জেলায়-জেলায় মানবাধিকার কমিশনের শিবির করতে রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন। সেই নির্দেশ মেনে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন আগামী দু’মাসে রাজ্যের পাঁচ জেলায় শিবির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইতিমধ্যেই গত সেপ্টেম্বরে কোচবিহার এবং শিলিগুড়িতে জেলা পর্যায়ের শিবির হয়েছে। এ বার দার্জিলিঙে হবে রাজ্য পর্যায়ের শিবির। কেন্দ্রীয় কমিশনের নির্দেশ মেনে এই প্রথম এই রাজ্যে জেলায় শিবির করার ব্যাপারে এত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের মতে, গত কয়েক বছর ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ, শুনানি এবং সে সব নিয়ে প্রচারমাধ্যমের সক্রিয়তায় আমজনতার চেতনা বেড়েছে। পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু এবং সরকারি দফতরে অবহেলা আগের তুলনায় কমেছে বলেও তাদের দাবি। এর সুফল আরও ছড়িয়ে দিতেই জেলায় বাড়তি শিবির করাতে চায় কেন্দ্রীয় কমিশন। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “জেলা থেকে অনেকের পক্ষেই কলকাতায় অভিযোগ দাখিল করতে বা শুনানিতে আসা সম্ভব হয় না। কমিশনই তাই যাচ্ছে জেলার লোকেদের কাছে। দিল্লি থেকে রাজ্য কমিশনকে শিবির-পিছু ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।”
কমিশন সূত্রের খবর, আগামী ২০, ২১ ও ২৭ ডিসেম্বর যথাক্রমে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দার্জিলিং এবং নদিয়ায় জেলা পর্যায়ের শিবির হবে। এর পরে ১০ ও ১৭ জানুয়ারি হবে যথাক্রমে বীরভূম ও মুর্শিদাবাদে। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের রেজিস্ট্রার রবীন্দ্রনাথ সামন্ত এ কথা জানিয়ে বলেন, “প্রতিটিতেই কলকাতা থেকে রাজ্য কমিশনের পদস্থ আধিকারিকেরা যাবেন। তার আগে ৩০ নভেম্বর দার্জিলিঙে রাজ্য পর্যায়ের একটি শিবির হবে। সেখানে কমিশনের চেয়ারম্যান ও সচিবের মতো শীর্ষ আধিকারিকদেরই থাকার কথা।” |
এর আগে কোচবিগার ও শিলিগুড়িতে দু’দিন করে শিবির হয়েছে। কোচবিহারে ৩৫টি এবং শিলিগুড়িতে ৬৭টি আবেদন জমা পড়েছিল। শুনানির পরে অর্ধেকের উপরে আবেদন বিবেচনার জন্য গৃহীত হয়। কিছু নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এ বার প্রস্তাবিত শিবিরগুলোয় কী হবে?
রাজ্য কমিশনের রেজিস্ট্রার জানান, কিছু শিবিরে অভিযোগকারীদের শুনানি ও বিচার হবে। আবার কিছু শিবিরে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা বা সংশোধনাগারের মতো সার্বিক বিষয়, নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, নারী পাচার, বয়স্ক মানুষের নিরাপদ আশ্রয়, দাস ও শিশুশ্রমিক, কায়িক বর্জ্য বহন, স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা, মানসিক অসুস্থতা ও কুষ্ঠের মতো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। শ্রোতা হিসাবে থাকবেন সরকারের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকেরা। কোন ক্ষেত্রে কী করা উচিত, বা উচিত নয়, আইনের নিরিখে তা ব্যাখ্যা করবেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অভিজ্ঞেরা। সেই সভায় শ্রোতা ও বক্তা নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যে জেলাশাসকদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
গত বছর এপ্রিলে ব্যঙ্গচিত্র-কাণ্ডই হোক বা অক্টোবরে ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় কৃষিজীবী শিলাদিত্য চৌধুরীর গ্রেফতার হওয়া দু’টি ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে সুপারিশ করেছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। রাজ্য সরকার তা না মানায় বিতর্ক আজও থামেনি। তা হলে শিবির করে লাভ কী? কমিশনের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “রাজ্য ওই সব সুপারিশ না মানলেও জনতার কাছে কমিশনের নিরপেক্ষতা স্পষ্ট হয়েছে। জেলার আমজনতার একটা বড় অংশ অন্ধের যষ্ঠির মতো কমিশনকে কাছে পেতে চাইছে। তাই এই উদ্যোগ।”
রাজ্যে পালাবদলের পরে কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে প্রতি জেলায় মানবাধিকার-সংক্রান্ত মামলার জন্য আদালত তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিল তৃণমূল পরিচালিত সরকার। আইন ও বিচার দফতর সূত্রের খবর, ওই আদালতের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা জজদের প্রিসাইডিং অফিসার এবং সরকারি কৌঁসুলিদের আইনি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার পরে জেলায়-জেলায় কমিশনের এই শিবির করার উদ্যোগ কী চোখে দেখছে রাজ্য?
আইন ও বিচার দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “মানবাধিকার কমিশন যদি মানুষকে সত্যি সচেতন করতে চায়, তাতে আপত্তি কোথায়?” |