তেজপাল গ্রেফতার কি আজ, প্রহর গুনছে গোয়া
বিমানবন্দরে নামলে এখনও দেখা যাচ্ছে তরুণ তেজপালের সাদা-কালো ছবিটা। তহেলকা-র থিঙ্ক ফেস্টিভালের বিশাল পোস্টারের পাশেই। তেজপাল-অমিতাভ বচ্চন-রবার্ট ডি নিরো আর গ্যারি কাসপারভ।
গোয়ার মাটিতে আদৌ থিঙ্ক ফেস্টিভাল আর কোনও দিন হবে কি না, তা নিয়ে আপাতত যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে ওই ফেস্টিভালের সময়েই তেজপাল তাঁকে নিগ্রহ করেন বলে অভিযোগ তরুণী সাংবাদিকের। আগামী কাল সেই ঘটনার সূত্রেই তরুণ তেজপালকে ফের গোয়ায় হাজির হতে দেখা যাবে কি না, সেটাই এখন এখানে জোর জল্পনার বিষয়। আর হাজির হলে, তিনি গ্রেফতারি এড়াতে পারবেন কি না, সেটা আরও বড় জল্পনা।
আজ দিনভর যা যা ঘটেছে, তার সবই তরুণের বিরুদ্ধে গিয়েছে বলা চলে। গ্রেফতারি এড়াতে আগাম জামিনের আবেদন করেন দিল্লি হাইকোর্টে। আজ তার শুনানি ছিল। হাইকোর্ট ২৯ তারিখ পর্যন্ত শুনানি স্থগিত করে দিয়েছে। ফলে তেজপালের সঙ্গে জামিনের রক্ষাকবচ নেই। এই অবস্থায় গোয়া পুলিশ আগামী কাল বিকেল তিনটের মধ্যে তাঁকে হাজিরা দিতে বলে সমন পাঠিয়েছে।
তেজপাল এলে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে কি? ডিআইজি ও পি মিশ্র কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু পুলিশ কর্তাদের কারও কারও ইঙ্গিত সে রকমই। আর তেজপাল যদি কাল না আসেন, তা হলে গোয়া পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতেই পারে।
তেজপালের বিপদ আরও বেড়েছে আজ নিগৃহীতা তরুণী গোয়ায় এসে বয়ান রেকর্ড করে যাওয়ায়। তরুণীর আইনজীবী শ্যাম কেসওয়ানি পরে জানান, তরুণীর বয়ানের সঙ্গে পুলিশের এফআইআরের বয়ান সম্পূর্ণ মিলে গিয়েছে। তরুণী যা বলেছেন, তাতে ধর্ষণ সংক্রান্ত নতুন আইন মোতাবেক তেজপালের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা যেতে পারে।
ঘটনাচক্রে তরুণীর কাছে গোটা ঘটনার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে যে ই-মেল তরুণ লিখেছিলেন, সেটাও সংবাদমাধ্যম হাতে পেয়েছে বলে দাবি করেছে আজ। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ওই ই-মেলে দেখা যাচ্ছে, তরুণ লিখেছেন “এটা আমার জীবনের সব চেয়ে খারাপ মুহূর্ত...আপাত মজার একটা ঘটনা ভয়ঙ্কর ভুলে পরিণত হল। আমার কাছের মানুষদের থেকে শুরু করে যে সব নীতি নিয়ে আমি বেঁচেছি, তার সবই আমি হারালাম।” তরুণ বলেছেন, ওই দিন মেয়েটির সঙ্গে তাঁর নানা বিষয়ে খোলাখুলি কথাবার্তা হচ্ছিল, কিছুটা খুনসুটিও চলছিল। সেটাকেই তিনি যৌন সম্পর্কে সম্মতি বলে ধরে নেওয়ার মতো মারাত্মক ভুল করে ফেলেছেন। গোটা চিঠিতে তাঁর স্বর পুরোপুরি ক্ষমাপ্রার্থীর। তাঁর দাবি, “আমার যা শাস্তি পাওয়ার ছিল, আমি পাচ্ছি। হয়তো জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আমাকে এই শাস্তি ভোগ করে যেতে হবে।”
দৃশ্যতই গোটা বিষয়টা প্রকাশ হয়ে পড়ার পরে তরুণ যে ভাবে ঘটনাটিকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন, এই ই-মেলের সুর তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। এ দিন খোদ গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর পারিক্করও এই নিয়ে তরুণকে কটাক্ষ করেছেন। দিল্লি হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদনে তেজপাল অভিযোগ জানান, বিজেপি সরকার তাঁকে ফাঁসাতে চাইছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পারিক্কর বলেন, “ওঁর হঠাৎ মনে হয়েছে, বিজেপি ওঁর পিছনে পড়েছে! মেয়েটি যাতে বিচার পায়, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সেটা দেখা আমার দায়িত্ব।” একই সঙ্গে পারিক্কর বলেন, “তরুণকে জিজ্ঞেস করুন, নিগৃহীতা তরুণীকে উনি যে ই-মেল করেছেন, সেটাও কি বিজেপি লিখে দিয়েছিল?” বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ আবার আজ কারও নাম না-করে টুইটারে অভিযোগ করেন, তহেলকার প্রতিষ্ঠাতা এবং পৃষ্ঠপোষক এক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তরুণ তেজপালকে আড়াল করছেন। তা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানান আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল। সুষমার নিশানা যে তিনি, সেটা বুঝে তাঁর দাবি, “সুষমার সাহস থাকলে আমার নাম বলুন! তরুণ তেজপালের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। তহেলকা নিয়েও কোনও মাথাব্যথা নেই।”
তহেলকা নিয়ে তেমন একটা মাথাব্যথা ক’দিন আগে পর্যন্ত গোয়াবাসীরও ছিল না। কিন্তু একটা ঘটনা সব কিছু বদলে দিয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই পানজিমের বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় ছোট ছোট জটলা। কাল গভীর রাতে গোয়া এসে পৌঁছেছিলেন তরুণী। ব্যাপারটা এতই গোপন রাখা হয়েছিল যে, কোন উড়ানে তিনি আসছেন, সেটাও স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। কিন্তু এ দিন সকাল থেকে জনতার উৎসাহ ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। কেউ বলছেন, তরুণ তেজপালও আসতে পারেন! কেউ বলছেন, আগাম জামিনের আবেদন খারিজ না হলে তরুণের আসার প্রশ্নই নেই। কারও কারও উৎসাহ আরও বেশি। তাঁদের দাবি, তাঁরা নাকি এর মধ্যেই চা খাওয়ার ছুতোয় সেই হোটেলে গিয়ে লিফট-এ চড়ে এসেছেন।
এতটা চাঞ্চল্যের কারণ? স্থানীয়রাই বলছেন, গোয়ায় নানা ধরনের ঘটনা ঘটেই থাকে। যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন এখানে অপরিচিত নয়। কিন্তু এতটা হাই-প্রোফাইল মামলা এর আগে নাকি হয়নি। তাই মানুষের উত্তেজনা বেশি। প্রশাসনের সক্রিয়তাও বেশি। থিঙ্ক ফেস্টিভাল আর কখনও হয়তো হবেই না গোয়ায় রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী দিলীপ পারুলেকর অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত বয়ান রেকর্ড করা চলল। বিকেল চারটে নাগাদ তদন্তকারী অফিসার সুনীতা সবন্ত আদালতে এলেন। তাঁর উপরেই দায়িত্ব ছিল ওই তরুণীকে আদালত থেকে নিয়ে যাওয়ার। পাঁচটা ৫০ মিনিট নাগাদ ওঁরা বেরিয়ে গেলেন। আগামী কাল কী হবে, ঘড়ি দেখতে শুরু করল গোয়া।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.