আলু নিয়ে মামলার প্রথম দফায় ধাক্কা খেয়েছিল রাজ্য সরকার। দ্বিতীয় দফায় রাজ্যের ভূমিকায় সায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। অন্য রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে সরকারের নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখল উচ্চ আদালত। বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ওই নিষেধাজ্ঞার উপরে যে-স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন, সরকারের আপিল মামলায় বুধবার তা খারিজ করে দিয়েছে বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই সঙ্গে আলুর দর নির্দিষ্ট করে দিয়ে রাজ্য যে-বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তা-ও বহাল থাকবে বলে জানায় হাইকোর্ট।
খোলা বাজারে আলুর দাম দ্রুত বাড়তে থাকায় আপাতত অন্য রাজ্যে ওই কৃষিপণ্য রফতানি করা যাবে না বলে ২৩ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল তৃণমূল সরকার। কয়েক জন ব্যবসায়ী ওই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন। তাঁদের আবেদনে বলা হয়, সংবিধান অনুযায়ী ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অধিকারে সরকার কোনও ভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তাঁদের তরফে আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ সওয়াল করেন, সংবিধানের ৩০১ ধারা অনুসারে কোনও রাজ্য সরকারেরই এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি জারি করার অধিকার নেই। রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় জানান, সংবিধান মেনেই ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সেই মামলায় বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় গত সোমবার জানান, আপাতগ্রাহ্য ভাবে তাঁর মনে হচ্ছে, সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা অবৈধ। মামলার প্রাথমিক তথ্যাদি দেখে মনে হয়, সংশ্লিষ্ট সরকারি বিজ্ঞপ্তিটি সংবিধানসম্মত নয়। তিনি সরকারের নিষেধাজ্ঞার উপরে স্থগিতাদেশ দিয়ে জানান, ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সরকার এখন কোনও ব্যবস্থা নিতে পারবে না। সরকার তাদের বিজ্ঞপ্তির উপরে স্থগিতাদেশ খারিজ করার আবেদন জানায় ডিভিশন বেঞ্চে।
এ দিন অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, “সরকার এ ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞাই দেয়নি। আলুর দর বেড়ে যাচ্ছিল বলে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। এটা নিয়ন্ত্রণ নয়। আলুর দর নাগালে রাখার জন্য সরকারের দেখভাল।”
মূল মামলার আবেদনকারী আলু ব্যবসায়ীদের তরফে আইনজীবী অরুণাভবাবু বলেন, “সংবিধান এ ভাবে দর স্থির করে দেওয়া এবং অন্য রাজ্যে কৃষিপণ্য পাঠানো নিষিদ্ধ করার এক্তিয়ার রাজ্য সরকারকে দেয়নি। রাজ্য সরকার এ ক্ষেত্রে যেটা করেছে, সেটা সংবিধানের ৩০১ ধারার বিরোধী।” অ্যাডভোকেট জেনারেল তখন কাঠ রফতানি বন্ধ করার দৃষ্টান্ত টানেন। তিনি বলেন, “তামিলনাড়ু সরকার পরিস্থিতির প্রয়োজনে অন্য রাজ্যে কাঠ পাঠানোর ক্ষেত্রে তিন-তিন বার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।”
ডিভিশন বেঞ্চ বলে, অধিকাংশ সাধারণ মানুষ সারা দিন পরিশ্রমের পরে খেতে চায় একটু ভাত, কাঁচা লঙ্কা আর আলুভাতে। একটা সময় তো বাজার থেকে আলুই উধাও হয়ে গিয়েছিল। আলুর দর যে-হারে বাড়ছে, তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকার এই নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা করেছিল। এটা বজায় থাকবে। তবে মূল মামলাটি যেমন চলছে, তেমনই চলবে।
|