|
|
|
|
নিজেদের প্রমাণ করতে চান পেন-টোলগেরা |
‘মিনি ডার্বি’ জিততে মরিয়া করিম |
প্রীতম সাহা • কলকাতা |
দূরপাল্লার শটগুলো হয় বারপোস্টের উপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, নয় তো সাইড নেটের একেবারে গা ঘেঁষে। গোটা পাঁচেক চেষ্টার পরে যে বলটা জালে জড়াল, তাতে ধারালো ওডাফা ওকোলির সেই স্মৃতি যেন ভেসে উঠল! নাইজিরিয়ান গোলমেশিনের মুখে অবশ্য কুলুপ।
বাগান-মাঝমাঠের সিচুয়েশন প্র্যাকটিসে ‘ওয়াল’ খেলতে ব্যস্ত ডেনসন-মণীশ-কাতসুমিরা। নিখুঁত পাসিং না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ চলল করিম বেঞ্চারিফার কড়া নজরদারিতে। যেখানে দু’বারের চেয়ে তিন বার মিস পাস হলেই, কোচের বাঁশি বেজে উঠছে। বাগানের জাপানি বোমা কাতসুমি বলছিলেন, “বড় ম্যাচ জিততে পারলে নিশ্চয়ই আরও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যেত। তবে ইস্টবেঙ্গলের একটা গোল বাদ দিলে আমরা খুব খারাপ খেলিনি।” |
|
চলছে করিমের মাস্টারক্লাস। মঙ্গলবার মোহনবাগান মাঠে। |
প্র্যাকটিস শেষে ওডাফা-কাতসুমিরা ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়লেও, এরিক মুরান্ডা তখনও ফাঁকা গোলে বল মেরে যাচ্ছিলেন। ইদানীং যে ভাবে সিটার মিস করছেন, তাতে টিমের বাইরে এবং ভিতরে তিনি যে অসম্ভব চাপে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হল না। করিমের অবশ্য যুক্তি, “ইচে যখন প্রথম এসেছিল, তখন ওকে নিয়েও অনেক সমালোচনা হয়েছিল। মুরান্ডা একবার গোল পেয়ে গেলে, ওকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না।”
মহমেডানের বিরুদ্ধে খেলতে নামার চবিবশ ঘণ্টা আগে এটাই এখন বাগানের টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ। যেখানে ডার্বি-বিষণ্ণতার কালো মেঘ জমলেও, আত্মবিশ্বাসের মনোরম হাওয়াও বইছে! ফুটবলারদের মনস্তত্ত্বে যাতে কোনও বিরূপ প্রভাব না পড়ে, তার জন্য ইস্টবেঙ্গল ম্যাচের পর থেকেই ফুটবলারদের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন করিম। তা হলে কি চাপ কাটাতে প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ট্রেডমার্ক ‘ভোকাল টনিক’-ই ‘মিনি ডার্বি’-তে বাগান কোচের ‘রেসিপি’? করিম বলছিলেন, “অন্যরা কী করে দলকে মোটিভেট করতেন, আমার জানা নেই। তবে আমি ফুটবলারদের যা বলি মন থেকে বলি। তাই ডার্বিতে যে মিস পাস হয়েছে, সেগুলো নয়। বরং ওরা যে ভাল পাস-ট্যাকল-শট-মুভগুলো করেছে, সেটাই বার বার তুলে ধরছি। ডিকার একটা বিশ্বমানের গোল বাদ দিলে, আমরা যে কত ভাল খেলেছি, সেটাই বোঝাচ্ছি।”
ডার্বি থেকে মোহনবাগানের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল রক্ষণের সংগঠন। চিডি-মোগার মতো বিদেশিদের সামনে প্রীতম-শৌভিক-আইবর-রোউইলসনরা যে দাপুটে মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তাতে নির্দ্বিধায় ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পারে মোহনবাগান। কিন্তু করিমের সমস্যা হল, ইচের প্রত্যাবর্তনে বুধবার ডিফেন্সে রদবদল করতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। দুই সাইডব্যাক প্রীতম-শৌভিক খেললেও, স্টপারে রোউইলসলের পরিবর্তে খেলবেন ইচে। করিম বলছিলেন, “এটা খুব কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু বিপক্ষের শক্তি ও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের বিচারেই টিম বাছা হয়েছে।” মহমেডানের দীর্ঘকায় স্ট্রাইকার জোসিমারের কথা মাথায় রেখেই ইচেকে নামানো হচ্ছে। |
|
নবির সঙ্গে মহমেডান কোচ আজিজ। মঙ্গলবার। |
আই লিগের ইতিহাসে কখনও ডার্বির দু’দিনের মধ্যেই ‘মিনি ডার্বি’ হয়েছে কি না জানা নেই। তবে বুধবারের জমজমাট ম্যাচের উপর অনেকের ফুটবল-ভাগ্য নির্ভর করছে। এবং নিঃসন্দেহে সেই তালিকায় সবার প্রথমে আছে টোলগে ওজবের নাম। যে ভাবে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্রাইকারের খারাপ ফর্ম নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, তাতে সাদা-কালো কর্তারা ‘সেকেন্ড উইন্ডো’-তে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করে দিয়েছেন। বুধবারের ‘মিনি ডার্বি’ মূলত নিজেদের প্রমাণ করার লড়াই পেন-টোলগেদের। মোহনবাগানে আবার একই চিন্তা এরিক মুরান্ডাকে নিয়ে। যদিও কেনিয়ান স্ট্রাইকারকে ছেড়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি করিমের দলে।
মহমেডান কোচ আবদুল আজিজের কাছেও বুধবারের ম্যাচ অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। দলে তাঁর ‘রোটেশন পলিসি’ নিয়ে যেমন ক্ষোভে ফুটছেন ফুটবলাররা, তেমনই বারবাব ফুটবলারদের সঙ্গে বিতর্কে জড়ানোয় বিরক্ত মহমেডান কর্তারা। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক সাদা-কালো ফুটবলার বলছিলেন, “প্রত্যেক দলে নির্দিষ্ট এগারো জনের একটা সেট টিম থাকে। চোট-আঘাত লাগলে আলাদা কথা। কিন্তু আমাদের এখনও টিমটাই তৈরি হল না। বোঝাপড়া কবে হবে, কে জানে?” করিমকে নিয়ে এতটা তিক্ততা তৈরি না হলেও, ডার্বি-হারের প্রভাব কি একেবারেই নেই বাগানের অন্দরমহলে? পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া কঠিন।
বহু অস্বস্তির মধ্যে করিম আর আজিজের জন্য দু’টো সুখবর আছে। মহমেডানে শুরু থেকে খেলবেন রহিম নবি। বাগানে মরসুমে প্রথম বার এক সঙ্গে নামবেন চার বিদেশি। করিম বলছিলেন, “টোলগে এখন উইং দিয়ে আক্রমণে উঠছে। এটা খুব বিপজ্জনক। কিন্তু ওদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র পেন। আমাদের মাঝমাঠে আরও সতর্ক থাকতে হবে।” বিপক্ষ নিয়ে আবার সাদা-কালো কোচের মূল্যায়ন, “কাতসুমির দারুণ গতি। আর ওডাফাকে বড় ম্যাচে দেখলাম আগের চেয়ে অনেক ফিট। যে করেই হোক ওদের উইং প্লে আটকাতে হবে।” কিন্তু আজিজ ম্যাচ জেতার জন্য যাঁদের নামাতে চাইছেন তাদের কি নামাতে পারবেন? মহমেজান ফুটবল সচিব ইকবাল আমেদের একটি মন্তব্যের পর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইকবাল এ দিন অনুশীলনের পর বলেছেন, “কোচ একা নয় আমরা সবাই মিলে বসে ম্যাচের দিন দল গড়ব।”
দুই কোচের ‘হোমওয়ার্ক’-এ কোনও ত্রুটি নেই। এখন শুধু দেখার, অস্তিত্ব রক্ষার মহাযুদ্ধে শেষ পর্যন্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস কে নিতে পারেন!
|
বুধবারে আই লিগ
মোহনবাগান: মহমেডান (যুবভারতী, ৫-০০)।
|
ছবি: উৎপল সরকার। |
|
|
|
|
|