আধার কার্ডের বিরোধিতায় এক আধারে তৃণমূল এবং সিপিএম! রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি পেতে গেলে আধার কার্ড লাগবে, এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বিধানসভায় সর্বসম্মতির ভিত্তিতে প্রস্তাব পাশ হল সোমবার। যেখানে মিলে গেল সরকার ও বিরোধীর সুর। এমনকী, সরকারি প্রস্তাবে বিরোধী দলনেতার সংশোধনীও মেনে নেওয়া হল।
বিধানসভার অধিবেশনেএ দিন পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আধার কার্ডের বিরোধিতা করে একটি প্রস্তাব আনেন। প্রস্তাবের মুখ্য বক্তব্য, ‘রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে (৯টি) ভর্তুকি পাওয়ার জন্য আধার কার্ড আবশ্যক জনস্বার্থ বিরোধী এই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছে সভা’। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিআইয়ের আনন্দময় মণ্ডল, আরএসপি-র ঈদ মহম্মদ, ফরওয়ার্ড ব্লকের বিশ্বনাথ কারক, এসইউসি-র তরুণ নস্কর ওই প্রস্তাব সমর্থন করেন। তাঁদের সকলেরই বক্তব্য, আধার কার্ড করানোর জন্য যে ২১টি তথ্য চাওয়া হচ্ছে, তাতে নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, “এ রাজ্যে ৭০-৮০ লাখ ভুয়ো রেশন কার্ড ধরা পড়েছে। আধার কার্ডও যে ভুয়ো হবে না, তার নিশ্চয়তা কী?”
সূর্যবাবুর বক্তব্য, আধার কার্ড কার্ড করানো আইনসিদ্ধ নয়। কারণ দেশের আইনে বায়োমেট্রিক কার্ড করার কথা বলা নেই। স্বতন্ত্র পরিচয় জানার জন্য আধার কার্ডে যে সব পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে, তার বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তিও নেই। কেন্দ্রের ৭টি মন্ত্রকের ২৫টি প্রকল্পের সুবিধা কারা পাবেন, তা আধার কার্ডের ভিত্তিতে ঠিক হবে। অথচ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীই সংসদে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, দেশের ২০% এবং রাজ্যের ১০% মানুষের আধার কার্ড হয়েছে। সুতরাং, ওই সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন খুব অল্প সংখ্যক মানুষ। তা ছাড়া, আধার কার্ডের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতে পারে। সূর্যবাবু বলেন, “ভাল হতো, যদি সর্বদল প্রস্তাব এনে কেন্দ্রের কাছে যেতে পারতাম। যা-ই হোক, আমরা সরকারি প্রস্তাব সমর্থন করছি। তবে সঙ্গে সংশোধনীও আনছি।” এ দিন সূর্যবাবু দু’টি সংশোধনী আনেন। তার মধ্যে একটি স্পিকার খারিজ করে দেন। অন্যটি অর্থাৎ ‘যে হেতু আধার কার্ড নিয়েই বহু প্রশ্ন, সংশয় ও বিতর্কের নিষ্পত্তি হয়নি’ এই বাক্যাংশ গ্রহণ করা হল বলে জানান পার্থবাবু। তিনি বলেন, “কেন্দ্র এক তরফা ভাবে গ্যাসের সিলিন্ডারের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ায় রাজ্যবাসী আহত। তার উপরে ভর্তুকি পাওয়ার জন্য আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিধানসভা সমবেত ভাবে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি করছে।” কংগ্রেস অধিবেশন বয়কট করায় আধার কার্ড নিয়ে পাশ হওয়া প্রস্তাবে মতামত জানায়নি।
|