ফের মৃত্যুফাঁদ ট্রামলাইনে। ক’দিন আগেই রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে বেহাল ট্রামলাইনে একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কোনওক্রমে বেঁচে যান আরোহী। বিষয়টি নিয়ে হইচইও হয়। কিন্তু এর রেশ মিটতে না মিটতেই সোমবার দেখা গেল, রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে লেক মলের সামনে ট্রাম লাইনের পাশে কংক্রিট করা একটি অংশই বিপজ্জনক ভাবে উঠে গিয়েছে। মোটর সাইকেল বা বাইকের চাকা ওই গর্তে পড়লে বিপদ প্রায় অবশ্যম্ভাবী। প্রথম দুর্ঘটনার পরে দ্রুত ট্র্যাক মেরামতির নির্দেশ দেন পরিবহণ-কর্তারা। কিন্তু মেরামতির কাজ কোথাও শুরু তো হয়ইনি, বরং বেহাল ট্র্যাক নিত্যসঙ্গী করেই ঘুরতে হচ্ছে যাত্রীদের।
ট্রামলাইন রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভালের জন্য রয়েছে ‘পার্মানেন্ট ওয়ে ডিপার্টমেন্ট’ (পিডব্লিউডি)। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, এই বিভাগে তিন জন ইঞ্জিনিয়ার, সাত জন ফোরম্যান ছাড়াও রয়েছেন ফিটার, রিভেটার-সহ মোট ২০০ জন। কিন্তু তবুও ট্রামলাইনগুলির এই হাল কেন? সংস্থার এক সূত্র থেকে মেলা খবরে জানা যায়, এর কারণ অর্থাভাব। লাইন রক্ষণাবেক্ষণের জিনিস কেনার টাকা নেই। বিভাগেরই এক কর্মী বলেন, “আগে বছরে প্রায় আড়াই টন সিমেন্ট আসত। বালি আর স্টোন চিপ্স আসত মাসে প্রায় ১০০ লরি ও চার লরি। এখন একদমই আসে না।” |
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানান, দু’টি সমান্তরাল লাইনের মাঝে সংযোগকারী লোহার ‘টাইরড’ মাঝে মাঝে ক্ষয়ে কেটে যায়। আগে লাইনের ক্ষয়ে যাওয়া অংশ মেরামতি ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য ফি বছর অন্তত তিন কোটি টাকা বরাদ্দ হত। বছর তিন হল তা হচ্ছে না। এ কথা সমর্থন করেন বছর দুই আগে অবসর নেওয়া রবীন্দ্রনাথ পাল। তিনি বলেন, “ক’দিন আগে রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের বেহাল লাইনের খোঁজ পেয়ে কর্তৃপক্ষ রুটটাই বন্ধ করে দিলেন! আগে এমন ভাবা যেত না। ট্র্যাকের ক্ষত মেরামতির কয়েক ঘণ্টায় ফের চালু হত পরিষেবা।” তিনি বলেন, কোন ট্র্যাকের অবস্থা বেহাল, আগে তা নিয়মিত যাচাই হত। মেরামতির জন্য রাতে ৮-৯টা দল শহরময় কাজ করত। এখন সে সব ইতিহাস।
ট্র্যাক মেরামতির জন্য আগে রাজাবাজার ডিপোর পিডব্লিউডি-তে ছিল ২টি পেল্লাই মিক্সার। ছিল ক্রেন, ট্রাক্টর, ট্রেলারও। বহুকাল হল সে সব নেই। পড়ে থেকে থেকে অচল হয়ে যাওয়ায় সেগুলি প্রায় কিলোদরে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই। বেহালা-জোকা মেট্রোর কাজের জন্য মোট ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্র্যাকের ৫ কিলোমিটার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ৩৭ কিলোমিটার করা হয়েছে কংক্রিটের। আগে জীর্ণ ‘টাইরড’ প্রতিস্থাপন করা হত। কিন্তু এখন হচ্ছে না। সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন বলেন, “এখন শহরের বেশিরভাগ ট্রামট্র্যাক কংক্রিটের হয়ে গিয়েছে। তাই আগের মত খোঁড়াখুঁড়ি করে নীচের জিনিস মেরামতি করা সম্ভব হচ্ছে না।” কত দিন বেহাল ট্রামলাইন সঙ্গী করে ঘুরবেন শহরবাসী? পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “ট্র্যাক মেরামতের জন্য টেন্ডার ডাকতে হয়। কিছু প্রথা আছে। দ্রুত এগনোর চেষ্টা করছি।” কিন্তু মেরামতির জন্য ট্রামের নিজস্ব বিভাগই তো হাত গুটিয়ে বসে! না হলে রাসবিহারি অ্যাভিনিউয়ের ট্রামলাইনে এত বড় গর্ত হবে কেন? মদনবাবুর উত্তর, “দেখছি, কেন এ হাল!”
|