ভ্যানামেই ফলাতে মমতার মুখাপেক্ষী চাষিরা
স্বাদে সমানে-সমানে। বাড়তি সুবিধা, চাষের খরচ কম। অন্য দিকে ফলনের হার আকাশচুম্বী। আবার মড়ক লেগে বিপর্যয়ের আশঙ্কা নগণ্য।
অতএব, আর্থিক মুনাফা ও ব্যবসার নিরাপত্তা দু’ক্ষেত্রেই ভিন দেশি ভ্যানামেই চিংড়ির সঙ্গে টক্করে বেশ ক’কদম পিছিয়ে পড়েছে দেশি বাগদা। মার্কিন প্রজাতির ওই চিংড়ি ফলিয়ে অন্ধ্র, তামিলনাড়ু, ওড়িশা বিপুল সাফল্য পেয়েছে। গত ক’বছর ধরে এই সব রাজ্য থেকে হাজার হাজার টন ভ্যানামেই বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তাদের দেখে পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যচাষিরাও আগ্রহী। কিন্তু ভ্যানামেই যে হেতু বিদেশি প্রজাতির, তাই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। সেই অনুমতি পেতে রাজ্য যাতে উদ্যোগী হয়, সে জন্য এ বার জোটবদ্ধ ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হতে চলেছেন রাজ্যের চিংড়ি উৎপাদক ও রফতানিকারীরা।
ভিয়েতনাম-তাইওয়ানের মতো দেশে ভ্যানামেই চিংড়ির চাষ অনেক দিন ধরে চালু। তবে পাঁচ বছর আগেও ভারতে তা নিষিদ্ধ ছিল, কেননা বিদেশি মাছ থেকে অজানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার ভয় থাকে। পরে কেন্দ্রীয় গবেষণাগার পরীক্ষা চালিয়ে সিদ্ধান্তে আসে, আশঙ্কার কারণ নেই। ২০০৮-এ প্রথম অন্ধ্রপ্রদেশকে ভ্যানামেই-মিন আমদানি ও বাণিজ্যিক উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়। পরে ছাড়পত্র পায় তামিলনাড়ু, গুজরাত ও ওড়িশা।
পশ্চিমবঙ্গে সামুদ্রিক খাদ্যপণ্য রফতানিকারী সংস্থাগুলির সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভ্যানামেই চাষ করে অন্ধ্র-ওড়িশা-তামিলনাড়ুর উৎপাদকেরা ব্যাপক লাভের মুখ দেখছেন। কারণ, এক হেক্টর জলাশয়ে যেখানে বাগদা হয় তিন-চার টন, সেখানে ভ্যানামেই উঠতে পারে দশ টন পর্যন্ত। উপরন্তু এর চারা বাড়ে তরতরিয়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, চাষের খরচ কম। ফলে ওই সব রাজ্যে চিংড়ি উৎপাদক অনেকে বাগদার চাষ কমিয়ে ভ্যানামেইয়ের দিকে ঝুঁকেছেন। ইউরোপ ও মার্কিন মুলুকে ভ্যানামেইয়ের তুঙ্গ চাহিদা। উপরন্তু ইদানীং ভিয়েতনাম-তাইওয়ান থেকে ভ্যানামেই জোগানে ভাটা পড়ায় ভারতীয় চাষিরা পুরো ফায়দা তুলছেন বলে রফতানিকারী মহলের দাবি।
এবং এ রাজ্যেও বিক্ষিপ্ত ভাবে বাগদা সরিয়ে ভ্যানামেই চাষ হচ্ছে। ভারতে চিংড়ি, বিশেষত বাগদা উৎপাদনের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম সারিতে, রফতানিতেও যথেষ্ট এগিয়ে। তা সত্ত্বেও পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছু ভেড়িতে ইদানীং ভ্যানামেই ফলিয়ে ভিন রাজ্য মারফত তা রফতানিও হচ্ছে। কিন্তু চিংড়ি কারবারি মহলের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় অনুমতি না-থাকায় কাজটা অবশ্যই বেআইনি। এমতাবস্থায় রাজ্য সরকার দিল্লির অনুমতি নিয়ে ভ্যানামেই চাষ আইনসিদ্ধ করে দিলে পরিকল্পিত ভাবে অনেক বেশি এলাকায় উৎপাদন সম্ভব হবে, পশ্চিমবঙ্গের মৎস্যচাষিরা বিস্তর উপকৃত হবেন। “এই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের আর্জি, অন্ধ্র-ওড়িশার মতো এ রাজ্যে ভ্যানামেই চিংড়ির উৎপাদন আইনসিদ্ধ করতে কেন্দ্রের অনুমতি জোগাড় করা হোক। ” বলেন রাজর্ষিবাবু।
রাজ্য সরকারের কী বক্তব্য?
রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের দাবি, এখানকার চিংড়ি-চাষিরা গোড়ায় ভ্যানামেইয়ে বিশেষ উৎসাহী ছিলেন না। অন্ধ্র-তামিলনাড়ুর কথা জানার পরে পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে, মৎস্য-আধিকারিকেরা পূর্ব মেদিনীপুর-সহ বিভিন্ন জেলার অনেককে ভ্যানামেই চাষে রাজি করিয়েছেন। “ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থা কোস্টাল অ্যাকোয়াকালচার অথরিটি থেকে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম ভ্যানামেই ফলানোর লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছে। নিগমের উদ্যোগে দিঘার কাছে আলমপুরে ভ্যানামেই চাষ করা হয়েছে।” বলেন মৎস্যমন্ত্রী। যদিও রাজর্ষিবাবুর যুক্তি, “নিগম লাইসেন্স পেয়েছে সরকারি সংস্থা হওয়ার সুবাদে। সারা রাজ্যে বাণিজ্যিক চাষের জন্য কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রকের অনুমতি প্রয়োজন।”
সেই ছাড়পত্র মিললে দুই মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনার আর্থ-সামাজিক চেহারাটাই বদলে যেতে পারে বলে মনে করছেন রাজর্ষিবাবু। রফতানি সংস্থা সূত্রের তথ্য: গত অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ভেড়িতে কমপক্ষে তিনশো টন ভ্যানামেই উৎপাদন হয়েছিল, যার প্রায় পুরোটাই ভিন অন্য রাজ্য হয়ে বিদেশে চালান হয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে রাজ্যে অন্তত এক-দেড় হাজার টন ভ্যানামেই ফলবে বলে সূত্রটির আশা। কেন্দ্রীয় সংস্থা ‘মেরিন প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’-র কলকাতা শাখার ডেপুটি ডিরেক্টর কে ভি প্রেমদেবের কথায়, “ভ্যানামেই চিংড়ির দৌলতেই সামুদ্রিক পণ্য রফতানির বহর গত দু’বছরে কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।”
সাগরপারের ব্যবসায় মুনাফার ফসল ঘরে তুলতে এ রাজ্য আপাতত নবান্নের উদ্যোগের ভরসায়।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.