তেজপালের আর্জি খারিজ গোয়ায়
জারি হল পরোয়ানা, আজ হাজিরার বার্তা
জ দিল্লির সঙ্গে মঞ্চটা ভাগ করে নিতে হয়েছে। অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটলে কাল কিন্তু তেজপাল-নাটকের সবটাই গোয়ায়। বৃহস্পতিবার দিনভর কী হয়-কী হয় উত্তেজনা নিয়ে ঘর-বার করে কেটেছে। গোয়া এ দিন ঘুমোতে গেল আর একটা নাটকীয় সকালের অপেক্ষা করতে করতে।
বৃহস্পতির সকালটা শুরু হয়েছিল দিল্লিতে তহেলকার কার্যনির্বাহী সম্পাদক সোমা চৌধুরীর ইস্তফা দিয়ে। তরুণী সাংবাদিকের যৌন নিগ্রহের ঘটনায় তেজপালকে বাঁচানোর চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে সোমার বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত আজ কাকভোরে সোমা পদত্যাগ করলেন। ও দিকে আজ বিকেল তিনটের মধ্যে তরুণ তেজপালকে হাজিরা দিতে সমন পাঠিয়েছিল গোয়া পুলিশ। তেজপাল আসবেন কি আসবেন না, এলে গ্রেফতার হবেন কি হবেন না এই ধুকপুকুনি নিয়েই দুপুর গড়াল।
তেজপাল এলেন না, শনিবার পর্যন্ত সময় চাইলেন। দাবি করলেন, তিনি সবেমাত্র গত কাল রাতেই জেনেছেন, তাঁকে গোয়া পুলিশ ডেকেছে। দু’টো দিন সময় দেওয়া হোক। জল্পনা শুরু হল, গোয়া পুলিশ কি এতে রাজি হবে? যদি হয়, তা হলে কি গোয়ায় আসার আগেই শুক্রবার দিল্লি হাইকোর্টে আগাম জামিন পেয়ে যাবেন তেজপাল? বিকেল পাঁচটায় সাংবাদিক সম্মেলন করলেন ডিআইজি ও পি মিশ্র। পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, গোয়া পুলিশ তেজপালের আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না। অভিযোগের গুরুত্ব বিচার করে তেজপালকে বাড়তি সময় দিতে রাজি নন তদন্তকারী অফিসার।
তা হলে কী করবেন আপনারা? মিশ্র উত্তর দিলেন, “পরবর্তী পদক্ষেপ যা করার, তাই করব। তদন্তের প্রতিটি ধাপ আমি আপনাদের জানাতে পারি না।” তার মানে? নিমেষে গুজগুজ শুরু হয়ে গেল। ইতিমধ্যেই দিল্লি থেকে খবর এসে গিয়েছে যে, তেজপাল দিল্লির আদালতে আগাম জামিনের আবেদনটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। অতএব সাংবাদিকরা এ বার স্পষ্ট উত্তর চান, পুলিশ কি তেজপালের নামে জামিন-অযোগ্য পরোয়ানা জারি করতে চলেছে? মিশ্র সতর্ক ভাবে বললেন, “পরবর্তী পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে সেটাই হওয়ার কথা। তদন্তকারী অফিসার যুক্তি এবং আইনি প্রোটোকল মেনেই কাজ করবেন।”
পরে গোয়া পুলিশের অন্য একটি সূত্র জানালেন, পুলিশর তরুণের নামে জামিন-অযোগ্য পরোয়ানার আর্জি জানিয়েছে। প্রথম শ্রেণির বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সারিকা ফলদেশাই পরোয়ানা জারি করেও দিয়েছেন। অন্য দিকে মিশ্রর সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হওয়ার বেশ কিছু ক্ষণ পরে ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসে তরুণ তেজপালের পক্ষ থেকে একটি ফ্যাক্স-বার্তা এল। সেখানে তরুণ প্রতিশ্রুতি দিলেন, আগামী কাল, শুক্রবারই তিনি গোয়ায় এসে হাজিরা দিচ্ছেন।
অর্থাৎ আর ধন্দ রইল না। শুক্রবারের নাটমঞ্চ গোয়া এবং গোয়া।
মাত্র হপ্তা দুয়েকের মধ্যে শুধু আকাশ-পাতাল বদলে গিয়েছে ছবিটা। ক’দিন আগে এখানেই বসেছিল তহেলকা-র থিঙ্ক ফেস্টিভালের আসর। তহেলকা-র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তরুণই ছিলেন তার আহ্বায়ক। আর অভিযোগকারিণী সাংবাদিক ছিলেন ওই ফেস্টিভালের অন্যতম অতিথি, রবার্ট ডি নিরোর আপ্যায়নের দায়িত্বে। ফেস্টিভাল চলাকালীনই পরপর দু’দিন হোটেলের লিফ্টে তেজপাল তাঁকে নিগ্রহ করেন বলে তরুণীর অভিযোগ। সেই ঘটনার পর গত কাল, বুধবার বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এসে নিজের বয়ান রেকর্ড করেছেন নিগৃহীতা তরুণী। আজ তিনি ফিরে গিয়েছেন বলে গোয়া পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। এখন শুধু তেজপালের পদার্পণের অপেক্ষা।
যদি আসেন-যদি আসেন, এই উত্তেজনায় আজ সারা দিন ডোনা পাওলা ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসের সামনে উৎসাহী জনতার আনাগোনা লেগে ছিল। অফিসটার একটু দূরেই একটা জেটি আছে। ‘এক দুজে কে লিয়ে’ বা ‘সিংহম’-এর মতো ছবির কল্যাণে ওই জেটি পর্যটকদের কাছে যথেষ্ট পরিচিত। আজ সেই জেটি-দশর্করাও যে ভাবে পুলিশি দফতরে ঢুঁ মেরে যাচ্ছিলেন, তাতে মনে হতে পারে, অচিরে এই ডোনা পাওলাও একটা পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে চলেছে। বাস-ভর্তি করে পর্যটক এসে নামছেন আর জিজ্ঞেস করছেন, “তেজপাল এলেন? জেরা চলছে নাকি?”
দুপুর দেড়টা নাগাদই খবর পৌঁছে যায়, তেজপাল আসছেন না। শনিবার অবধি সময় চাইছেন। একটু পরে লিখিত বিবৃতি দেবেন। তা সত্ত্বেও অত্যুৎসাহীরা কেউ কেউ তিনটে অবধি অপেক্ষা করতে থাকেন। বাকিদের কেউ গেলেন গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে, যেখানে নিগ্রহের ঘটনাটা ঘটেছিল বলে অভিযোগ। সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজও পুলিশ পেয়েছে। তাদের দাবি, তাতে দেখা গিয়েছে, লিফট থেকে বেরোনোর সময় তরুণী নিজের জামাকাপড় ঠিক করছেন, দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছেন। পিছনে তেজপাল।
কেউ আবার চলে গেলেন গোয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের দিকে, থিঙ্ক ফেস্টিভালের সময় ওই তরুণী যেখানে থাকছিলেন, সেটা দেখতে। জনতার বাকি অংশ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, দিল্লিতে আজ যা ঘটছে, তার আলোচনায়।
বাস্তবিক, এ দিন গোটা সময়টাই নিউজ চ্যানেলগুলোয় তেজপাল-কাণ্ড ছাড়া অন্য খবর ছিল না বললেই চলে। সাত সকালে ইস্তফা দিয়ে ই-মেল করেন সোমা। তার পর বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ বিজেপি সমর্থকরা দিল্লিতে সোমার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ শুরু করে দেন। স্থানীয় বিজেপি নেতা বিজয় জলি আবার হাতে আলকাতরার টিন নিয়ে সোমার নেমপ্লেটের উপরে কালি লেপে দেন। কালো রং দেওয়া হয় সোমার বাড়ি ঢোকার পথেও। তেজপাল প্রশ্নে প্রথম থেকেই সব চেয়ে বেশি সরব হয়েছে বিজেপি। এর পিছনে তেজপালের উপর তাদের পুরনো রাগ, অর্থাৎ সেই বঙ্গারু লক্ষ্মণ কাণ্ডের জের রয়েছে বলেও অনেকের মত। গত কাল তেজপালকে আড়াল করছেন বলে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সুষমা স্বরাজ টুইটে তোপও দেগেছিলেন। এ দিন সেই সুষমাকেই আবার নিজের দলের অত্যুৎসাহী কর্মীদের কাণ্ডকারখানার নিন্দা করতে হয়েছে। সোমা চৌধুরীর বাড়িতে আজ বিজেপি যা করেছে, তাকে সমর্থন করছেন না বলে জানিয়েছেন সুষমা।
সোমার বিপদ তাতে শেষ হয়নি। আজ তাঁকে জাতীয় মহিলা কমিশন জেরা করে। ঘটনাটি লঘু করার চেষ্টা, তেজপালের তরফে সাময়িক ভাবে সরে দাঁড়ানোর প্রস্তাবকে যথেষ্ট কড়া পদক্ষেপ বলে সাফাই দেওয়া, নিগৃহীতার চরিত্রহননের চেষ্টা একাধিক অভিযোগ রয়েছে সোমার বিরুদ্ধে। সোমার কাছে ওই তরুণী নিজের যে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন, তাতে সোমার বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ স্পষ্ট। সোমা এ দিন কমিশনের সামনে আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করলেও কমিশন তাতে সন্তুষ্ট নয় বলেই খবর।
অন্য দিকে, পুলিশকে এড়াতে তেজপালের সব চেষ্টাও আপাত ভাবে ব্যর্থ। কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, কাল গোয়ার আদালতে জামিনের আবেদন করতে পারেন তিনি। তেজপালের আইনজীবী দিল্লিতে তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, “যে আদালতে যে প্রতিকার চাওয়া দরকার, সেখানেই চাওয়া হবে।” তবে এ দিন গোয়ায় উপস্থিত তেজপালের আইনজীবীদের প্রশ্ন করা হলে তাঁরা এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তরুণের ফ্যাক্স-বার্তা যখন তাঁরা নিয়ে এলেন, তত ক্ষণে সন্ধে হয়ে গিয়েছে। তদন্তকারী অফিসার বাড়ি চলে গিয়েছেন।
অতএব অপেক্ষা। কাল নাটকের পরের অঙ্ক। সবার চোখ গোয়ায়।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.