|
|
|
|
|
আট কেন্দ্রের মধ্যে কলকাতাও |
|
বিশ্বকাপের দেশ থেকে কাপ উপহার ভারতকে
নিজস্ব প্রতিবেদন
৫ ডিসেম্বর |
|
পেলের দেশে শুক্রবারই ২০১৪ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান। সালভাদর দ্য বাহিয়া-এ। তার চব্বিশ ঘণ্টা আগে ব্রাজিলের সেই শহর থেকেই ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৪৮ নম্বর দেশ ভারতের কাছে এল ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসের বৃহত্তম খবর ২০১৭ ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে ভারত! টুর্নামেন্টের সময় পরে ঘোষণা হবে।
আয়োজক দেশ হিসাবে যে টুর্নামেন্টে সরাসরি খেলার যোগ্যতা এ দিনই পেয়ে গেল ভারত। যার মানে এই প্রথম ফুটবলের যে কোনও পর্যায়ের বিশ্বকাপের মূলপর্বে দেখা যাবে ভারতীয়দের।
বরাবর ‘প্রচুর প্রতিভা থাকা’ ভারতীয় ফুটবল বিশ্বমঞ্চে কখনও নিজের স্পষ্ট উপস্থিতি দেখাতে পারেনি। বেশ কয়েক বার পট পরিবর্তনের সুযোগ এলেও সেটার সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি এ দেশের ফুটবলসমাজের নানা সমস্যায় পরিকাঠামো থেকে পেশাদারিত্ব। ১৯৫১-এ প্রথম এশিয়ান গেমস কিংবা বাষট্টিতে ফুটবলে সোনা জয়। চুয়াত্তরে এশীয় যুব চ্যাম্পিয়ন। বিরাশি-চুরাশিতে প্রথম দু’টো নেহরু কাপে বিশ্বের বেশ কয়েকটা কুলীন ফুটবল দেশের কার্যত জাতীয় দল নিয়ে খেলতে আসা কোনও ঝটকাতেই ভারতীয় ফুটবলের ঘুম ভাঙেনি। আধাপেশাদার আই লিগ-ও চলে রীতিমতো খুঁড়িয়ে। এহেন বাতাবরণে দেশের ফুটবল ইতিহাসে ফিফার কোনও পর্যায়ের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট সংগঠনের দায়িত্ব পাওয়া শুধু ভারতীয় ফুটবলের কাছে ঐতিহাসিক ঘটনা নয়, এ দেশের ফুটবলেই বৃহত্তম ঘটনা হয়ে গেল এ দিন থেকে। এর আগে ভারতের মাটিতে সবচেয়ে বড় ফুটবল টুর্নামেন্ট বলতে হয়েছে ২০০৬-এ এএফসি যুব চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০০৮-এ এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ। |
|
ফিফার সদর দফতরে বৈঠকে প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটারের সঙ্গে ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল।
সঙ্গে রয়েছেন ফিফার মহাসচিব জেরোম ভালকেও (একদম ডানদিকে)। ছবি: এআইএফএফ। |
ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের জন্ম ১৯৮৫-তে। ভারতে হবে টুর্নামেন্টের ১৭তম সংস্করণ। প্রতি দু’বছর অন্তর হয় ভবিষ্যতের বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকাদের অন্বেষণের এই বিশ্বকাপ। তাৎপর্যের হল, উদ্বোধনী টুর্নামেন্ট যেমন হয়েছিল এশিয়ার মাটিতে (চিন), তেমনই প্রথম (১৯৮৫) আর শেষ বারের (২০১৩) চ্যাম্পিয়ন একই দেশনাইজিরিয়া। সবচেয়ে বেশি তিন বার করে ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ জিতেছে ব্রাজিল আর নাইজিরিয়া। এশিয়ায় ভারতের আগে এই বিশ্বকাপ আয়োজনের কৃতিত্ব আছে চিন ছাড়াও জাপান আর আরব আমিরশাহির। আরবে এ বছরই হয়েছে টুর্নামেন্ট। মেক্সিকোকে ফাইনালে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় নাইজিরিয়া। আর্জেন্তিনাকে হারিয়ে তৃতীয় স্থান পায় সুইডেন। পরের বার টুর্নামেন্ট ২০১৫-এ হবে চিলিতে।
২০১৭-এ আয়োজকের দায়িত্ব অর্জনে ভারতের কঠিন লড়াই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ার্ল্যান্ড, উজবেকিস্তানের সঙ্গে। তার উপর প্রথমে ফিফার নিয়ম মতো নিজের দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতিপত্র-সহ ‘বিড’ (দরপত্র) না করায় ভারতের দাবি কার্যত খারিজ হয়ে গিয়েছিল। একটাই আশার কথা ছিল যে, ফিফা প্রেসিডেন্ট সেপ ব্লাটার স্বয়ং ভারতে এসে ‘২০১৭ অনূর্ধ্ব বিশ্বকাপ এ দেশে হোক’, আশা প্রকাশ করে গিয়েছিলেন। ফলে এআইএফএফ দ্বিতীয় বার দরপত্র দেওয়ার সুযোগ পায় এবং এ বার ভারত সরকারের লিখিতপত্র সমেত। কত গ্যারান্টি অর্থ ফিফায় জমা দেবে ভারত সরকার। কতটা করছাড় দেওয়া হবে। স্পনসরশিপ এবং ব্রডকাস্টিং-স্বত্ব কী হবে। নিরাপত্তা, পরিবহন, হোটেল, ভিসা ভারত সরকারের লিখিত পত্রে থাকা এই সব কিছু বিচার করে অবশেষে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে টুর্নামেন্ট আয়োজনের দায়িত্ব দিল বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ফিফা। দিল্লি, মুম্বই, পুণে, গুয়াহাটি, মারগাও, কোচি, বেঙ্গালুরুর পাশাপাশি স্বভাবতই ভারতীয় ফুটবলের মক্কা কলকাতাতেও ২৪ দেশের অনূর্ধ্ব১৭ বিশ্বকাপের ম্যাচ হবে বলে এ দিনই জানা যাচ্ছে। তবে আট শহরেরই যাবতীয় পরিকাঠামো ফিফা পরিদর্শক দল দেখার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। যার মানে এআইএফএফের মতো এখন পরীক্ষা আইএফএ-রও।
|
সত্যিই, বিরাট
আনন্দের দিন।
এখান
থেকে আমাদের
কোচ,
ফুটবলার,
প্রশাসকেরা
অনেক
কিছু শিখবে।
চুনী গোস্বামী |
ভারতীয় ফুটবলে আজ ধামাকা হল।
যুব বিশ্বকাপ ফুটবলের জেরে এ দেশে
ক্রিকেটের
লগ্নির অনেকটাই ভবিষ্যতে
ফুটবলে
চলে আসতে পারে বলে মনে করি।
সুব্রত দত্ত
(ভাইস প্রেসিডেন্ট, এআইএফএফ) |
|
উৎফুল্ল ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল এ দিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ভারতীয় ফুটবলের ঐতিহাসিক ঘটনা। ভারতীয় ফুটবল অনেকটা এগিয়ে যাওয়ার রসদ পেল।” সচিব কুশল দাস দিল্লি থেকে ফোনে বললেন, “বিশ্ব ফুটবলের মূলস্রোতে ঢোকার পাসপোর্ট পেয়ে গেল ভারত। এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে।” ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত দত্ত বলছেন, “মিটিংয়ে প্রফুল্ল বলতেন, ভারতীয় ফুটবলে ধামাকা আনতে না পারলে চেয়ার ধরে রেখে লাভ নেই। সেই ধামাকাটাই আজ হল। ভারতে যুব বিশ্বকাপ ফুটবলের জেরে এ দেশে ক্রিকেটের লগ্নির অনেকটাই ভবিষ্যতে ফুটবলে চলে আসতে পারে বলে মনে করি। দেশের বাণিজ্যও অনেকটাই গতি পাবে। ” চুনী গোস্বামী বললেন, “সত্যিই, বিরাট আনন্দের দিন। আমাদের কোচ, ফুটবলার, প্রশাসকেরা অনেক কিছু শিখবে।”
২০ ডিসেম্বর ফেডারেশনের বিশেষ সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে। যেখানে পরিকাঠামো আর সংগঠন উন্নয়ন-ই প্রধান আলোচ্য বিষয়। সোজা কথা, ২০১৭-র অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ আয়োজনে ভারত দু’সপ্তাহ পরেই নেমে পড়ছে! |
|
|
|
|
|