|
|
|
|
কতটা বদলেছে অর্থনীতির হাল, রিপোর্ট মিলবে আজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
পরীক্ষা খারাপ হলে ফল বেরনোর আগের দিন যেমন দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করতে হয়, মনমোহন সিংহ-পি চিদম্বরমের অবস্থাটা আজ ঠিক সেই রকম!
দেশের অর্থনীতির রেখচিত্র উঠছে না কি এখনও করুণ দশাতেই রয়েছে, তা জানা যাবে আগামিকাল। চলতি আর্থিক বছরে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশে পৌঁছবে বলে আশা করছে মনমোহন সিংহের সরকার। কিন্তু এপ্রিল থেকে জুন অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৪.৪ শতাংশ। এখন চিদম্বরমের আশা, পরের তিন মাসে, অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে বৃদ্ধির হার ভাল হবে। এই তিন মাসে বৃদ্ধির হার কত ছিল, তা আগামিকাল জানাবে পরিসংখ্যান মন্ত্রক। কিন্তু সরকারি সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, তাতে ভাল ফল হওয়ার আশা খুব একটা নেই। বৃদ্ধির হার খুব বেশি হলে ৪.৬ থেকে ৪.৭ শতাংশের মধ্যেই থাকবে বলে মনে করছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা।
এই ইঙ্গিত পেয়েছেন ইউপিএ সরকারের কর্তারাও। আর তাতেই তাঁদের কপালে নতুন করে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কারণ অর্থনীতির ওঠানামার উপরে নির্ভর করে রয়েছে ইউপিএ-র রাজনীতির রেখচিত্র। তার উপর যদি দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকেও অর্থনীতির বেহাল দশা ফুটে ওঠে, তা হলে বিরোধীদের আক্রমণের সুর যে আরও চড়া হবে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন নেতারা। এমনিতেই প্রচারে বেরিয়ে নরেন্দ্র মোদী অর্থনীতির খারাপ দশার জন্য মনমোহন-সরকারকে রোজ তুলোধনা করছেন। রীতিমতো কটাক্ষের সুরে মোদী বলছেন, “দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন অর্থনীতিবিদ। গোটা দুনিয়ায় তাঁর নামডাক। কিন্তু নিজের দেশের অর্থনীতিই তিনি সামলাতে পারছেন না!” আমজনতার ক্ষোভ উসকে দিতে পেঁয়াজের দাম থেকে শুরু করে সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ তুলে বিরোধীরা প্রতিদিনই নিশানা করছে সরকারকে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন আসছে। সেখানেও এ নিয়ে সরকারকে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়তে হবে। সেই কারণেই অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর রিপোর্ট কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে এতটা জরুরি। তাঁদের যুক্তি, এমনিতেই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পেঁয়াজের দাম নিয়ে দলের প্রার্থীদের কার্যত নাকের জলে চোখের জলে হতে হয়েছে। কেন পেঁয়াজ ৮০ টাকা কেজি, কেন অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া, তা নিয়ে বিরোধীদের তোপের মুখে কার্যত নিরুত্তর হয়েই থাকতে হয়েছে কংগ্রেস প্রার্থীদের। এর মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের মুখে যদি দেখা যায়, অর্থনীতির হালও সুবিধের নয়, তা হলে দলের বিপদ আরও বাড়বে।
দু’সপ্তাহ আগেই চিদম্বরম দাবি করেছেন, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছে না সরকার। তাঁর দাবি, বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ যে ৫.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধির পূর্বাভাস করেছেন, তা বাস্তবায়িত হতে পারে বলেও আশা চিদম্বরমের। অর্থমন্ত্রী মনে করছেন, বিনিয়োগ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বিশেষ কমিটি গড়ে থমকে থাকা বড় প্রকল্পগুলিকে দ্রুত ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। তার ফলে কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চালু হয়েছে। কারখানা তৈরি হচ্ছে। যন্ত্রপাতি বসছে। আর্থিক বৃদ্ধির হারে যার প্রতিফলন দেখা যাবে।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের একাংশ অবশ্য এতটা আশাবাদী নন। তাঁদের বক্তব্য, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার ফল মিলতে আরও সময় লাগবে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চে বৃদ্ধির হার উপরের দিকে উঠতে শুরু করবে বলে তাঁদের আশা। কিন্তু তত দিনে লোকসভা নির্বাচন চলে আসবে। অর্থনীতির হাল শোধরালেও ভোটের বাক্সে তার সুফল তুলতে পারবে না কংগ্রেস। ফলে অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা যা-ই বলুন, তাতে বিশেষ ভরসা পাচ্ছেন না কংগ্রেস নেতত্ব।
তবে অর্থ মন্ত্রকের একাংশের যুক্তি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদে রঘুরাম রাজন আসার পরে টাকা স্থিতিশীল হয়েছে। ডলারের তুলনায় টাকার দাম বাড়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় পণ্য তুলনায় সস্তা হয়েছে। ফলে রফতানি বেড়েছে। যার হাত ধরে কমছে চলতি খাতে লেনদেনের ঘাটতি নিয়ে সরকারের দুশ্চিন্তা। কিন্তু অর্থনীতির আসল কর্মকাণ্ড কিছুই শুরু হয়নি। ছাড়পত্র মেলার পর পরিকাঠামো প্রকল্পগুলিতে কাজ শুরু হবে। এ বার ভাল বৃষ্টি হয়েছে বলে ফসলও ভাল উঠবে। কৃষকদের আয় বাড়লে গ্রামের মানুষের চাহিদা বাড়বে। তার পরেই বৃদ্ধির হার বাড়তে শুরু করবে। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের মুখে শিল্প সংস্থাগুলি নতুন বিনিয়োগে কতটা আগ্রহ দেখাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে সরকারের কপালে ভাঁজ কমার কোনও লক্ষণই নেই!
|
|
|
|
|
|