বিধানসভায় বয়কট-অবস্থানে অনড় থাকলেও
রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে পথে নেমেও আন্দোলনে পিছু হটে এল রাজ্য কংগ্রেস।
আন্দোলনে কর্মীরা উৎসাহী। অথচ নেতৃত্বই পিছপা। বৃহস্পতিবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে নেতৃত্বের এমন নমনীয়তা দেখে বিক্ষুব্ধ কর্মীরাই প্রশ্ন করলেন, “আন্দোলন আর কবে হবে?” সরাসরিই জানিয়ে দিলেন, বক্তৃতা শুনতে তাঁরা আসেননি। এসেছেন আইন অমান্য করে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদ জানাতে। জবাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে আগামী দিনে আন্দোলনের নির্দেশ দিলেন। কর্মীদের বক্তব্য থেকে ঠেকে শিখে তিনি বলেন, “আর এ ভাবে মঞ্চ করে সভা নয়। কংগ্রেস দফতর থেকে সকলকে নিয়ে মিছিল করে রাজভবন অভিযান করা হবে।”
পথে নেমে আন্দোলন নিয়ে এমন ‘দ্বিধা’য় থাকলেও বিধানসভার আন্দোলনে কিন্তু অনড়ই কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিধানসভায় তাদের আলোচনা করতে দেওয়া হবে কি না, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে তা আজ, শুক্রবারের মধ্যে জানানোর সময়সীমা একপ্রকার বেঁধে দিল কংগ্রেস পরিষদীয় দল। আলোচনার সম্মতি না পেলে ৪-৬ ডিসেম্বর বিধানসভার ৭৫ বছর পূর্তির সমাপ্তি অনুষ্ঠানও যে তারা বয়কট করবে, বৃহস্পতিবার সেই ইঙ্গিতও স্পিকারকে দিয়েছে কংগ্রেস। তারা অনুষ্ঠান বয়কট করলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার-সহ অন্যান্য রাজ্যের অভ্যাগতদের সামনে শাসক দলকে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে বলে মনে করছে কংগ্রেস। সে জন্য বিধানসভায় নিজেদের দাবি আদায়ে শাসক দলকে অস্বস্তিতে ফেলার ‘চাপ’ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে তারা।
|
মিছিলে প্রদীপ ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুদীপ আচার্য। |
সমাপ্তি অনুষ্ঠান নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক শেষে এ দিন অবশ্য স্পিকার বলেন, “সবাই মিলে যাতে অনুষ্ঠানে থাকতে পারি, সেই অনুরোধই করেছি সব দলকে।” তবে কংগ্রেস সূত্রে খবর, এ দিনের বৈঠকে কংগ্রেস নিজেদের দাবি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানতে চাওয়ায় স্পিকার বলেন, ৯ ডিসেম্বর সভার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা হতে পারে। তার আগে সমাপ্তি অনুষ্ঠানে যেন কংগ্রেস যোগ দেয়। কিন্তু কংগ্রেস নেতা মহম্মদ সোহরাব তখন জানান, অনুষ্ঠানের আগে আজ কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকেই সিদ্ধান্ত জানাতে হবে। নচেৎ বয়কটেই অনড় থাকবেন তাঁরা।
সারদা-কাণ্ড, মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রানি রাসমণিতে আইন অমান্য কর্মসূচি ছিল এ দিন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে আইন অমান্য আন্দোলন অবস্থান বিক্ষোভের চেহারা নেয়। যাকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ কলকাতা জেলার সঙ্গে প্রকাশ্যেই প্রদেশ নেতৃত্বের বিরোধ বাধে। কলকাতার সমাবেশে আসা এত লোককে গ্রেফতার করার মতো যথেষ্ট সংখ্যক বাস আনা সম্ভব নয়, পুলিশের তরফে এ কথা জানানোর পরে আন্দোলনের পথ বদল করা হয় বলে প্রদীপবাবু জানান। আন্দোলনের অভিমুখ বদলানোয় দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী মালা রায় প্রশ্ন তোলেন, “কোথায় বাসের ব্যবস্থা থাকবে কি থাকবে না, তা শুনতে আসিনি। আন্দোলন আর কবে হবে?” পরিস্থিতি সামলাতে প্রদীপবাবু ঘোষণা করেন, “প্রচুর লোক এসেছেন। আইন অমান্য করে এত মানুষের পক্ষে গ্রেফতার বরণ করা সম্ভব নয়।” এত কর্মী থাকা সত্ত্বেও প্রদীপবাবুর এমন বক্তব্যে ক্ষোভ উগরে মালাদেবী বলেন, “জনমুখী আন্দোলন তৈরি করতে না পারলে যাঁরা কংগ্রেসে এখনও রয়েছেন, তাঁদেরও ধরে রাখা যাবে না।” মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এ দিনই আবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে আইন অমান্য করে কংগ্রেস।
ভাঙনে ছন্নছাড়া দলটাকে অক্সিজেন দিতে এ মূহূর্তে যে পথে নেমে আন্দোলনই একমাত্র উপায়, তা বোঝেন দলের নেতারাই। কিন্তু কর্মী থাকা সত্ত্বেও এ দিন আন্দোলন থেকে সরে আসার কী কারণ তার জোরালো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তাঁরা। প্রদীপবাবু বলর ব্যাখ্যা, “যাঁরা আজই আইন অমান্য করতে চাইছিলেন, তাঁদের উৎসাহই দিচ্ছি। কিন্তু এত লোক যে একসঙ্গে আসবেন, তার প্রস্তুতি আমাদের ছিল না।” কর্মীরা এলেন। অথচ নেতৃত্বই আন্দোলনে না গিয়ে নমনীয় থাকার বার্তা দিলেন। এতে কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতাই আরও প্রকট হচ্ছে বলে দলে গুঞ্জন।
হয়তো এমন নড়বড়ে কংগ্রেসের হাল দেখেই বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বাগদায় কংগ্রেস কর্মীদের
পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন! কংগ্রেস নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “কংগ্রেসকে মুছে ফেলতে চাইছে ওরা (তৃণমূল)। আপনাদের (কংগ্রেস কর্মীদের ) নেতারা যদি আপনাদের পাশে না থাকেন, তবে আমরা থাকব।” |