চার বাছাই দল ব্রাজিল, আর্জেন্তিনা, কলম্বিয়া বা উরুগুয়ের সঙ্গে একই গ্রুপে না পড়ে। যদি লটারিতে উঠেও আসে তা হলে তাদের অন্য গ্রুপে পাঠানো হবে। ব্যাপারটা এ রকম যদি চতুর্থ পাত্র থেকে পর্তুগালকে তুলে এনে দ্বিতীয় পাত্রে রাখা হয় এবং লটারির সময় পর্তুগাল পড়ে স্পেন এবং আর একটি ইউরোপের দেশের সঙ্গে, তা হলে রোনাল্ডোর দেশকে সরানো হবে অন্য পাত্রে। এটাকেই বলা হচ্ছে ‘পট x’।
এ বার তৃতীয় পাত্রের পালা। এখান থেকে আটটা দলকে এক-একটা গ্রুপে ফেলা হবে।
চতুর্থ পাত্রেও একই ব্যাপার। মোদ্দা বিষয়, একই মহাদেশের দুটির বেশি দল যেন এক গ্রুপে না পড়ে যায়।
|
“আমি পাঁচটা বিশ্ব খেতাব জিতেছি।
তিনটে ব্রাজিলের জাতীয় দলের হয়ে।
দু’টো সান্তোসের হয়ে। আপনারাই ঠিক।
আমি ব্রাজিলের কাছে অপয়া।” |
|
|
|
|
পুরনো খবর: ব্রাজিল দেখবে ‘ব্রাজুকা’ |
|
|
|
|
|