নভেম্বরের মাঝামাঝি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রথম বার শিল্প সম্মেলনের মঞ্চে এসে শিল্পের জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন ও এক জানালা ব্যবস্থা চালু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার আরও এক ধাপ এগিয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন, প্রতিটি বড় শিল্প প্রকল্পের জন্য এ বার কর্পোরেট কায়দায় এক জন পদস্থ আধিকারিক নিয়োগ করা হবে। বেসরকারি ব্যাঙ্ক, বিমা বা মোবাইল পরিষেবা সংস্থার ‘রিলেশনশিপ ম্যানেজার’-এর ধাঁচে ওই আধিকারিকের কাজ হবে সংশ্লিষ্ট শিল্প সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে প্রকল্পের কাজে গতি আনা।
সোমবার নবান্নে শিল্প সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে শিল্প মহলের প্রতিনিধিদের সামনে এই রিলেশনশিপ ম্যানেজার নিয়োগের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রের খবর, নয়াচর, এসার, গ্রেট ইস্টার্ন এনার্জির মতো বড় প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হবে শিল্পোন্নয়ন নিগম বা শিল্প দফতরের এক এক জন পদস্থ আধিকারিককে। এই ধরনের প্রকল্প গড়ার পথে ছোটখাটো নানা সমস্যা দেখা দেয়। তার সমাধান করতে বিভিন্ন দফতরে ঘুরতে হয় সংস্থার প্রতিনিধিদের। অভিযোগ ওঠে হয়রানির। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, নির্দিষ্ট আধিকারিক থাকলে সংস্থার প্রতিনিধিরা তাঁর কাছেই যাবেন। তিনিই সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করবেন। এতে এক দিকে যেমন আমলাতান্ত্রিক জট কমবে, তেমনই গতি আসবে প্রকল্পে। এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলে স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহল। বৈঠকে উপস্থিত শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া বলেন, “প্রকল্পে গতি আনবে এই সিদ্ধান্ত।”
বস্তুত, পঞ্চায়েত ভোটের পরে শিল্পের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির নজরে পড়ার মতো পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। প্রথমে মুম্বইয়ে গিয়ে মুকেশ অম্বানী-সহ দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করে লগ্নি আহ্বান। তার পর শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি এবং বস্ত্রশিল্পের জন্য নীতি ঘোষণা। আর মুখ্যমন্ত্রিত্বের আড়াই বছরের মাথায় বণিকসভা সিআইআই-এর শিল্প সম্মেলন ‘বিজ্ ব্রিজ’-এ হাজির হওয়া। সিআইআই-এর সম্মেলনেই আরও এক বার শিল্প প্রকল্প গড়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা কাটানোর আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান শিল্প দফতরের এক জন যুগ্মসচিবের নেতৃত্বে টাস্ক ফোর্স গঠনের কথা। যে টাস্ক ফোর্সে জল, বিদ্যুৎ, অর্থ, পরিবেশ, ভূমি, সেচ, নগরোন্নয়ন ইত্যাদি দফতরের প্রতিনিধিরা থাকবেন। এ দিন প্রকল্পভিত্তিক যে আধিকারিক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে, তাঁরা টাস্ক ফোর্সের অধীনেই কাজ করবেন।
বড় শিল্পের সমস্যা মেটানোর উদ্যোগের পাশাপাশি এ দিনের বৈঠকে ছোট ও মাঝারি শিল্পের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ার প্রসঙ্গ ওঠে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী শিল্পপতিদের জানান, এ ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগে শিল্পতালুক গড়বে রাজ্য। এই সংক্রান্ত নীতি তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই তা চূড়ান্ত করার চেষ্টা চলছে।
পর্যটন নিয়েও এ দিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বানারহাটে ইকো-ট্যুরিজম-সহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের প্রকল্প গড়ার জন্য আগ্রহপত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তি ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বার হবে।
|