|
|
|
|
ধর্মের কলের বাতাস কেড়ে কঠোর-উদার পথে সিপিএম |
সন্দীপন চক্রবর্তী • পালাক্কাড |
চাইলে আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা কি আবার হজে যেতে পারবেন?
কেরলে থাকলে পারবেন না!
সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় কি সিপিএমে ফিরতে পারবেন?
কেরলে থাকলে পারবেন!
একই সঙ্গে কঠোর এবং উদার হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে যে দু’টি সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে কেরল সিপিএমের প্লেনাম (বিশেষ সম্মেলন), পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে বিচার করলে তার অর্থ এই রকমই দাঁড়ায়!
যে খসড়া দলিল নিয়ে প্লেনামে চুলচেরা আলোচনা চলছে, সেখানে দলের কর্মীদের ধর্মীয় কার্যকলাপে অংশগ্রহণের উপরে কড়া নিষেধাজ্ঞা চেপেছে। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীদের জন্য প্রকাশ্য ধর্মাচরণের স্বাধীনতা কোনও কালেই ছিল না। কিন্তু যেটুকু ফাঁক ছিল, তা-ও এ বার বন্ধ করার তোড়জোড় চলছে প্রকাশ কারাটের জন্মভূমিতে। আবার যে সব নেতা-কর্মীর সঙ্গে দলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে, তাঁরা ইতিমধ্যে প্রতিপক্ষ শিবিরে যোগদান করে না-থাকলে পরিস্থিতি বিচার করে তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে দলিলে। এর জন্য উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে দলের নেতৃত্বকেই। সিপিএমের মতো দল যে হেতু অভিন্ন নীতিতে চলার কথা বলে, তাই এক এক রাজ্যে এক এক রকম নিয়ম হতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের অন্দরেই। প্রশ্ন উঠছে, পিনারাই বিজয়নদের পথে বিমান বসুদেরও কি চলতে বলবেন কারাটেরা?
এমন সিদ্ধান্ত দেখে বাংলার যে দুই প্রবীণ বাম নেতার দৃষ্টান্ত মনে আসতে বাধ্য, তাঁরা অবশ্য তেমন আলোড়িত নন। রেজ্জাক পরিস্থিতির উপরে নজর রাখার কথা বলছেন। আর ‘বেদনাহত’ সোমনাথবাবু আশা হারিয়েছেন।
কেরল প্লেনামের দলিল বলছে, সিপিএমের নেতা-কর্মীদের এখন থেকে কোনও ভাবেই ধর্মীয় আচরণ চলবে না। হজ কমিটি বা কোনও মন্দিরের অছি পরিষদের মতো কমিটিতে তাঁরা থাকতে পারেন। কিন্তু সরাসরি দেব-দর্শন বা ধর্মাচরণ একেবারেই না! বাংলায় অতীতে এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে সুভাষ চক্রবর্তীর তারাপীঠে পুজো দেওয়া বা রেজ্জাক মোল্লার হজে যাওয়ার মতো হাতেগোনা ক্ষেত্রে। কিন্তু কেরলে গির্জায়-যাওয়া নেতার সংখ্যা বিস্তর। ধর্মাচরণের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলেই সাম্প্রতিক কালে দল ছেড়েছেন প্রাক্তন সাংসদ এ পি আবদুল্লাকুট্টি বা কে এস মনোজ। সিপিএমের একাংশের আশঙ্কা, প্লেনামের অবস্থানই চূড়ান্ত হলে বিশেষত সংখ্যালঘুদের উপরে প্রভাব পড়বে। আরও অনেক মনোজ দল ছাড়তে চাইবেন! পলিটবু্যুরোর সদস্য কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন অবশ্য বাখ্যা দিচ্ছেন, “কোনও নতুন সদস্য এক বার মন্দিরে গেলেই তাঁকে বহিষ্কার করা হবে না। কিন্তু দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদে বিশ্বাসী দলে যে ধর্মবিশ্বাস চলে না, এটা সকলকে বুঝতে হবে!” বর্তমান পলিটব্যুরোর একমাত্র সংখ্যালঘু সদস্য এম এ বেবির মত, সিপিএমের বিভিন্ন কমিটির সামনের সারির কর্মীদের ব্যক্তিগত ভাবেও ধর্মাচরণে কখনও উৎসাহ দেওয়া হতো না। সেই অর্থে বিরাট নতুন কিছু হচ্ছে না। বিষয়টাকে বিধিবদ্ধ করা হচ্ছে।
এই ব্যাপারে রেজ্জাকের প্রতিক্রিয়া, “ওরা (কেরল পার্টি) করুক না! তার পর দেখা যাবে!” তবে বর্ষীয়ান এই সিপিএম বিধায়কের যুক্তি, “দলের কোনও বইয়ে ব্যক্তিগত ভাবে কাউকে ধর্মাচরণে বাধা দেওয়ার কথা লেখা নেই। দলীয় ভাবে করা যায় না। কিন্তু সামাজিক বা ব্যক্তিগত আচরণ আটকানোর কোনও নিয়ম দলে নেই!”
রেজ্জাকের এই দাবির সঙ্গে পুরোপুরি এক মত নন পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন। কেরল পার্টির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তাঁর মন্তব্য, “কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ব্যক্তিগত জীবনচর্চায় ধর্মের সংশ্রব এড়িয়ে চলবেন, এটাই প্রত্যাশিত।” তা হলে কি আলিমুদ্দিনও কেরলের পথেই হেঁটে রেজ্জাকদের পথে কাঁটা দেবে? দলে আলোচনা না-করে এখনই এই প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি নন নিরুপমবাবু।
আর দলছাড়াদের দলে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়ে বাংলা সিপিএমের বক্তব্য কী?
কেরলের এই উদ্যোগকেও স্বাগত জানাচ্ছেন নিরুপমবাবু। কিন্তু কেরল পার্টির দলিল যে ভাবে দলীয় নেতৃত্বকেই এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে বলছে, আলিমুদ্দিনের তরফে তেমন কিছু করার ইঙ্গিত তিনি দিচ্ছেন না। নিরুপমবাবুর কথায়, “আগে দল ছেড়ে যাওয়া অনেকেই ফের যোগাযোগ
করছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে যদি গুরুতর অভিযোগ না-থাকে এবং তাঁরা যদি দলে ফিরতে চান, তা হলে বিবেচনা করা যেতেই পারে।” সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সদস্যের মতে, দলের যা অবস্থা তাতে মতাদর্শগত অবস্থান দৃঢ় করতে পুরনো লোকেদের ফেরানো দরকার। কেরল সেই পথেই হাঁটছে। আলিমুদ্দিনেরও উচিত তা অনুসরণ করা।
সোমনাথবাবু আগেই জানিয়েছেন, তিনি আবেদন করতে আগ্রহী নন। কেরল পার্টির দলিলের কথা শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “প্লেনামে ওঁরা কী করবেন, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তবে দুঃখ হয়, বহিষ্কার করার আগে আমায় নোটিস বা শো-কজের চিঠি পর্যন্ত দেননি!” দল ‘ভুল’ শোধরাবে, সে আশাও রাখেন না জানিয়ে বৃহস্পতিবার বোলপুরের বাড়ি থেকে তিনি বলেন, “লোকসভা ভোট আসছে। বিজেপি-র মতো দল আর কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে যত হইচই! খারাপ লাগে, জাতীয় রাজনীতিতে বামপন্থীরা কোথায়!”
|
পুরনো খবর: কেরলকে দায়িত্ব, বাংলাকে বার্তা কারাটের |
|
|
|
|
|