|
|
|
|
কেরলকে দায়িত্ব, বাংলাকে বার্তা কারাটের |
সন্দীপন চক্রবর্তী • পালাক্কাড |
সম্মেলন হচ্ছে সুদূর দক্ষিণে! কিন্তু ভাবনায় থেকেই যাচ্ছে পুবের কথা!
লোকসভা ভোটের আর মাত্র ক’মাস। তার আগে সংগঠনের সমস্যা কাটিয়ে ভোটের প্রস্তুতি জোর কদমে শুরু করার লক্ষ্যেই প্লেনাম (বিশেষ সম্মেলন) ডেকেছে কেরল সিপিএম। দক্ষিণী রাজ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতি শোধরানোর সেই মঞ্চেও অনিবার্য ভাবে এসে পড়ল পশ্চিমবঙ্গের কথা। এনে ফেললেন স্বয়ং প্রকাশ কারাট। বাংলায় বামেদের যা অবস্থা, সেই বাস্তব পরিস্থিতি মাথায় রেখেই কেরলের সিপিএম-কে বাড়তি দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানালেন দলের সাধারণ সম্পাদক।
কোন কেরল? যে রাজ্য গোষ্ঠী-দ্বন্দে বিদীর্ণ! কাজিয়া এমন পর্যায়ে যে, বিহিত করার জন্য পলিটব্যুরোর ৬ সদস্যকে নিয়ে কমিশন গড়তে হয়েছে। সেই কেরল সিপিএমের দিকেই এখন তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে কারাটকে! কেন? কারণ, সিপিএমের আর এক দুর্গ পশ্চিমবঙ্গ প্রায় ধরাশায়ী! ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও ইঙ্গিত এখনও চোখে পড়ছে না! তাই লোকসভা ভোটের আগে দক্ষিণের এক দুর্গ-শহর থেকে দলের অতীতের দুর্গের কাণ্ডারীদের বার্তা দিতে হচ্ছে কারাটকে।
বাংলার লোকসভা আসন ৪২। কেরলে তার অর্ধেকও নয় ২০! তবু ‘ছোট’কেই এখন ‘বড়’র ভার কাঁধে তুলে নিতে বলতে হচ্ছে! |
|
পালাক্কাডে দলের বিশেষ সম্মেলনে পাশাপাশি পিনারাই বিজয়ন এবং ভি এস অচ্যুতানন্দন।—নিজস্ব চিত্র। |
তিন দিনের প্লেনামের সূচনায় বুধবার কারাট উল্লেখ করেছেন সন্ত্রাসের মুখে বাংলায় বামেদের কোণঠাসা হয়ে পড়ার কথা। উল্লেখ করেছেন পঞ্চায়েত এবং সদ্য অনুষ্ঠিত পুরভোটের কথা। যা শুনে এখানে উপস্থিত সিপিএমের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের অনেকেই মনে করছেন, কারাটের বার্তা আসলে বাংলায় দলের হতাশাজনক ছবি মাথায় রেখেই। বাংলায় যা পরিস্থিতি, সেখান থেকে লোকসভা ভোটে বেশি কিছু আশা না-করাই ভাল। তাই জাতীয় রাজনীতিতে বামেদের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে গেলে ঘাটতি পূরণের বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে কেরলকেই। এ দিন কেরলের প্রতি আর্জির আড়ালে কারাট আসলে বাংলাকেই বিঁধলেন এই ব্যাখ্যাই হচ্ছে সিপিএম মহলে।
পলিটব্যুরোর আধ ডজন সদস্য এবং কেরলের ৪০৮ জন প্রতিনিধির সামনে পালাক্কাডের টাউন হলে কারাট এ দিন বলেছেন, “বাংলা ছিল আমাদের আর এক শক্ত ঘাঁটি। সেখানে সিপিএম তথা বামেরা এখন গুরুতর আক্রমণের মুখে। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই হামলা চলছে। দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রাণ গিয়েছে। তৃণমূল বাহিনীর সৌজন্যে নিজেদের কর্মসূচি এবং ভোটে প্রচার করার মতো ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকারও সেখানে নিশ্চিত নয়!” তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “আক্রমণের মোকাবিলা করে বাংলার পার্টি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আবার গড়ে তুলতে পারবে বলে আমরা বিশ্বাস রাখি। এই পরিস্থিতির জন্যই কেরলের দায়িত্ব বেড়ে যাচ্ছে!” সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে কারাট প্রকারান্তরে মেনেই নিয়েছেন যে, আলিমুদ্দিন জনতার সঙ্গে সংযোগ-বিচ্ছিন্ন হয়েই রয়েছে!
মুখে সন্ত্রাসকে দুষলেও সিপিএম নেতারা মানছেন, বাংলায় দলের হাল দিনে দিনে উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের আড়াই বছর পার হওয়ার পরে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার মনোভাব যখন ধীরে ধীরে শিকড় গাড়ার কথা, তখন উল্টে বামেদের ভোটই আরও কমছে! বর্ধমানের মতো লাল দুর্গ পুরভোটের ময়দান ছেড়ে সরে গিয়ে দলের মুখ পুড়িয়েছে! দলে সমালোচনার মুখে আলিমুদ্দিন পরে সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক নয় বলে আখ্যা দিলেও কর্মী-সমর্থকদের মনোবলের যা ক্ষতি হওয়ার, হয়ে গিয়েছে। তারও আগে পঞ্চায়েত ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুর,পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার মতো জেলায় কোনও প্রতিরোধই গড়া যায়নি।
অথচ পাল্টা প্রতিরোধের মনোভাব নিয়ে চললে যে আখেরে ভাল ফল পাওয়া যায়, গৌতম দেবের উত্তর ২৪ পরগনাই তার নজির বলে দাবি করছেন সিপিএম নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, মাটি কামড়ে পড়ে থাকার কারণে সেখানে পঞ্চায়েত ভোটে দল দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলার তুলনায় ভাল ফল করেছে।
কেরলের প্লেনাম হচ্ছে সেই রাজ্যের সাংগঠনিক বিষয়ে। তার বার্তা কি বাংলার কাজে লাগতে পারে? কারাট বলেছেন, “সংগঠন মানে তো শুধু দলের নির্দেশ পালন করে যাওয়া নয়। মানুষকে জড়ো করতে পারাও সংগঠনের কাজ!”
ঘটনাচক্রে, এ দিন থেকেই বাংলার বামেরা একটু হলেও খোলস ছেড়ে বেরোতে শুরু করেছেন। বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। বাইরেও সুর চড়ানোর হুমকি দিয়েছেন।
কেরল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য বলছিলেন, “আমরা পাঁচ বছর অন্তর ক্ষমতার বাইরে থাকতে অভ্যস্ত। বাংলার কমরেডরা ৩৪ বছর এক রকম ভাবে চলেছেন। এখন হঠাৎ আক্রমণের মুখে সংগঠন ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে! কিন্তু যে রাজ্য সত্তরের হামলা মোকাবিলা করেছে, তাদের সাহস করে লড়তেই হবে!” সে কথা মেনে নিয়েই কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “ধীরে ধীরে আক্রমণাত্মক হচ্ছে দল। কলকাতা বা জেলা সদরে সভায় লোকও আসছে। কিন্তু স্থানীয় স্তরে কর্মসূচি নিতে গেলেই তৃণমূলের হামলার ভয়ে লোকে পিছিয়ে যাচ্ছে! পাড়ায় পাড়ায় পথে নামতে না-পারলে এখনই কিছু করে ওঠা সম্ভব বলে মনে হয় না!” |
পুরনো খবর: |
চরিত্র বাঁচাতে শুদ্ধকরণ চাইছে কেরল সিপিএমও
ঘর সামলাতে প্লেনাম ডাকল কেরল সিপিএম |
|
|
|
|
|