শততম রঞ্জি ম্যাচে নামা ক্যাপ্টেনকে ‘ডন’-এর উপহার মরসুমের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
তাতেই সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে প্রথম দিন ২৪২-৩ তুলে সুবিধাজনক জায়গায় বাংলা। যদিও এই উইকেটে সাড়ে চারশোর কম তুললে চলবে না বলে জানাচ্ছেন স্বয়ং ‘বাংলার ডন’ অরিন্দম দাস। তবে তিনি নিজে যখন ক্রিজে টিকে রয়েছেন এবং অনুষ্টুপ, সন্দীপন আর ‘সেঞ্চুরি’ ম্যাচে লক্ষ্মীরতন শুক্লর ব্যাট করতে নামা এখনও বাকি, তখন সেনাবাহিনীর সামনে অনতিক্রম্য রানের পাহাড় তোলার আশাতেই বাংলা শিবির।
ম্যাচ শুরুর ১৫ মিনিট আগে সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র কাছ থেকে একশো গোলাপের তোড়া পেয়ে যেমন অবাক শততম রঞ্জি ম্যাচে নামা লক্ষ্মী, তেমনই অভিভূত সতীর্থদের সবার সই করা স্মারক ব্যাট পেয়ে। অবাক কারণ, কানপুর ওয়ান ডে-তে ম্যাচ অবজার্ভারের দায়িত্ব সেরে পালামের মাঠে এসে সিএবি শীর্ষকর্তা যে তাঁকে সংবর্ধনা দেবেন, তার আগাম খবর ছিল না লক্ষ্মীর কাছে। আর অভিভূত কারণ, সতীর্থদের থেকে এমন স্মারক পেয়ে। একশো গোলাপের তোড়া ছাড়াও সিএবি-র পক্ষ থেকে এ দিন লক্ষ্মী পেলেন স্মারক পাগড়ি ও কাশ্মীরি শাল। প্রতিদ্বন্দ্বী সার্ভিসেস ক্রিকেটাররাও লক্ষ্মীকে দিলেন ‘গার্ড অফ অনার’। |
একশোর সম্মান। নয়াদিল্লিতে লক্ষ্মীরতনের সঙ্গে সিএবি কর্তা বিশ্বরূপ দে। —নিজস্ব চিত্র। |
সতীর্থদের বারণ করেছিলেন তাঁর শততম রঞ্জি ম্যাচ নিয়ে ‘বাড়াবাড়ি’ করতে। কিন্তু সিএবি শীর্ষকর্তাই যেখানে স্মারক উপহার নিয়ে সাতসকালে হাজির এবং ম্যাচ রেফারি সঞ্জয় পাটিলের কাছ থেকে তিনি যখন বিশেষ অনুমতি চেয়েই নিয়েছিলেন ছোট্ট সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করার জন্য, সেখানে তো আর ‘না’ করার কোনও উপায় নেই। এমন ‘সারপ্রাইজ’-এ অভিভূত লক্ষ্মী বলছিলেন, “সিএবি-র সকলকে আমার ধন্যবাদ। এমনটা যে হবে, তা জানতাম না। তাই সকালে ম্যাচের আগে বিশ্বরূপদার কাছ থেকে উপহারগুলো পেয়ে খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম।”
সতীর্থদের আবদার নিয়ে বাংলার অধিনায়ক বললেন, “আগের দিন টিমমেটরাও সেলিব্রেশন করতে চেয়েছিল। কিন্তু ওদের বারণ করে দিই। বলি, এখানে আমরা খেলতে এসেছি। আগে ম্যাচটা ঠিকঠাক খেলি, তার পর ওসব হবে। আজ আমি শততম রঞ্জি ম্যাচে নামছি তো সিএবি-র জন্যই। আমার ক্রিকেটের অভিভাবক তো সিএবি-ই।” প্রাক্তন আন্তর্জাতিক অলরাউন্ডার লক্ষ্মীর সংবর্ধনার সময় মাঠে ছিলেন জাতীয় নির্বাচক কমিটির প্রধান সন্দীপ পাটিলও।
সকালের সংবর্ধনার পর ম্যাচ শুরু হতে আর এক প্রস্ত ‘সংবর্ধনা’। এই ‘সংবর্ধনা’-টাই বেশি চাইছিলেন অধিনায়ক লক্ষ্মী। যাতে তাঁর ওপেনাররা ৫৩ ওভার উইকেটে টিকে থেকে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ (১২৯ রান) গড়ে বাংলা ইনিংসের শক্ত ভিত গড়ে দিলেন। ইডেনে মধ্যপ্রদেশ ম্যাচের পর সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার ছুঁলেন অরিন্দম। গত মরসুমে বাংলাকে বেশ ভোগানো ওপেনারের এ বার সমস্যা ক্রমশ কাটছে। দিনের খেলার পর অরিন্দম বললেন, “কোচ আমাকে উইকেটে টিকে থাকতে বলেছিলেন। রানটা বড় কথা নয়, হাতে উইকেট থাকাই বড় কথা, এটা বুঝিয়েছিলেন। তাঁর কথা মতোই খেললাম।” |
পেসার ইরফান খানের বল লেট কাট মেরে সেঞ্চুরিতে পৌঁছন অরিন্দম। ১৮৬ বলে একশোয় পৌঁছনো। দিনের শেষে ব্যাটে ১১টি বাউন্ডারি আর অফস্পিনার কোটেশ্বর রাওকে মারা একটি ওভার বাউন্ডারি। সেঞ্চুরির পর ‘বাংলার ডন’-কে একটা অদ্ভুত নির্দেশ দিতে দেখা গেল মাঠের স্কোরবোর্ড পরিচালককে। বোর্ড থেকে তাঁর নাম আর রান সংখ্যা সরিয়ে দিতে বলেন অরিন্দম। কেন? নিজেই পরে ব্যাখ্যা দিলেন, “মধ্যপ্রদেশ ম্যাচে সেঞ্চুরির পরেই আউট হয়ে গিয়েছিলাম। এ বার ঠিক করলাম, আর তা হতে দেওয়া যাবে না। সে জন্য স্কোরবোর্ড থেকে আমার নাম আর স্কোর সরিয়ে দিতে বলি। যাতে সে দিকে চোখ চলে গিয়ে চাপে না পড়ে যাই। ব্যাপারটা কাজে লেগেও গেল। কালও অনেকক্ষণ ব্যাট করার ইচ্ছা আছে। এই উইকেটে আমাদের অন্তত সাড়ে চারশো তুলতেই হবে।”
ওপেনিং পার্টনারশিপ আরও দীর্ঘ হতে পারত, যদি না অরিন্দমের মারা বল বোলার ইরফানের হাতে লেগে নন-স্ট্রাইকিং এন্ডের স্টাম্পে লেগে রোহন বন্দ্যোপাধ্যায় (৪২) দুর্ভাগ্যজনক রান আউট না হতেন। ঋদ্ধিমান সাহার (২১) ফিরে যাওয়াটাও দুর্ভাগ্যজনক। যার পিছনে ভুল আম্পায়ারিং সিদ্ধান্ত। ইরফানের অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বলে দক্ষিণ আফ্রিকামুখী ঋদ্ধিমানকে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার।
দিনের শেষের দিকে ঋদ্ধি ওই ভাবে ফিরে যাওয়ায় হতাশ অরিন্দম বলছিলেন, “কাল ঋদ্ধিকে সঙ্গে নিয়ে নামতে পারলে ভাল হত। যে ভাবে আউট হয়ে ফিরে গেল, সেটা হতাশাজনক।” |
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলা ২৪২-৩ (অরিন্দম ব্যাটিং ১৩৯, রোহন ৪২, ইরফান ১-৫৭, প্রতীক ১-২৭)। |
পুরনো খবর: আবেগ নেই, আছে সংকল্প |