ডার্বি মিথ বদলাল না আর্মান্দো জমানাতেও

ইস্টবেঙ্গল ১ (চিডি)
ইউনাইটেড ১ (ধনচন্দ্র)
ডার্বি জেতার পর সেই ক্লাব কেন পরের ম্যাচে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হারে বা ড্র করে? কেন বদলায় না ট্র্যাডিশন?
“আরে এটা আমার কাছেও বেশ বিস্ময়ের। কিছুটা আলৌকিকও মনে হয় মাঝে মধ্যে। আমার জীবনে বহু বার এরকম হয়েছে। অনেক ভেবে দেখেছি, ফুটবলারদের মধ্যে একটা আত্মতুষ্টি এসে যায় ওই ম্যাচটা জেতার পর। মনে হয় সেটাই সমস্যা তৈরি করে,” বলছিলেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। ডার্বি খেলার হাফ-সেঞ্চুরি যাঁর পকেটে।
কোচ ও ফুটবলার হিসাবে প্রায় পঁচানব্বইটি বড় ম্যাচে নামার অভিজ্ঞতা আছে সুব্রত ভট্টাচার্যের। তাঁর বিশ্লেষণ, “এটা হয়, হয়ে আসছে। আসলে ডার্বিতে সবাই তীব্র চাপে নিজেকে উজাড় করে দেয়। পরের ম্যাচে সেই মোটিভেশন বা তাগিদটা আর থাকে না। মনে করে, মেরে দেব। শেষ পর্যন্ত তা হয় না। যা ইস্টবেঙ্গলের হয়েছে আজ।”
মনোরঞ্জন এবং সুব্রত—দুই ভট্টার্চাযেরই আই লিগ জেতার অভিজ্ঞতা আছে। দুই প্রধানের কোচ হয়ে। দু’জনের মতই—একই বিন্দুতে। আত্মতুষ্টি এবং মোটিভেশনের অভাব। হয়তো ঠিক, হয়তো নয়।
কিন্তু যেটা সার সত্য তা হল, বৃহস্পতিবার যুবভারতীতে আর্মান্দো কোলাসো বনাম এলকো সতোরির মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধর পরও ডার্বি মিথ অক্ষত। অব্যাহতও।
আরও একটা মিথ অবশ্য চালু হয়ে যেতেই পারে ময়দানেসামনে বেগুনি জার্সি দেখলে লাল-হলুদের উজ্জ্বলতা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এ দিনও যার পরিবর্তন হয়নি।

এই সেই বিতর্কিত মুহূর্ত।
ট্রেভর মর্গ্যানের ‘অশ্বমেধের ঘোড়া’ ছোটানোর সময়ও সেটা ছিল, পাঁচ বার আই লিগ জয়ী আর্মান্দো কোলাসোর আমলেও সেই পরম্পরা চলছেই। কতদিন যে এই ম্যাচ খেলে জেতেনি ইস্টবেঙ্গল!
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ইউনাইটেড কোচ সতোরিকে দেখলাম, দু’হাত তুলে দর্শকদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন! জিতলে যেমন করে থাকেন কোচেরা। র‌্যান্টি মার্টিন্স আবার মাঠ থেকে রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে এসে দু’বার কোমর দুলিয়ে নিলেন, আনন্দে! ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে ‘গোল মেশিনের’ মন্তব্য, “মরাল ভিকট্রি কিন্তু আমাদেরই। যে টিম নিয়ে খেলে আমরা এক পয়েন্ট পেয়েছি সেটা কৃতিত্বের। এরিক, লালকমল থাকলে ম্যাচটা অন্যরকম হত।” যা শুনে ইস্টবেঙ্গল কোচের প্রতিক্রিয়া, “ও আমার ছেলে। আমি চিনি। একটা বল গোলে মারতে পেরেছে র‌্যান্টি?”
আর্মান্দো বনাম র‌্যান্টি নয়, লড়াইটা এ দিন আসলে হল গোয়ান বনাম ডাচের ট্যাকটিক্সের যুদ্ধ। নিখুঁত অঙ্ক কষে একে অন্যকে টপকে যেতে চাইলেন দু’দলের কোচ-ই।
ওয়ান টু ওয়ান পজিশন ধরে বিচার করলে দু’দলের ফুটবলারদের মধ্যে পার্থক্য ছিল ৭০-৩০। এই ব্যবধান ইউনাইটেড কোচ কমিয়ে আনলেন ছোট ছোট পাসের ফুলঝুরি ছুটিয়ে, বিপক্ষকে বেদম করে দিয়ে। পাঁচ-ছয়-বারো-তেরো—টানা পাস খেলে যাচ্ছিলেন হাসান-দীপক-শৌভিকরা। এবং পুরোটাই মাটিতে বল রেখে।
চিডি-সুয়োকার সামনে হাসান-বেলোরা ডাবল কভারিং করছিলেন। আড়িয়াদহের ছেলে শৌভিক ঘোষকে দিয়ে কিক অ্যান্ড রান করিয়ে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ ভোঁতা করে দেওয়ার চেষ্টাও চালালেন সতোরি। র‌্যান্টিকে একমাত্র স্ট্রাইকার করে উগা-অর্ণবদের নিজেদের জায়গায় আটকে রেখেছিলেন ইউনাইটেডের ডাচ কোচ।
তা সত্ত্বেও ঠিকঠাক ফল হলে ম্যাচটা চিডি-সুয়োকাদের জেতার কথা অন্তত ৩-২ গোলে। চিডির একটি শট ক্রসপিসে লেগে ফিরল। ইস্টবেঙ্গলকে একটি নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করলেন মণিপুরের রেফারি খাম্বা সিংহ। প্রায় গোল করে ফেলা চিডিকে ইউনাইটেড কিপার ঈশান দেবনাথ নিজেদের বক্সে পা টেনে ফেলে দিয়েছিলেন।
কলকাতার দর্শকরা উত্তেজনা না থাকলে মাঠে আসেন না। ডার্বি জেতার পরও যুবভারতী তাই ফাঁকা। রবিবারের নব্বই, এ দিন কমে মেরে কেটে পনেরো-কুড়ি হাজার।

বিস্মিত কোলাসো।
ইউনাইটেডের হিসেবি ফুটবলের পাশে আর্মান্দোও চেষ্টা চালিয়েছিলেন পাল্টা অঙ্কের। আক্রমণের অভিমুখ বারবার বদলে বিপক্ষের পেতে রাখা ফাঁদ কেটে বেরোনোর চেষ্টাও চলল নিরন্তর। কিন্তু শৌভিক-রফিকদের তাড়া করা পাসিং ফুটবলের মায়াজাল কেটে বেরোতে পারলেন না খাবরা-চিডিরা। উইং প্লে বা সেট পিসেও লাল-হলুদের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। চিডির একক চেষ্টায় ইনস্টেপে বল টেনে নিয়ে গিয়ে ভাল একটা গোল করার পরও তাই জিততে পারল না বেঙ্গল। উল্টে ডিফেন্সের ভুলে গোল খেয়ে গেলেন আর্মান্দোর ছেলেরা। শৌভিকের কর্নার থেকে ধনচন্দ্র যখন কোচের দেওয়া ফর্মুলা মেনে গোল করে গেলেন, তখন উগারা উধাও। কিপার অভিজিৎ মণ্ডলও হতভম্ব।
দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচেই ধাক্কা! তাতে অবশ্য চিন্তিত নন ইস্টবেঙ্গল কোচ। লিগের অঙ্ক তাঁর নখদর্পণে। বললেন, “দু’ম্যাচে চার পয়েন্ট খারাপ নয়। আমি কিন্তু বলে দিলাম এই ইউনাইটেড সব দলকেই বিপদে ফেলবে।”
ডার্বি জয়ের পরড্র। শনিবারই ভারত ‘ভ্রমণে’ বেরিয়ে পড়ছে ইস্টবেঙ্গল। খেলবে পাঁচ-পাঁচটি ম্যাচ। ফেরার পর আর্মান্দোর ইউএসপি কোথায় থাকে সেটাই দেখার। মেহতাব, সৌমিক, খাবরারা কিন্তু চোট পেতে শুরু করেছেন। আর কলকাতার ক্লাব সমর্থকরা কিন্তু অল্পেতেই ধৈর্য হারান।
আর্মান্দো এত দিনে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন কলকাতা কিন্তু গোয়া নয়। ইস্টবেঙ্গলও নয় ডেম্পো।

ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, নওবা, উগা, অর্ণব, সৌমিক (রাজু), খাবরা, লোবো (লেন), ডিকা, তুলুঙ্গা (বলজিৎ), চিডি, সুয়োকা।
ইউনাইটেড: ঈশান, দীপক, অনুপম (আসিফ), বেলো, ধনচন্দ্র, শৌভিক, তপন (রফিক), স্নেহাশিস (জয়ন্ত), হাসান, বিনীত, র‌্যান্টি।

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.