চরিত্র বাঁচাতে শুদ্ধকরণ চাইছে কেরল সিপিএমও
বাংলার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কেরলেও! বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রাজ্যের ব্যাধি ভাবাচ্ছে ভি এস অচ্যুতানন্দনের ঘাঁটিকেও! তাই দলে শুদ্ধকরণের অভিযানের ডাক জোর গলায় দিতে হচ্ছে কেরল সিপিএমকে। তার জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে দলের আসন্ন প্লেনামের মঞ্চকেই।
পশ্চিমবঙ্গের মতো কেরলেও সিপিএম এখন ক্ষমতায় নেই। কিন্তু দক্ষিণী রাজ্যের পরিস্থিতি এখানকার মতো নয়। দল ছেড়ে অন্য শিবিরে চলে যাওয়ার হিড়িক বা শাসক দলের সন্ত্রাসের মুখে ঘরে বসে থাকার প্রবণতা কোনওটাই কেরলে প্রবল নয়। কিন্তু আলিমুদ্দিনের মতো তিরুঅনন্তপুরমের এ কে জি সেন্টারের নেতারাও এখন চাইছেন, অবাঞ্ছিত অংশ বেরিয়ে গিয়ে প্রয়োজনে ছোট হয়ে যাক দল। বরং ‘চরিত্র’ বজায় থাকুক! কমিউনিস্ট কর্মীদের আচরণ ও ভাবমূর্তিতে একের পর এক সমস্যাই এই উপলব্ধির মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে কেরল সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বকে।
পালাক্কাডে আগামী ২৭-২৯ নভেম্বর বসতে চলেছে কেরল সিপিএমের রাজ্য প্লেনাম। সাংগঠনিক বিষয়ে ডাকা ওই প্লেনামে পেশ করার জন্য যে রিপোর্ট তৈরি করেছে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী, তাতেই এ বার বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে শুদ্ধকরণের কথা। বিশেষত, কর্মীদের মদ্যপানে আসক্তি এবং মহিলাদের প্রতি আচরণ যে ভাবে দলীয় নেতৃত্বের বিড়ম্বনা ও শিরঃপীড়ার কারণ বাড়িয়ে তুলেছে, তাতে উদ্বেগ ধরা পড়েছে ওই রিপোর্টে। রাজ্য নেতৃত্বের ওই দলিল আপাতত রাজ্য কমিটিতে আলোচনাধীন। রাজ্য কমিটির সংশোধনী-সমেত খসড়া পেশ হবে পালাক্কাডের প্লেনামে।
সিপিএম সূত্রের খবর, এ রাজ্যের মতোই নির্মাণ ব্যবসা তথা প্রোমোটারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে দলের এক শ্রেণির নেতা-কর্মীর দ্রুত টাকা উপার্জনের ঝোঁক এখন ভাবাচ্ছে পিনারাই বিজয়নদেরও। এই প্রবণতার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মদ্যপানে আসক্তি এবং ব্যক্তিগত জীবনে বেপথু হয়ে পড়া। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, খসড়া দলিলে বলা হয়েছে, ‘বহু ক্ষেত্রেই তৃণমূল স্তর বা তার উপরেও মহিলা কমরেডরা তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের সঙ্গে নির্বিঘ্নে কাজ করার পরিবেশ পাচ্ছেন না’। মহিলাঘটিত কারণে লোকাল, জোনাল তো বটেই, জেলা স্তরের নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও সাম্প্রতিক কালে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে কেরল সিপিএমে। তার মধ্যে অনেকগুলিই আবার দলের কর্মী বা সমর্থকদের পরিবার থেকেই। সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ রেখে দলের ভাবমূর্তির এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে প্লেনামেই বিষয়টি তুলতে চাইছেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। উত্তর ও দক্ষিণ কেরলের দু’টি জেলার সম্পাদকদের ঘিরে যেমন গুরুতর অভিযোগ এসেছে, তার কথাও খসড়া রিপোর্টে উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর।
কেরলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “কেন্দ্রীয় কমিটি যে শুদ্ধকরণ দলিল তৈরি করেছিল, তা নিয়ে সব স্তরে আলোচনার পরে মতামত জমা পড়েছে। এ বার রাজ্য স্তরেও বিষয়টাকে চূড়ান্ত করতে চাইছি আমরা। আর এই শুদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তাও কোনও একটা রাজ্যে সীমাবদ্ধ নয়।”
তবে এরই মধ্যে বিচিত্র একটি কাণ্ড ঘটিয়েছেন বিজয়নেরা! দলের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত না হলে তাদের খতম করার তত্ত্বে কমিউনিস্টদের বিশ্বাসের কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন কেরল সিপিএমের নেতা এম এম মানি। চূড়ান্ত বিড়ম্বনায় পড়ে দল তাঁকে রাজ্য কমিটি ও জেলার পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। গ্রেফতার হয়ে কিছু দিনের জন্য জেলও খেটেছিলেন মানি। কিন্তু সম্প্রতি জেলা কমিটির বৈঠকে রাজ্য সম্পাদক বিজয়ন নিজে উপস্থিত থেকে সন্তর্পণে সেই মানিকে আবার ইদুক্কি জেলা সম্পাদকের পদে ফিরিয়ে এনেছেন! লাভালিন মামলায় সিবিআই আদালতে ‘ক্লিন চিট’ পাওয়া বিজয়নের দলে বিপুল দাপট! কেরলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের আক্ষেপ, “এই যদি অবস্থা হয়, শুদ্ধকরণ কী হবে?”
ঠিক যে প্রশ্ন অনবরত ওঠে বুদ্ধবাবুর রাজ্যেও!

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.