নারকেলডাঙায় ব্যবসায়ীর উপরে গুলি চালানোর ঘটনার পিছনে আছে এলাকায় দাপট বজায় রাখার দ্বন্দ্ব। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই জানিয়েছে পুলিশ। ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সেলিম হোসেন কিংবা তার দলবলের কাউকেই এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে নারকেলডাঙা মেন রোডে সুরিন্দর পাল সিংহ নামে এক ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে সেলিমের বিরুদ্ধে। গুলি সুরিন্দরের বাঁ পায়ের উরু ভেদ করে বেরিয়ে যায়। সুরিন্দর এখন হাসপাতালে ভর্তি।
পুলিশ জানায়, নারকেলডাঙা নর্থ রোডের বাসিন্দা সেলিম দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে তোলাবাজি-সহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সুরিন্দর এবং তাঁর কয়েক জন সঙ্গীর বিরুদ্ধেও ওই এলাকায় হাঙ্গামার অভিযোগ আছে। তবে পুলিশ জানায়, খাতায়-কলমে এখনও সুরিন্দরদের বিরুদ্ধে তোলাবাজির মতো গুরুতর অপরাধের অভিযোগ নেই।
লালবাজার সূত্রের খবর, ওই এলাকায় সুরিন্দর ডাকাবুকো বলেই পরিচিত। সুরিন্দর আরএসপি-র যুব সংগঠনের নারকেলডাঙা আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক। সেলিমের দাপট কমাতে এলাকায় পাল্টা দাপট বিস্তার শুরু করেন সুরিন্দরেরা। পুলিশ জানায়, এলাকায় দাপট ও পাল্টা দাপট কায়েমের জন্য দু’পক্ষের প্রায়শই গোলমাল হয়। তা নিয়ে পুলিশে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগও হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে সেলিম নারকেলডাঙার গরু-ছাগলের হাট থেকে তোলা তুলত। ইদানীং বস্তি এলাকায় বহুতল নির্মাণ শুরু হওয়ায় সেখান থেকেও টাকা আদায়ের হুমকি দিচ্ছিল। তার ঠিকাদারি ও ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের ব্যবসা আছে। হামলার পিছনে নির্মাণ ব্যবসা সংক্রান্ত গোলমাল আছে কি না, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এলাকার ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, সুরিন্দরের দাপটে ইদানীং নারকেলডাঙা মেন রোডের একাংশে সেলিমের দাপট কমেছিল। তার জেরেই এই হামলা। একই কথা বলছে বিরোধী দলগুলিও। আরএসপি-র যুব সংগঠনের নারকেলডাঙা আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি প্রেমনাথ ঠাকুরের অভিযোগ, “কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ ও তৃণমূল নেতা স্বপন সমাদ্দারের ছত্রছায়ায় রয়েছে সেলিম।” অভিযোগ অস্বীকার করে স্বপনবাবু বলেন, “সেলিমকে চিনি না। ও আমার ওয়ার্ডেও থাকে না। তবে সেলিম দাগি দুষ্কৃতী, জানি।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “সুরিন্দরও সমাজবিরোধী। ওর দলে প্রেমনাথ ঠাকুর, রবিন সিংহ-সহ আরও কয়েক জন আছে। ওদের বিরুদ্ধে পুলিশে নানা অভিযোগও জমা পড়েছে।” পুলিশে অভিযোগ থাকার কথা স্বীকার করেছেন প্রেমনাথ। তিনি বলেন, “সেলিমরা আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করত। সব ক’টাতেই জামিন পেয়েছি আমরা।”
পুলিশ জানায়, ঘটনার পর থেকেই সেলিম এলাকা ছাড়া। তার খোঁজ চলছে। নারকেলডাঙা থানার সঙ্গে লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখাও তদন্তে নেমেছে। লালবাজারের একটি সূত্রের খবর, পুলিশের একাংশের সঙ্গে সেলিমের যোগাযোগ আছে। তাই নানা অপরাধ করেও গ্রেফতারি এড়াতে পারছে সে। |