তামিলনাড়ুর নিম্নচাপেই ঠান্ডার রথে উল্টো টান
হেমন্ত কিছুতেই ছন্দে ফিরছে না। কখনও উত্তুরে হাওয়ায় কাঁপুনি ধরছে। কখনও আবার মেঘ এসে আকাশ ঢাকছে, কমছে ঠান্ডা। মাঝ নভেম্বরে ক্ষণে ক্ষণে আবহাওয়ার এই ভোলবদল ধন্দে ফেলছে শীত-প্রত্যাশী বাঙালিকে।
কাশ্মীর-সহ তামাম উত্তর ভারতে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার লাগাতার হানাদারির জেরে নভেম্বরের গোড়া থেকে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে উত্তুরে হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। উত্তরের তরাই-ডুয়ার্স কিংবা পশ্চিমাঞ্চল তো বটেই, খাস কলকাতাতেও তরতরিয়ে নামছিল উষ্ণতার পারদ। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, উত্তুরে হাওয়ার দৌলতে বৃহস্পতিবার কলকাতা ও আশপাশে তাপমাত্রা নেমেছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। যা এ সময়ের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তুলনায় প্রায় তিন ডিগ্রি কম!
অর্থাৎ ভরা হেমন্তেই শীতের আঁচ টের পেয়ে গিয়েছিল কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ। আবহবিদেরাও জানিয়ে দিয়েছিলেন, শীত পড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। শুনে আলমারি থেকে চাদর-সোয়েটার বেরিয়ে পড়তেও দেরি হয়নি।
দোরগোড়ায় এসে পড়া শীতের আমেজ পোহানোর জন্য মহানগর যখন সদ্য গুছিয়ে বসেছে, ঠিক তখনই যেন শেন ওয়ার্নের গুগলি দিল আবহাওয়া। এক ধাক্কায় তাপমাত্রা বেড়ে গেল দু’ডিগ্রির বেশি! হাল্কা সোয়েটার-চাদর-মাফলার আপাতত সরিয়ে রাখতে হল। দিনের বেলা ও প্রথম রাতে বহু বাড়িতে ফের ফ্যানও চলল বনবনিয়ে। ঠান্ডায় এমন উল্টো টান কেন?

ভোল বদল
কোথায় কত*
• কলকাতা ২০.৬ (২)
• শ্রীনিকেতন ১৬.৭ (স্বাভাবিক)
• কৃষ্ণনগর ২০.২ (৩)
• বাঁকুড়া ১৮.৪ (স্বাভাবিক)
• বর্ধমান ১৯.৮ (৩)
* রবিবারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, ডিগ্রি সেলসিয়াসে
(বন্ধনীতে) স্বাভাবিকের কত বেশি
এ জন্য দক্ষিণবঙ্গের আকাশে মেঘের উপস্থিতিতে দায়ী করছেন আবহবিদেরা, যার উৎস হিসেবে তাঁরা আঙুল তুলছেন তামিলনাড়ু উপকূলের দিকে। ওঁদের ব্যাখ্যা: শীত পড়ার জন্য দিনের বেলায় চড়া রোদ ও পরিষ্কার আকাশ অতীব জরুরি। দিন ও রাতের তাপমাত্রায় ফারাক যত বাড়বে, ঠান্ডাও তত বেশি মালুম হবে। এই প্রাথমিক শর্তটি পূরণ না-হওয়ার ফলেই পরিবেশ বিলকুল বদলে গিয়েছে। উপগ্রহ-চিত্রে ধরা পড়েছে, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের আকাশে হাল্কা মেঘ রয়েছে। যাতে বাধা পেয়ে ভূপৃষ্ঠের তাপ পরিমণ্ডল ছেড়ে বেরোতে পারছে না। তাই রাতের তাপমাত্রাও কমেনি। আলিপুর জানিয়েছে, রবিবার কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা কিনা স্বাভাবিকের দু’ডিগ্রি বেশি!
আর হেমন্তের আকাশে এ হেন মেঘ সঞ্চারের কারণ লুকিয়ে রয়েছে সুদূর তামিলনাড়ুতে। আবহ-বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তামিলনাড়ু উপকূলবর্তী বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া একটি গভীর নিম্নচাপে ভর করে দক্ষিণবঙ্গের আকাশে মেঘ ঢুকেছে। “তামিলনাড়ু উপকূল থেকে পূর্ব ভারত পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। সেটাই এখানে মেঘ এনে হাজির করেছে।” এ দিন বলেন আলিপুরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ।
তার মানে কি শীত আসার পথে বাধা পড়ল?
আবহাওয়া দফতর অবশ্য তেমন আশঙ্কা এই মুহূর্তে দেখছে না। তাদের বক্তব্য, নিম্নচাপের ফলে সাময়িক একটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছিল বটে, তবে তা কেটে যাওয়ারও ইঙ্গিত মিলেছে। বস্তুত এ দিন বিকেলেই নিম্নচাপটি স্থলভূমিতে ঢুকে দুর্বল হতে শুরু করেছে। ফলে শীতের পথে বাধা কাটছে বলে আবহবিদদের দাবি। গোকুলবাবুর আশ্বাস, “সোমবারই আকাশ পরিষ্কার হবে। ঝকঝকে রোদ উঠবে। রাতের তাপমাত্রা কমবে।”
সব মিলিয়ে গত দু’দিনের গরম ভাব কাটিয়ে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে আজ ঠান্ডার আমেজ ফিরে আসবে বলে আলিপুর আশাবাদী। দক্ষিণবঙ্গে শীতের রথ সাময়িক থমকে গেলেও উত্তরবঙ্গে অবশ্য তার যাত্রায় ছেদ পড়েনি। সেই ছন্দ ধরেই আগামী ক’দিনে সেখানে তাপমাত্রা নামতে পারে। উত্তর ভারতেও ঠান্ডা জোরদার হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন। এ দিনও হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের একাংশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ২-৩ ডিগ্রি কম ছিল। মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের কোথাও কোথাও তা স্বাভাবিকের ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে গিয়েছে।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.