আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস-এর সাময়িক স্বস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, শেয়ার বিক্রি না-হলে এই সংস্থায় নতুন করে টাকা ঢালতে নারাজ ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থা। আর এই শেয়ার নিলাম প্রক্রিয়াই আইনি সমস্যায় জড়িয়ে গিয়েছে। ফলে বেহাল সংস্থার দৈনন্দিন কাজকর্ম চালানো নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।
শনিবার রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের দফতরে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিল্পমন্ত্রী তথা হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস-এর চেয়ারম্যান পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “সংস্থা টিঁকিয়ে রাখতে শেয়ার বিক্রির প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করা জরুরি। আজ ব্যাঙ্কগুলিও এই মত জানিয়েছে।” সংস্থা চালাতে বড় অঙ্কের কার্যকরী মূলধন দরকার জানিয়ে পার্থবাবুর দাবি, রাজ্য সরকারের শেয়ার ইন্ডিয়ান অয়েলকে বিক্রি করলে এই সমস্যা মিটে যাবে। কারণ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে যে টাকা ঋণ হিসেবে পাওয়া যায়, তার অনেকটাই পুরনো ঋণের সুদ মেটাতে খরচ হয়ে যায়। ফলে সংস্থার দৈনন্দিন কাজকর্ম চালানোর খরচে টান পড়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কারখানা চালানো মানেই লোকসান। কিন্তু গত মঙ্গলবারই আদালত জানিয়ে দিয়েছে যে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ার বিক্রি করা যাবে না।
এ দিনের বৈঠকে পার্থবাবু ছাড়াও নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৃষ্ণ গুপ্ত ও শিল্পসচিব চঞ্চলমল বাচাওয়াত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন পেট্রোকেমের নবনিযুক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর উত্তম কুমার বসু। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বৈঠকে সংস্থার অপর প্রধান অংশীদার চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর উপস্থিতিও চেয়েছিলেন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তাদের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না।
পরিচালন পর্ষদের আগের বারের বৈঠক শেষে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ও সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু সংস্থার হাল ফেরাতে নতুন করে টাকা ঢালার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান তিনি। প্রসঙ্গত, আগে ৫০০ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব দিয়েছিলেন পূর্ণেন্দুবাবু। কিন্তু সেই টাকা ঢালার শর্ত হিসেবে সংস্থা পরিচালনায় কর্তৃত্ব চেয়েছিলেন। ফলে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
পেট্রোকেমের আর্থিক স্বাস্থ্য অনেক দিনই তথৈবচ। হিসাব নিরীক্ষকের মতে, গত আর্থিক বছরেই ক্ষতির অঙ্ক ছিল ১,১৪৮.৯০ কোটির উপরে। তার পরের পাঁচ মাসে তা আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বেড়েছে। আগের অর্থবর্ষেই সরকারি ভাবে মেনে নেওয়া হয়েছিল যে, ইতিমধ্যেই নিট সম্পদের অর্ধেক (৫০%) খেয়ে নিয়েছে লোকসান। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, খাতায়-কলমে সংস্থার শেয়ারের দাম (বুক ভ্যালু) এখন শূন্য। শেয়ার পিছু লোকসান ৬ টাকা।
আইন মোতাবেক এই পরিস্থিতির কথা জানাতে হয় বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন (বিআইএফআর)-কে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, গত শুক্রবার সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের পরিচালন পর্ষদ। |