মঙ্গলবার দুপুর ১টা। বেহালার সখেরবাজার সুপার মার্কেটের অন্য সব সব্জির দোকান ফাঁকা হলেও গ্রাম থেকে আসা চাষির দোকানে তখনও ভিড়। দামে অন্য সব দোকানের থেকে সস্তা বলে তো বটেই, টাটকা সব্জির টানেও ওই দোকানে ভিড় করেছেন ক্রেতারা। কম দামে মাল বেচার জন্য অন্য দোকানিরা চড়াও হতে পারেন, সেই আশঙ্কায় ছিল পুলিশ পাহারাও। সব্জির অগ্নিমূল্যে রাশ টানতে সরকার অনুমোদিত চাষি সমবায়কে শহরের বাজারে সরাসরি সব্জি বিক্রিতে যুক্ত করেছে রাজ্য। সেই মতোই সখেরবাজার-সহ কয়েকটি পুর-বাজারে চালু হয়েছে চাষিদের দোকান।
একেবারে টাটকা দুটো কপি নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বেহালার দ্বারিক মুখোপাধ্যায় রোডের বাসিন্দা জহর চট্টোপাধ্যায়। বললেন, “খুব ভাল কপি। দামেও কম। তাই দুটোই নিলাম।” শুধু কপি নয়, এ দিন চাষি সমবায়ের দোকানে মুলোর দাম ছিল কেজি প্রতি ৩০ টাকা, পালং ৩০, কুমড়ো ২০, বেগুন ৪০, ঢ্যাঁড়স ৬০ ও বাঁধাকপি ৩০ টাকা। যা অন্য বাজারের অন্য সব্জির দোকানের চেয়ে কমপক্ষে কিলোপ্রতি ৫ থেকে ১৫ টাকা কম। যে মাপের ফুলকপি ২০ টাকায় দিচ্ছে চাষি সমবায়, অন্য দোকান তার দর হাঁকছে কমপক্ষে ৩০ টাকা। |
বেহালার সখেরবাজারে সব্জি বিক্রি করছেন চাষিরা। মঙ্গলবার। ছবি: অরুণ লোধ। |
দামে সস্তা, টাটকা সব্জি। চাষি সমবায়ের দোকানের উপরে তাই ভরসা বাড়ছে ক্রেতাদেরও। সেই ছবিই দেখা গেল কাঁকুড়গাছি ভিআইপি মার্কেটেও। চাষি সমবায়ের কথা শুনে তা যাচাই করতে গিয়েছিলেন ফুলবাগানের বাসিন্দা সোনু অগ্রবাল। তাঁর কথায়, “৪০ টাকায় টোম্যাটো কিনলাম। অন্য দোকানে যার দাম ছিল ৬০ টাকা। আর পেঁয়াজ পাতার দর তো অনেকটাই কম। ৪০ টাকা কেজি। অথচ অন্য জায়গায় তা অনেক বেশি।
সব্জির দর বাড়তে থাকায় সম্প্রতি রাজ্য সরকারের উদ্যানপালন দফতর ও কলকাতা পুরসভা শহরের কয়েকটি পুর-বাজারে সরাসরি চাষিদের দিয়ে সব্জি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়।
ঠিক হয়, প্রথম পর্যায়ে ১৮টি বাজারে তা চালু করা হবে। এর মধ্যে ১১টি বাজারে ইতিমধ্যেই তা চালু হয়েছে। বর্তমানে যে বাজারগুলিতে চাষি সমবায়ের সব্জির দোকান খোলা হয়েছে, সেগুলি হল শ্যামবাজার, গোবরা, গুরুদাস বাজার, কাঁকুড়গাছি ভিআইপি বাজার, মার্কাস স্কোয়ার, চার্লস অ্যালেন মার্কেট, সখেরবাজার, লেক মার্কেট, ও সন্তোষপুর বাজার। সরাসরি গ্রাম থেকে গাড়ি বোঝাই করে সব্জি নিয়ে ওই সব বাজারে আসছেন চাষিরা।
এ দিকে শীতের মরসুম শুরু হলেও সব্জির দর এখনও না কমায় চিন্তিত উদ্যানপালন দফতরও। পুরনো পরিসংখ্যান দিয়ে দফতরের এক পদস্থ অফিসার জানান, গত বছর ১৫-২০ টাকা কেজি পালং বিক্রি হয়েছে। এ বার তা ৫০ টাকা। মুলো ২০ টাকার মধ্যেই ছিল। এ বার তা ৪০ টাকা। বেগুনের দরও বেশিই রয়েছে। বাজারে সব্জি কিনতে গিয়ে রীতিমতো পকেটে টান পড়ছে অনেকেরই। অথচ সরকারি ভাবে কিছু করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন ওই অফিসার। তাঁর কথায়, “এত বড় শহর কলকাতা। এর মধ্যে বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি বাজারে চাষি সমবায় দোকান চালু করা গিয়েছে। অনেক ক্রেতাই সেখান থেকে কেনার সুযোগ পাচ্ছেন না।”
চাষি সমবায়ের দোকানের সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যেই নানা আবেদন জমা পড়েছে পুরসভা ও উদ্যানপালন দফতরে। কিন্তু দোকানের সংখ্যা কি বাড়বে? টাস্কফোর্সের একাধিক সদস্য অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও কথা বলতে চাননি। এমনকী, নীরব রয়েছেন উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিকেরাও। আসলে বিষয়টা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও খুব উদ্বিগ্ন। তাই তাঁর নির্দেশ ছাড়া তাঁরা কিছু করতে চান না বলে জানিয়েছেন ওই দফতরের একাধিক অফিসার। |