সংশয় ছিলই, বাস্তবেও হল তাই। বিধাননগর এসিজেএম আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষের গোপন জবানবন্দি নেওয়া গেল না সোমবার। উল্টে এ দিন বিধাননগর এসিজেএম আদালত বসতেই ওই জবানবন্দি নেওয়ার উপরে স্থগিতাদেশ চাইলেন সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী শেখর চক্রবর্তী। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সোমবার কেন কুণালবাবুর জবাবনবন্দি নেওয়া গেল না, তাঁর আইনজীবীরা এ দিন সেই প্রশ্ন তোলেন। আগামী ৫ তারিখ দু’পক্ষের বক্তব্য শুনবেন বিধাননগর এসিজেএম আদালতের বিচারক।
সারদা-কাণ্ডেরই অন্য এক মামলায় কুণালবাবু এখন হাওড়া সিটি পুলিশের হেফাজতে। এ দিন তাঁকে বিধাননগরে হাজিরও করানো হয়নি। এসিজেএম অপূর্বকুমার ঘোষও এ দিন আদালতে আসেননি। তাঁর জায়গায় ছিলেন বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট স্বাতী মুখোপাধ্যায়। তাঁর এজলাসে এ দিন একটি রিপোর্ট জমা দেন দমদম সেন্ট্রাল জেলের ভারপ্রাপ্ত সুপার বিপ্লব দাস। তাতে বলা হয়, হাওড়া আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ মতো কুণালবাবুকে হাওড়া আদালতে পাঠানো হয়েছিল। ওই আদালত কুণালবাবুকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়ায় তাঁকে এ দিন বিধাননগর এসিজেএম আদালতে পাঠানো যাচ্ছে না।
কুণালবাবুর আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা, সমীর দাস ও পবিত্র বিশ্বাস অভিযোগ করেন, এতে আইনি ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করা হল। বিধাননগরের এসিজেএম আদালত গোপন জবানবন্দির দিন স্থির করেছিল। জবানবন্দি নেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে কুণালবাবুকে আলাদা রাখারও নির্দেশ দিয়েছিল। তবু কী করে আদালতের সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করা হল, এই প্রশ্ন তোলেন কুণালবাবুর আইনজীবীরা। তাঁদের অভিযোগ, জেল সুপারকে পাঠানো হাওড়া আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছিল, এটি কার্যকরী করতে হবে বিধাননগর আদালতের মাধ্যমেই। বাস্তবে তা না করেই সাংসদকে হাওড়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের কাছ থেকে এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। রাজ্য সরকার কেন কুণালবাবুর জবানবন্দি নেওয়ার উপরে স্থগিতাদেশ চাইছে? এই প্রশ্ন করা হলে অবশ্য সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী আদালতের বাইরে জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তি তদন্তকারী সংস্থা বা তদন্তকারী অফিসারের মাধ্যমেই গোপন জবানবন্দির আর্জি জানাতে পারেন। কুণালবাবু সরাসরি এই আর্জি জানিয়েছেন আইনজীবী মারফত। তাই তাঁরা এই জবানবন্দির উপরে স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছেন।
রাজ্য বিজেপি-র পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সরকার আসলে কুণাল ঘোষের গোপন জবানবন্দিকে ভয় পাচ্ছে। সে জন্যই তাঁর জবানবন্দি ঠেকানোর চেষ্টা হচ্ছে। এই বক্তব্য নিয়ে এ দিন রাজ্যপালেরও দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি। রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ-সহ বিজেপি-র ন’জন নেতা এ দিন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করে বলেন, রাজ্যের গোয়েন্দাদের দিয়ে সারদা-কাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব নয়। এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত প্রয়োজন।
|