২৫শে নভেম্বর রাত। গৌড় এক্সপ্রেস ছাড়ছে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে। সে ট্রেনে যাবেন সাংসদ-বিধায়ক থেকে শুরু করে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়ের মতো ভিআইপিও। ৯সি প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা হয়েছে এক ঘণ্টা আগে। ট্রেন ছাড়ার মিনিট চল্লিশ আগে খালি রেক দিয়ে দিলেও নির্দিষ্ট কামরা পর্যন্ত পৌঁছতেই গড়িয়ে গেল সময়। কারণ একটাই। হাতে প্রাণ নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে ওই প্ল্যাটফর্মে।
কেন? কাজ শেষের আগেই চালু হয়ে গিয়েছে এই প্ল্যাটফর্ম ৯সি। ঠিক করে আলো বসেনি সেখানে। কিছু কিছু অংশ রীতিমতো অন্ধকার। নীচে চার দিকে ছড়ানো ভাঙা লোহা-লক্করের টুকরো থেকে শুরু করে মাটির স্তূপ। এক পাশের অনেকটা এলাকা জুড়ে আবার বড় বড় গর্ত। হাঁটার জায়গা সাকুল্যে ৬-৭ ফুট। সব ঝুঁকি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে, রাতে অন্ধকারে গোটা প্ল্যাটফর্ম হেঁটে শেষ প্রান্তে বাতানুকূল কামরায় একে একে উঠলেন ভিআইপি-রা। সঙ্গে একই দুর্ভোগ পোয়ালেন বহু সাধারণ যাত্রীও।
সে দিন ভিআইপি-রা যদিও সব ঝক্কি সামলে দুর্ঘটনা এড়িয়েই উঠতে পেরেছিলেন ট্রেনে, তবে ইতিমধ্যেই সে প্ল্যাটফর্মে বেশ কিছু দুর্ঘটনার কথা জানা গিয়েছে। অভিযোগ, তাড়াহুড়ো করে ট্রেনে ওঠার সময়ে ৯সি-তে পড়ে গিয়ে জখমও হয়েছেন কয়েক জন যাত্রী। ফলে সেখান থেকে দূরপাল্লার কোনও ট্রেন ছাড়ার কথা ঘোষণা হলেই চিন্তায় পড়ছেন যাত্রীরা। ভাঙাচোরা মেঝের উপর দিয়ে ভারী ট্রলিব্যাগ টানতে গিয়ে তার চাকা ভাঙা, জিনিস উল্টোনোর চূড়ান্ত ঝক্কি যে সামলাতে হচ্ছে তাঁদেরই। কর্তৃপক্ষ তবুও নির্বিকার। এত কিছুর পরেও সেখানে ট্রেন দেওয়া থামেনি। |
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছে এই প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ। শিয়ালদহের ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মের লাগোয়া এই ৯সি। ৮ নম্বর থেকে সরাসরি যাওয়া যায় সেখানে। ফলে দু’টি প্ল্যাটফর্মে এক সঙ্গে ট্রেন দিলে ভিড়ের চাপে যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়ে। রেল কর্তাদের বক্তব্য, শিয়ালদহে প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা বাড়ানোর জন্যই নতুন এই প্ল্যাটফর্মটি তৈরি হচ্ছে। সেই কাজ এখন চলছে।
শেষ আগেই কেন চালু হল ৯সি?
গত তিন-চার বছরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ায় সময় মতো ট্রেন ছাড়া বা ঢোকানোর জন্য নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির সিদ্ধান্ত নেন রেলকর্তারা। ব্যস্ত সময়ে দূরপাল্লার পাশাপাশি লোকাল ট্রেনের সংখ্যাও অনেক বেড়ে গিয়েছে। ফলে খুব জরুরি অবস্থা হলে ওই প্ল্যাটফর্মটি এখনই কাজে লাগাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। আর এতেই হয়েছে বিপত্তি।
যাত্রীদের বক্তব্য, সময়মতো ট্রেন পেতে চান সকলেই। কিন্তু তার জন্য এত ঝুঁকি নিতে রাজি নন কেউই। অভিযোগ, ৯সি-তে মেঝে ছাড়া আর কিছুই তৈরি হয়নি।
অর্দ্ধসমাপ্ত প্ল্যাটফর্মে প্রাণ হাতে নিয়ে হাঁটাচলা করা অসম্ভব। যাত্রীদের এই বক্তব্যের উত্তরে শিয়ালদহের রেলের কর্তাদের আশ্বাস, আগামী দু’তিন মাসের মধ্যেই ৯সি-র সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “মাঝেমধ্যে কোনও প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা না পেলে তবেই ওই প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢোকানো হচ্ছে। তার সংখ্যাও খুব কম। এটা না করলে ট্রেনগুলিকে প্ল্যাটফর্মের বাইরে আটকে রাখতে হবে। সেটিও তো যাত্রীদের কাম্য নয়।”
|