হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের শেয়ার বিক্রি নিয়ে আরও ঘোরালো হল আইনি জট।
কলকাতা হাইকোর্টের বৃহস্পতিবারের নির্দেশ অনুযায়ী রাজ্য সরকার ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেট্রোকেমের বিতর্কিত ১৫.৫ কোটি শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না। ১৬ ডিসেম্বর মামলাটির ফের শুনানি হবে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় এ দিন জানিয়ে দেন, শেয়ার বিক্রি প্রয়োজনীয় না প্রয়োজনীয় নয়, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসেনি।
রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় ও রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের পক্ষে আইনজীবী প্রতাপ চট্টোপাধ্যায় এ দিন সংস্থার আর্থিক অবস্থার কথা বিশদে আদালতে বলেন। তাঁরা জানান, শেয়ার বিক্রি করতে না-পারলে পেট্রোকেমকে বাঁচানো সম্ভব নয়। কিন্তু শেয়ার বিক্রি নিয়ে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর আর্জি মেনে স্থিতাবস্থা বজায় রাখারই নির্দেশ দেয় আদালত।
বৃহস্পতিবার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর দাবি, বিতর্কিত শেয়ার বিক্রি নিয়ে আইনি সমস্যার কথা তারা আগেই বলেছিল। এই গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সংস্থার দুরবস্থায় তারা উদ্বিগ্ন। আদালতের রায়ে তাদেরই জয় হল কি না, সে প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্য, “জেতা-হারার প্রশ্ন নেই। সমাধানসূত্রে এখনও বেরোয়নি। আমরা চাই শরিকি সমস্যা বাইরে রেখে সংস্থা চালানো হোক। কারখানা চালানোর জন্য ৫০০ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব আগেই দেওয়া হয়েছিল। হলদিয়াকে ডোবাতে চাইনি আমরা। কিন্তু সে সময়ে রাজ্য সরকার আমাদের প্রস্তাব মানেনি।” শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
পেট্রোকেমে নিজেদের সাড়ে ৬৭ কোটি শেয়ারের মালিকানা বেচতে অক্টোবরেই নিলাম ডাকে রাজ্য। একমাত্র দর দিয়েছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ইন্ডিয়ান অয়েল। ১০ অক্টোবর তাদের দেওয়া সেই দর গ্রহণ করার কথা ঘোষণা করে রাজ্য জানিয়েছিল, আইওসি-র হাঁকা দরে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী যদি ওই শেয়ার কিনতে রাজি না-হয়, তা হলে রাজ্যের হাতে থাকা সাড়ে ৬৭ কোটি ইক্যুইটি শেয়ারের মালিক হবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটিই।
কিন্তু নিলামের আগে থেকেই চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর বক্তব্য ছিল, ওই সাড়ে ৬৭ কোটি শেয়ারের মধ্যে ১৫.৫ কোটির মালিকানা কার, তা নিয়ে এখনও মামলা ঝুলে রয়েছে। তাই ওই শেয়ার নিজের বলে নিলামে চড়াতে পারে না রাজ্য।
গত ১ নভেম্বর বিতর্কিত ১৫.৫ কোটি শেয়ার বিক্রিতে হাইকোর্টের আগে দেওয়া রায়ের উপর ২২ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট। ফের হাইকোর্টে মামলা ফেরতও পাঠায় শীর্ষ আদালত। সেই মতো রাজ্য সরকার যাতে পেট্রোকেমের শেয়ার বিক্রি করতে না-পারে, সে আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় শেয়ার বিক্রির ওপর স্থগিতাদেশও বহাল রাখেন। ওই স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানায় চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এ দিনের রায়।
|