দুর্ঘটনাবশতই মানকুণ্ডুর আবাসনে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল বলে ধৃত মহিলাকে জেরা করার পরে জানালেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা। পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ বিচার করেও এমনটাই মনে করছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার ধৃত সুনন্দা চৌধুরীকে চন্দননগরের এসিজেএম সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে ১৪ দিন জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পুলিশের ধারণা, নিজের একরত্তি সন্তানের মর্মান্তিক পরিণতিতে বাড়িতে কী জবাব দেবেন, সেই ভয়ে সুনন্দা ডাকাতির গল্প সাজিয়ে ফেলেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, আজ শুক্রবার চন্দননগর আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেবেন ওই মহিলা। হুগলির মানকুণ্ডু স্টেশনের কাছে চারতলার একটি ফ্ল্যাটে স্বামী অঞ্জন এবং শাশুড়ি তৃপ্তিদেবীর সঙ্গে থাকেন সুনন্দা। গত ১৩ নভেম্বর সকালে রেলকর্মী অঞ্জনবাবু কাজে বেরিয়ে যান। তৃপ্তিদেবী শেওড়াফুলিতে যান ব্যাঙ্কের কাজে। ফলে, ন’মাসের ছেলে আর্যকে নিয়ে সুনন্দা ফ্ল্যাটে একাই ছিলেন। শাশুড়ি ফিরে এসে ভিতর থেকে সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীদের খবর দেন। দরজার লক ভেঙে বাথরুমের সামনে জল ভর্তি গামলায় আর্যের দেহ মেলে। সুনন্দা লেপ চাপা অবস্থায় পড়েছিলেন। দেখা যায়, আলমারি খোলা। জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড করে ছড়ানো। সুনন্দা পুলিশের কাছে দাবি করেছিলেন, ডাকাতি করতে এসে দুষ্কৃতীরা ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে। সুনন্দার দাবি শুনে তদন্তকারীরা ধন্দে পড়েন। তবে ডাকাতির তত্ত্ব তাঁরা উড়িয়ে দেন। ময়না তদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। সুনন্দাকে টানা জেরা করে পুলিশ নিশ্চিত হয়, ঘটনার সময়ে বাইরে থেকে কেউ ভিতরে ঢোকেনি। এর পরেই গত ২৫ তারিখে সুনন্দাকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্তকারী এক অফিসার বলেন, জেরায় ভেঙে পড়ে মহিলা বলেন যে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। সে সময়েই কোনও ভাবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে শিশুটি মারা যায়। ঘুম ভেঙে উঠে অনেক চেষ্টাতেও ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি। এর পরেই, ভয়ে ডাকাতির গল্প ফাঁদেন।
পুলিশকর্তারা অবশ্য মহিলার দাবির সত্যাসত্য তদন্ত করে দেখছিলেন। কেননা, অন্য কয়েকটি সম্ভাবনার কথাও তাঁরা উড়িয়ে দিচ্ছিলেন না। এ দিন জেলা পুলিশের এক অফিসার অবশ্য বলেন, “আমরা বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখেছি। কিন্তু সেগুলির সারবত্তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। মনে হচ্ছে, নেহাতই দুর্ভাগ্যবশত চাপ পড়ে শিশুসন্তানটি মারা গিয়েছে।”
|