যুবভারতীতে আজ পরীক্ষায় কোলাসো
ইস্টবেঙ্গলের জয়ের পথে কাঁটা সেই র‌্যান্টি
মিথ হল, ডার্বি জিতলে সেই ক্লাব বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরের ম্যাচ জিততে পারে না!
ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে লাল-হলুদ ব্রিগেডে ইদানীং ভূমিকম্প শুরু হয়ে যায়। শেষ চারটে ম্যাচ একটাতেও কিন্তু জিততে পারেনি ইস্টবেঙ্গল!
এ বারের আই লিগে চিডি-মেহতাবরা টানা দু’টো ম্যাচ এখনও জেতেননি!
দেশীয় আর্মান্দো কোলাসো বনাম ডাচ এলকো সাতোরির স্ট্র‌্যাটেজির যুদ্ধ শুরুর আগে চৌম্বকে এ রকম পরিসংখ্যান ও মিথ সাইনবোর্ডের মতো ঝুলছে।
কিন্তু তার বাইরে আরও একটা লড়াই দেখার অপেক্ষায় আজ বৃহস্পতিবার যুবভারতীতে হাজির থাকবেন ফুটবলপ্রেমীরা।
ডার্বি জেতার ‘আনন্দসাগরে’ ডুব দিয়ে উঠতে না উঠতেই, আর্মান্দো কোলাসোর সামনে যে হাজির গত চার বারের সর্বোচ্চ গোলদাতা র‌্যান্টি মার্টিন্স! যাঁর গোলের ফুলঝুরির দৌলতে পাঁচ পাঁচটি আই লিগ খেতাব পকেটে নিয়ে ঘুরছেন আর্মান্দো। তিনি-ই এ বার উল্টো দিকে!
“ও তো আমার ছেলে। র‌্যান্টির সব কিছুই আমি জানি,” বুধবারই বলে দিয়েছেন আর্মান্দো। আর তা শুনে র‌্যান্টির প্রতিক্রিয়া, “ডেম্পোতে আমি যেখানে খেলতাম, সেখানে কিন্তু আমি এখন খেলি না। এটা আর্মান্দো জানেন না। আর ওঁর কোচিংয়ে যখন খেলতাম, তখন উনি বলতেন সাহস কখনও হারাবে না। মাঠে যখন নামবে সাহস নিয়ে নামবে। কালও সেই সাহস নিয়েই মাঠে নামব।”
কড়া প্রতিক্রিয়ার তেতে থাকা তাওয়া আরও গরম করে দিয়েছেন ইউনাইটেড কোচ এলকো সাতোরি। “মেসি-রোনাল্ডো কেমন খেলে সবাই জানে। তা সত্ত্বেও ওরা গোল করে সারপ্রাইজ দেয়। র‌্যান্টিও কাল কিছু সারপ্রাইজ দেবে বলে আশা করছি।”
মরসুমের শুরু থেকেই আলোকেশ-নবাবদের টিমে আলো নেই। লিগ টেবিলে ইস্টবেঙ্গলের থেকে ছয় ধাপ এগিয়ে চার নম্বরে রয়েছেন র‌্যান্টিরা। গোয়ায় গিয়ে ডেম্পোকে হারিয়েছেন বেলো-দীপকরা। এ রকম উজ্জ্বল ট্র‌্যাক রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও এখনও কোনও স্পনসর জোটেনি ইউনাইটেডের। আর্থিক অবস্থা যা তাতে ক্লাবের ঝাঁপ কত দিন খোলা রাখতে পারবেন তা নিয়ে চিন্তায় ক্লাব কর্তারা। এখান-ওখান থেকে ধার নিয়ে কত দিন আর টিম চালানো যায়?
“ওটাই কিন্তু আমাদের মোটিভেশন। ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে পারলে স্পনসরদের চোখে পড়বে আমাদের। তাই জয় ছাড়া কিছুই ভাবছি না। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, তিন পয়েন্ট চাই-ই,” বলছিলেন আই লিগের ‘গোল্ডেন বয়’ র‌্যান্টি। যুবভারতীতে বুধবার সকালে অনুশীলনের পর। বারবার জানতে চাইলেন, উগা ওপারা আর সুয়োকা খেলছেন কি না?
উগা আর অর্ণব মণ্ডলকে দিয়ে ততক্ষণে র‌্যান্টি-বধের ‘ওষুধ’ তৈরি করে ফেলেছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। চোট পাওয়া মেহতাব হোসেনের জায়গায় হরমনজিৎ খাবরা খেলবেন। ওডাফাকে আটকাতে যে ফর্মুলা প্রয়োগ করেছিলেন, র‌্যান্টির জন্যও একই ফর্মুলা থাকছেজোনাল মার্কিং এবং ডাবল কভারিং। ইস্টবেঙ্গলের কাজটা অবশ্য সহজ হয়ে যাচ্ছে র‌্যান্টির সঙ্গে লাইবেরিয়ার এরিক ব্রাউন না থাকায়। এরিক কার্ডের জন্য আটকে যাওয়ায় হা-হুতাস তাই তীব্র ইউনাইটেডে। “এরিক দুর্দান্ত ফর্মে ছিল। আগের ডেম্পো ম্যাচেও গোল করেছে এখন পুরো চাপটা তাই র‌্যান্টিকেই নিতে হবে,” যুবভারতীতে অনুশীলনের পর বলছিলেন সাতোরি।

চিডি, সুয়োকাকে নিয়ে নতুন যুদ্ধের ক্লাসে কোলাসো। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
বুধবার সকালে ইস্টবেঙ্গল মাঠে অনুশীলনে অবশ্য জোর দেওয়া হল সেট পিস এবং বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটের উপর। যা খবর তাতে, ডার্বির টিমে দু’টো পরিবর্তন হতে পারে। রাইট ব্যাক নওবা সিংহ শেষ পর্যন্ত খেলতে না পারলে তার জায়গায় খেলবেন রাজু গায়কোওয়াড়। আর লালরিন্দিকার সঙ্গে তাঁর ‘গড ফাদার’ তুলঙ্গারও দুই উইং-এ নামার সম্ভাবনা।
লিগের মজা এবং উত্থান-পতন সম্বন্ধে আমার্ন্দোর চেয়ে ভাল ধারণা সম্ভবত দেশের আর কোনও কোচের নেই। তিনি জানেন, ফুটবল মাঠে রাজা থেকে ফকির হতে লাগে শুধু একটা ম্যাচের খারাপ ফল। সে জন্যই টিম মিটিং-এ ময়দানের প্রথম গোয়ান কোচ সতর্ক করে দিয়েছেন, “ইউনাইটেড কিন্তু মোহনবাগান নয়। ওরা টিম গেম খেলে। আর একটা নতুন ম্যাচ খেলতে নামছি আমরা। পুরনো কথা ভুলে যাও।” চিডি-সুয়োকারা তাতে কতটা উদ্বুদ্ধ হলেন তা বোঝা গেল না, তবে উগা ওপারা অনুশীলনের পর চেয়ারে বসে থাকা আহত মেহতাবকে দেখে যে রকম বীভৎস চিৎকার করলেন, তাতে র‌্যান্টি কেন যে কেউ ‘কেঁপে’ যেতে পারেন।
র‌্যান্টির সঙ্গে স্ট্রাইকারে বিনীত খেলবেন। মাঝমাঠে হাসানের সঙ্গে স্নেহাশিসরা। পিছনে বেলো-দীপক-অনুপম। তা সত্ত্বেও হেড টু হেড বিচারে বেগুনির চেয়ে অনেক এগিয়ে লাল-হলুদ। তবে আর্মান্দোর মতোই এলকোর দলের প্লাস পয়েন্ট গত বারের টিমটাই প্রায় রয়েছে হাতে। ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিং রুমে টোকা মারলেই একটা নামই বেরিয়ে আসছে, তা র‌্যান্টির। “ওডাফার চেয়ে র‌্যান্টি কিন্তু চতুর, বুদ্ধিমান,” বরফের ড্রামে শরীর ডুবিয়ে বলছিলেন সুয়োকা। একটু আগে হরমনজিৎ খাবরার সতর্কতা“ওডাফার চেয়ে র‌্যান্টিকে আটকানো কঠিন। গোলের সামনে ও ভয়ঙ্কর।”
সুয়োকা-খাবরাদের চাপ কাটাতে আর্মান্দো অবশ্য অন্য তাস ফেলছেন। বিপক্ষের গোলমেশিনকে নিয়ে প্রশ্ন করলেই তিনি কপট রাগ দেখিয়ে বলছেন, “আরে শুধু র‌্যান্টিকে নিয়ে কেন প্রশ্ন করছেন, চিডি-ও তো কাল খেলবে।”
র‌্যান্টি-হাওয়ার অভিমুখ বদল করতে চিডিকে সামনে আনা ছাড়া আর্মান্দোর যে গতিও নেই। কারণ এক সময়ের ‘গুরু’ আর্মান্দো জানেন, এক তরফা ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে তাঁর ‘ছাত্র’ র‌্যান্টির লাগে বিপক্ষ বক্সের আশেপাশে শুধু একটা—বল!

রবিবারে আই লিগ ফুটবল
ইস্টবেঙ্গল: ইউনাইটেড স্পোর্টস (যুবভারতী ৫-৩০)
চার্চিল ব্রাদার্স: স্পোর্টিং ক্লুব (দুলের)।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.