ডার্বির পরও এক তিমিরে বাগান
ড্র করেও মহমেডানে উৎসব, বাগানে বিষণ্ণতা

মোহনবাগান-০
মহমেডান-০
ব্বিশ ঘণ্টা আগে দূরপাল্লার যে শটগুলো বারপোস্টের উপর দিয়ে ও সাইড নেট ঘেঁষে বেরিয়ে যাচ্ছিল, সেটা ম্যাচেও দিক বদলাল না। বরং প্র্যাকটিসের সময় গোটা পাঁচেক চেষ্টার পরে দু’টো বল জালে ঢুকলেও, বুধবারের যুবভারতীতে সেই ঝলকটুকুর দেখাও জুটল না। উল্টে ওডাফা ওকোলির ‘বডি ল্যাঙ্গোয়েজে’ কেবল আত্মতুষ্টির গন্ধ। খেলায় ছিটেফোঁটা আত্মবিশ্বাস নেই, “সব জায়গায় শুনছি, ওডাফা নাকি শেষ হয়ে গিয়েছে। ওর মধ্যে আর ফুটবল বাকি নেই। চোট সারিয়ে উঠে সবে দু’টো আই লিগের ম্যাচ খেললাম। দু’টোই ডার্বি। তা দেখেই সবাই সব কিছু বুঝে গেল? আগে আমার মতো চোট সারিয়ে মাঠে নেমে দেখাক, তার পরে বুঝব!”
ডার্বি-বিপর্যয়ের পরে করিম বেঞ্চারিফার কাছে মহমেডান ম্যাচ ছিল অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। কিন্তু তাঁর গেমপ্ল্যান দেখে মনে হল, ডার্বির হ্যাংওভার এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সেই আল্ট্রা ডিফেন্সিভ স্ট্র্যাটেজি। মাঝমাঠ ফাঁকা। মহমেডানে টোলগে ওজবে একা স্ট্রাইকার খেললেন, তবু বাগান কোচ আক্রমণাত্মক হতে পারলেন না।
দলের বিদেশি স্টপার ইচের প্রত্যাবর্তনেও ভরসা পেলেন না রক্ষণে? করিমের যুক্তি, “আমি ভেবেছিলাম ওরা জোসিমার-টোলগে জুটি দিয়েই শুরু করবে। তাই ৪-২-৩-১ ছকে খেলি। পেন-টোলগের মতো ফুটবলারদের জায়গা ছাড়লে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সেটা আর আলাদা করে বলার কিছু নেই।”

ব্যর্থ টোলগে।
কিন্তু এত ডিফেন্সিভ হলে গোল হবে কোথা থেকে? প্রেসবক্সের সামনে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে আসা ইউনাইটেড কোচ এলকো সাতৌরি তো বলেই ফেললেন, “মোহনবাগানের খেলা দেখে মনেই হল না, ওরা তিন পয়েন্টের জন্য খেলছে। শুরু থেকে যে টিম এত ডিফেন্সিভ খেলে, তারা শুধু ম্যাচ ড্র করার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামে।” র্যান্টিদের ডাচ কোচের বিশ্লেষণকে উড়িয়ে দেওয়া বেশ কঠিন। কেন না বাগান ড্রেসিংরুমের গুমোট আবহাওয়া কাটাতে ‘মিনি ডার্বি’-তে যে তেড়েফুঁড়ে মানসিকতার প্রয়োজন ছিল, তার ছিটেফোঁটা খুঁজে পাওয়া গেল না ওডাফাদের খেলায়।
টিমের ভিতরে এবং বাইরে তাঁকে নিয়ে প্রবল অসন্তোষ থাকলেও, বাগানের কেনিয়ান স্ট্রাইকার এরিক মুরান্ডার তাতে বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই। ডার্বির জঘন্য পারফরম্যান্সের পরে ‘মিনি ডার্বি’-তেও উন্নতির আলো নেই। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে দু’একটা সিটার নষ্ট করলেও, বুধবারের ম্যাচে তো মহমেডানের ছোট বক্সের আশেপাশে খুঁজেই পাওয়া গেল না। একেবারে যেন মোহনবাগানের ‘অদৃশ্য’ স্ট্রাইকার! করিম অবশ্য এরিকের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, “আমার প্রত্যেক ফুটবলার অনুশীলনে দারুণ পরিশ্রম করছে। ম্যাচে গোল পাচ্ছে না, এটা ওদের দুর্ভাগ্য। চেলসিতে তোরেস তো এত টাকা পায়, ক’টা গোল করে?” করিম তো ‘দুর্ভাগ্যে’র দোহাই দিয়ে এরিককে আড়াল করতে চাইছেন। কিন্তু তা দিয়ে কি বাগানে-ট্রফির খরা কাটবে? অন্তত বুধবারের ম্যাচে করিমের দুই স্ট্রাইকারের যা হাল দেখা গেল, তাতে এ বছরও স্বপ্নপূরণের আশা নেই বললেই চলে!
ম্যাচের পরে বাগান-ড্রেসিংরুমের বিষণ্ণ মুখগুলোকে আড়াল করার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেলেন করিম। কিন্তু শাক দিয়ে কি মাছ ঢাকা যায়? মাথা নিচু করে যুবভারতীর করিডর দিয়ে একে একে বেরোচ্ছিলেন শৌভিক-প্রীতমরা। ফুটবল-জীবনের শুরুতে পরপর দু’টো ডার্বিতে অনবদ্য পারফরম্যান্স দিয়েও, চোখে-মুখে কোনও উচ্ছ্বাসের ছাপ নেই। কোনও উন্মাদনা নেই। থাকবেই বা কী ভাবে? শুধু রক্ষণের ভরসায় তো আর ম্যাচ জেতা যায় না। যে দলের প্রধান স্ট্রাইকার ওডাফা কর্নার কিক নিচ্ছেন গোল করার দায়িত্ব ভুলে, সেই দলে গোল হবে কী করে? করিম বলছিলেন, “আমরা সবাই একই নৌকার যাত্রী। কিন্তু নৌকায় প্রচুর জল ঢুকে গিয়েছে। আমাদের সেই ছিদ্রটা খুঁজতে হবে যেখান থেকে জল ঢুকেছে।”

ওডাফাকে করিমের সান্ত্বনা।
‘মিনি ডার্বি’ ড্র করে বাগানে যখন দমবন্ধ করা পরিবেশ, তখন মহমেডানে উৎসবের মেজাজ। এমনকী উচ্ছ্বাসের মাত্রা এতটাই তীব্র যে, ড্র ম্যাচে এক লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করে দিলেন সাদা-কালো কর্তারা। এতে বোধহয় অবাক হওয়ার কিছু নেই। কেন না ম্যাচের মধ্যে তো আরও চমক অপেক্ষা করছে! বুধবার যুবভারতীতে দেখা গেল, মহমেডানের দুই প্রধান কর্তা ইকবাল আমেদ ও কামারুদ্দিন রিজার্ভ বেঞ্চে বসে। অথচ দলের ম্যানেজারের নাম নেই। ফেডারেশন ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত দত্ত বললেন, “আগে থেকে নাম নথিভুক্ত করা থাকলে কোনও অসুবিধা নেই।” কিন্তু মজার ব্যাপার, টোলগেদের কোচ আবদুল আজিজ না কর্তারা, সেটা ম্যাচের পরেও বোঝা গেল না। পনেরো মিনিট অন্তর কর্তারা সাইডলাইনের ধারে ছুটে যাচ্ছেন কোচের সঙ্গে কথা বলতে। পরের মিনিটেই ফুটবলার বদল। দেখে মনে হল, কোন ফুটবলার কোথায় খেলবেন সেটাও বলে দিচ্ছেন তাঁরা। মহমেডান কোচ অবশ্য কথা বাড়াতে চাইলেন না। শুধু বললেন, “আপনাদের চোখের সামনে সব ঘটেছে। এ বার আপনারাই বিচার করে নিন।” বুধবারের টিম যে কোচের মস্তিষ্কপ্রসূত নয়, সেটা টিম-কম্বিনেশন দেখেই পরিষ্কার। আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা জোসিমার প্রথম দলে নেই। নবি খেললেন, কিন্তু পুরো ফিট নন। ইসফাক-মেহরাজ-রাকেশের মতো যে আইএমজি লিগের ফুটবলারদের খেলানো হল, তাঁদেরও ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে! ম্যাচ শেষে মহমেডান ফুটবল সচিব ইকবাল আহমেদ তো বলেই দিলেন, “কফি খেতে খেতেই টিমটা বানিয়ে ফেললাম।” তবে মহমেডান কর্তাদের ‘কোচিং’-এ ড্র ম্যাচের উৎসব আরও জমকালো হতে পারত, যদি ইনজুরি টাইমে অজয় সিংহ ফাঁকা গোল নষ্ট না করতেন!

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.