এক যুবককে ঘিরে ধরে গুলি চালাচ্ছে এক দল দুষ্কৃতী। গুলিবিদ্ধ ওই যুবক রক্তাক্ত অবস্থাতেই পাল্টা তাড়া করছেন ওই দুষ্কৃতীদের। সিনেমার ‘অ্যাকশন’ দৃশ্য নয়, মঙ্গলবার সকালে খাস কলকাতার নারকেলডাঙা মেন রোডে ঘটতে দেখা গেল এই ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ যুবকের নাম সুরিন্দর পালসিংহ। তিনি ওই এলাকারই বাসিন্দা। দুষ্কৃতীদের ছোড়া একটি গুলি তাঁর বাঁ পায়ের উরু ভেদ করে বেরিয়ে গিয়েছে। ঘটনার পরে প্রতিবেশীরাই সুরিন্দরকে এনআরএসে ভর্তি করান। তবে রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কী হয়েছিল এ দিন?
হাসপাতালে শয্যায় সুরিন্দর জানান, প্রতি দিনের মতোই সওয়া সাতটা নাগাদ তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে মেন রোডে দাঁড়ানো স্কুলগাড়িতে ছেলেমেয়েদের তুলতে গিয়েছিলেন। স্কুলগাড়ি চলে যাওয়ার পরে বাড়ি ফেরার সময়ে দেখেন, ফুলবাগানের দিক থেকে তিন যুবক তাঁর দিকে ছুটে আসছে। প্রত্যেকের হাতেই রিভলভার। সুরিন্দর বলেন, “শুধু ওই তিন জনই নয়, রাজাবাজারের দিকে দাঁড়িয়ে ছিল আরও তিন জন। ওদের মধ্যেই কেউ আমার উপর গুলি চালায়। একটি গুলি পায়ে এসে লাগে।” |
গুলিবিদ্ধ হয়েও সাহস হারাননি সুরিন্দর। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অর্জুন ঠাকুর বলেন, “গুলির শব্দ শুনে বেরিয়ে দেখি, ছ’জন লোক ছুটছে। তাদের পিছনে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ছুটছে সুরিন্দর। পা দিয়ে রক্ত ঝরছে। সুরিন্দর বলছিল, ‘হিম্মত হ্যায় তো সামনে আ।’ এক সময়ে আর না পেরে ফুটপাথে বসে পড়েন সুরিন্দর। আমি ছুটে গিয়ে লোক ডাকতে থাকি।” স্থানীয় বাসিন্দা নন্দকিশোর ঠাকুর বলেন, “অর্জুনের চিত্কার শুনে এসে দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে রয়েছেন সুরিন্দর। তত ক্ষণে আরও অনেকে আসেন। তার পরেই সুরিন্দরকে এনআরএসে নিয়ে যাওয়া হয়।”
অবশ্য সুরিন্দরের দাবি, যারা গুলি চালিয়েছে, তাদের তিনি চিনতে পেরেছেন। তাঁর অভিযোগ, এদের একজনের নাম সেলিম। তিনি বলেন, “মোট তিন রাউন্ড গুলি চলে। তবে সেলিমের চালানো গুলিই পায়ে লাগে।” এ দিন লালবাজারে ডিসি (ডিডি-২) সুমনজিত্ রায় বলেন, “সেলিমের নামে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। সেলিম ও তার সঙ্গীদের ধরার চেষ্টা চলছে।” পুলিশ জানিয়েছে, সুরিন্দর তিন রাউন্ড গুলি চলার কথা বললেও ঘটনাস্থল থেকে একটি খালি কার্তুজ মিলেছে। তবে সুরিন্দরের নামে কোনও অপরাধের রেকর্ড নেই বলেও জানান সুমনজিত্বাবু।
স্থানীয়রা জানান, সুরিন্দরদের পরিবহণের পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। নারকেলডাঙার বাড়িতে স্ত্রী, ছ’বছরের মেয়ে ও এগারো বছরের ছেলেকে নিয়ে থাকেন তিনি। ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিও করেন। সুরিন্দর জানিয়েছেন, তিনি আরএসপি যুব সংগঠনের নারকেলডাঙা আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক।
কেন এই হামলা?
পুলিশ সূত্রে খবর, সেলিম ওই এলাকায় নানা অসামাজিক কাজে যুক্ত। তোলাবাজি, এলাকা দখল ও চোলাই মদের ব্যবসার মতো দুষ্কর্মের সঙ্গে আগেই তার নাম জড়িয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে সেলিমকে আগে কয়েক বার গ্রেফতারও করা হয়েছিল। তবে এ দিনের ঘটনার পর থেকে সে ফেরার।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, সেলিমের দলবল এলাকায় দীর্ঘ দিন সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে রাখত। পরিস্থিতি এতটাই হাতের বাইরে চলে যায় যে, এলাকাবাসীরা ২০০৯-এ সেলিম ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। পরেও তাঁরা কয়েক দফায় সেলিমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরেও ফের একই অভিযোগ জানানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা এলাকার আরএসপি নেতা প্রেমনাথ ঠাকুর বলেন, “এত অভিযোগ পেয়েও সেলিমের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। তবে ডাকাবুকো সুরিন্দর ওই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তাই তাঁকে মারার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা।” একই দাবি সুরিন্দরের স্ত্রী মঞ্জিন্দর কৌরেরও। তিনি বলেন, “আমার স্বামী বরাবরই ওদের অসামাজিক কাজের বিরোধিতা করেছেন। আমি নিশ্চিত, আজকের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত।” তিনি আরও বলেন, “সাধারণত আমিই ছেলেমেয়েকে স্কুলগাড়ি অবধি পৌঁছতে যাই। দিন পনেরো ধরে সুরিন্দর যাচ্ছিলেন। হামলাকারীরা এটা লক্ষ করেই পরিকল্পনা করে।”
কিন্তু দুষ্কৃতীরা কেন সুরিন্দরের পায়ে গুলি চালাল? পুলিশের অনুমান, যে ব্যক্তি গুলি চালিয়েছিল, সে চাইলেই সুরিন্দরকে হত্যা করতে পারত। কিন্তু পায়ে গুলি চালানোয় মনে হচ্ছে, সুরিন্দরকে ভয় দেখানোই হামলাকারীদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। |