বাংলা সিপিএমকে মানসিক ভাবে চাঙ্গা করে তুলতে কেরলের পার্টিকে পরোক্ষে ভার দিয়েছেন প্রকাশ কারাট। দলের সাধারণ সম্পাদকের সেই বার্তা বাংলায় এসে পৌঁছনোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নড়েচড়ে বসেছে এখানকার সিপিএম। বস্তুত বৃহস্পতিবার থেকেই তৃণমূল-সরকারের বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর পথে নেমেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সারদা-কাণ্ড এবং বিরোধীদের উপর শাসক দলের সন্ত্রাসকেই মূলত তাঁরা হাতিয়ার করেছেন। আর জ্যোতি বসুর নামে নিউটাউনের নামকরণ নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংঘাতের বিষয়টি তো আছেই।
সারদা-কাণ্ডে সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষকে পুলিশ গ্রেফতারের পর থেকেই বামেরা তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সেই সুর আরও চড়ানোর সুযোগ এসে যায় এ দিন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট কার্যালয়ের সামনে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। বামেদের নেতৃত্বে ‘চিটফান্ড সাফারার্স ইউনাইটেড ফোরাম’-এর পক্ষ থেকে শ’দেড়েক মানুষ এ দিন বিকেলে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের সদর দফতরের সামনে জড়ো হন। আমানতকারী, অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টদের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারের সমালোচনা করায় কয়েক জন বিশিষ্ট জন এবং রাজনৈতিক নেতা পুলিশের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। এই ঘটনার পরেই ঘোষিত কর্মসূচির বাইরে গিয়ে সিপিএম নেতারা এ দিন সন্ধ্যা থেকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ‘গণতন্ত্রকে আক্রমণের’ অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ সভা করেছেন। |

বিক্ষোভকারীদের তোলা হচ্ছে পুলিশের ভ্যানে। রয়েছেন সুনন্দ সান্যালও। — নিজস্ব চিত্র। |
আজ, শুক্রবার কলকাতায় রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বামেদের অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিলই। সল্টলেকের ঘটনাকে সামনে রেখে সেই সমাবেশকে সফল করতে পুরোদস্তুর আসরে নেমেছে দল। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু মানুষের কাছে সমাবেশ সফল করার আবেদন জানান। এ দিনই বরাহনগরে দলীয় সভায় বেআইনি লগ্নি সংস্থার রমরমা, নারী নির্যাতন, সন্ত্রাসের জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ী করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও বলেন, “আড়াই বছর চুপ করে ছিলাম। এর পরেও চুপ করে থাকলে অন্যায় হবে। মানুষ ক্ষমা করবেন না।”
এ দিন সল্টলেকের ঘটনা বিমানবাবুদের মানুষের কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আজ, শুক্রবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি কলকাতার সমস্ত থানায় বিক্ষোভের ডাকও দিয়েছে সিপিএম। সন্ধ্যায় রাজ্যের সমস্ত জেলায় প্রতিবাদ মিছিল বার করার নির্দেশও দিয়েছেন বিমানবাবু। তাঁর কথায়, “এই ধরনের ঘটনায় নিন্দার ভাষা নেই। বাংলায় গণতন্ত্র আক্রান্ত। ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণের কাজে লিপ্ত বর্তমান তৃণমূল সরকার।” সল্টলেকের ঘটনা নিয়ে তাঁরা যে বড় আন্দোলনের পথে যাবেন, তা স্পষ্ট সিপিএম নেতা গৌতম দেবের কথাতেও। তিনি বলেন, “সল্টলেকে পুলিশ সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সুনন্দ সান্যালকে মেরেছে। কী করে সাহস পায় পুলিশ! সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা। যথেষ্ট হয়েছে! আর সহ্য করা হবে না।”
আন্দোলনের পাশাপাশি জ্যোতি বসুর নামে নিউটাউনের নামকরণ নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে তাঁরা যে আইনের পথেও যেতে পারেন, তার ইঙ্গিত এ দিন দেন গৌতমবাবু। বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র যে সব যুক্তি তুলে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, সে কথাই এ দিন বলে গৌতমবাবুও জানান, তাঁদের আমলে নিউটাউনের নাম পরিবর্তন আইনসিদ্ধ ছিল। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং সরকার এ কাজে বিরত থাকবেন বলে আশা করেন গৌতমবাবু। যদিও শাসক পক্ষের দাবি, বামেরা এই সংক্রান্ত বিলটি বিধানসভায় পাশ করানোর পরে রাজ্যপালকে পাঠালেও তিনি তাতে সই করেননি। ফলে সেটি আইনে পরিণত হয়নি। সুতরাং এ নিয়ে বামেদের হইচই অনর্থক বলে দাবি শাসক দলের নেতাদের। যদিও এ দিন সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাম নেতারা জানান, সরকার দাবি না মানলে তাঁরা আন্দোলন ও আইনি পথে যাবেন।
নিউটাউনের নামকরণ নিয়ে প্রতিবাদে বুধবার বামেরা বিধানসভা থেকে ওয়াক-আউট করে। ওই দিন বিরোধী দলনেতা যে ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, তাতে ক্ষুব্ধ শাসক দল। এ দিন বিরোধী দলনেতার আচরণ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনেন তৃণমূল বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত। তবে সংঘাতময় এই আবহাওয়ার মধ্যে বামেরা এ দিন বিধানসভায় অংশ নেন। দু’দিন ওয়াক-আউটের পরে এ দিন অংশ নেওয়ার প্রসঙ্গে সূর্যবাবু বলেন, “আমাদের প্রতিবাদ চলছে। প্রতিবাদের ধারা এক এক সময়ে এক এক রকম হয়।” |