আগামী লোকসভা ভোটের পরে তৃতীয় শক্তিই সরকার গড়বে দিল্লিতে। এবং সেই সরকার গড়ার অন্যতম কারিগর হবে তৃণমূল। এই স্বপ্নকে সামনে রেখেই যখন লোকসভা ভোটের দিকে এগোচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব, তখন তাদের দিকে আরও বেশি নজর দেওয়ার দাবি উঠল পড়শি রাজ্য অসমের দলীয় নেতাদের কাছ থেকে।
তৃণমূলের এখন লক্ষ্য, লোকসভা নির্বাচনের আগে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে যথাসম্ভব সংগঠন গড়ে তোলা। সেই নীতি মেনেই আজ গুয়াহাটিতে কর্মী সম্মেলনে এসেছিলেন মুকুল রায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাঁদের কাছে পেয়েই অসমের তৃণমূল নেতারা শুনিয়ে দিয়েছেন নিজেদের অভিমানের কথা। তাঁদের ক্ষোভ, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও একটু নজর দিলে এত দিনে অসমে দলের সাংগঠনিক শক্তি বেশ কিছুটা এগিয়ে থাকতে পারত। মুকুলবাবুরাও আলোচনার পথেই অসমের প্রদেশ তৃণমূল নেতাদের ক্ষোভ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন, লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি অসম-সহ গোটা উত্তর-পূর্বকে সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন মমতা।
বস্তুত, আলোচনার মাধ্যমে আজ যে ভাবে অসমের নেতা-কর্মীদের মনোভাব বোঝা গিয়েছে, তাকে যথেষ্ট ইতিবাচক বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে যখন অন্যত্র সংগঠন বিস্তারের চেষ্টা চলছে, সেই সময়ে অসমের নেতাদের এই চাহিদা দলের কাজে সুবিধাই করবে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবু এ দিন বলেই গিয়েছেন, “লোকসভা ভোটে অসম, মণিপুর, অরুণাচল, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশে লড়াই করে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে তৃণমূল। আপনারা তৈরি থাকুন।” আর ডেরেক বার্তা দিয়েছেন, দিল্লিতে পরবর্তী সরকার গঠনে মমতা প্রধান কারিগর হবেন। ফলে, অসমকেও সেখানে ভূমিকা নিতে হবে।
অসমে তৃণমূলের অবস্থা গত লোকসভা ভোটের সময় থেকেই বিশেষ সুবিধার নয়। বিধানসভা নির্বাচনে ১০১টি আসনে প্রার্থী দিয়ে একটিতে জয় মিলেছিল। তার পর থেকে তৃণমূলের প্রদেশ কমিটিতে পরপর অদল-বদল ঘটেছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বঞ্চনার প্রতিবাদ জানিয়ে ইস্তফা দেন দলের উপ-সভাপতি রূপন নন্দী পুরকায়স্থ। আইটিএ প্রাগজ্যোতি প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চে অসমে দলের একমাত্র বিধায়ক তথা প্রদেশ তৃণমূল সভাপতি দীপেন পাঠকও আজ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি অভিমান ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা টাকা নয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাহায্য, আশীর্বাদ চাই। কেন্দ্রীয় নেতারা এ রাজ্যের জন্য আরও একটু সময় দিন। দিদি (মমতা) নিজে এখানে আসুন। অসমেও তা হলে পরিবর্তন আসবে।”
নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের কথা শুনে মুকুলবাবু বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, উত্তর-পূর্বকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলেই দলের তিন সাংসদ ও পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রীকে অসমে পাঠিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। বিভিন্ন সমস্যার কারণে তৃণমূল নেত্রীর পক্ষে অসমের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া হয়ে ওঠেনি। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে অসমের নেতাদের কাজ করতে তা-ই বলে কোনও অসুবিধা হবে না বলেই বার্তা দিয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। মুকুলবাবু বলেন, “১৯৯৮ সালে মরিয়ানিতে প্রথম বিধায়ক পেয়েছিল তৃণমূল। দলের তরফে মনোযোগের অভাবে সে জায়গাটা ধরে রাখতে পারিনি।” তাঁর যুক্তি, গত লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গ নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলেন মমতা। কিন্তু রেলমন্ত্রী থাকাকালীন বহু ট্রেন, ওয়াগন কারখানা অসমের জন্য বরাদ্দ করেছিলেন। নামনি অসমে অশান্তির সময় আশ্রয়প্রার্থীদের সযত্নে আশ্রয়ও দিয়েছেন। তাই অসমকে তৃণমূল নেত্রী কোনও গুরুত্ব দেননি, এমন কথা বলা পুরোপুরি ঠিক নয়।
উত্তর-পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক, সাংসদ কেডি সিংহ গত বিধানসভা ভোটের সময় দলের দায়িত্ব নিয়ে মাসখানেক অসম ছিলেন। তিনি বলেন, “গত বার আমাদের সাফল্য তেমন মেলেনি। দীপেন লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। দলনেত্রীর বার্তা নিয়েই এ বার আমরা অসমে এসেছি। অসমকেও এ বার সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে।” পশ্চিমবঙ্গের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বিধানসভায় একা দীপেন তৃণমূলের হয়ে লড়াই চালাচ্ছেন। বাংলায় তৃণমূলের লড়াই যখন শুরু হয়েছিল, তখন মমতাই একমাত্র সাংসদ ছিলেন। মমতা ম্যাজিক আসলে তাঁর জনদরদী নীতির ফসল।” বাংলার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কথায়, “অসমে তৃণমূলের এত জন কর্মীকে নিয়ে সভা করব, ভাবতেই পারিনি! দীপেনের দুঃখ বুঝেছি। আমরা সঙ্গে আছি। আপনারা এগিয়ে চলুন!”
|