কুণালের অভিযোগকে অস্ত্র করে সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা
তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষের তোলা অভিযোগের প্রেক্ষাপটে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই-তদন্তের দাবিতে সুর চড়াতে শুরু করেছে বিরোধীপক্ষ।
গ্রেফতার হওয়ার পরে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও কয়েক জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুণালবাবু যে ভাবে অভিযোগ এনেছেন, তা খতিয়ে দেখতে অবিলম্বে সিবিআই-তদন্তের দাবি তুলেছে সিপিএম। বুধবার বিধানসভা কক্ষের বাইরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “নীতিগত ভাবে আমরা সিবিআই-তদন্তের বিরোধী। কিন্তু সারদা-কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করানো উচিত।” সূর্যবাবুর কথায়, “যাঁদের নাম ওই সাংসদ তুলেছেন, তাঁদের তো জেরা করা উচিতই, প্রয়োজনে গ্রেফতারও করা উচিত। আইনের শাসনের কথা ওঁরা (তৃণমূল) বলেন। দু’জনের জন্য তো দু’রকম আইন হতে পারে না!” এ প্রসঙ্গেই তাঁর প্রশ্ন, কোনও মামলায় যদি কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতার করা যেতে পারে, তা হলে এখানে অসুবিধা কোথায়?
বিরোধী দলনেতার এ হেন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “সূর্যবাবুদের ভেবে দেখতে বলব, তাঁদের আমলেই চিটফান্ডের রমরমা হয়েছে। নানা আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে তাঁরা জড়িয়েছেন। ওঁদেরই তো জেলে থাকার কথা!”
সিবিআইয়ের হাতে সারদা-কাণ্ডের তদন্তভার তুলে দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের ‘অনীহা’কে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেসও। কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান এ দিন বলেন, “সারদা-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর নাম ওঠায় সিবিআই-কে দিয়েই তদন্ত করানো উচিত।” এই দাবিতে আজ, বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের দ্বারস্থ হবে কংগ্রেস পরিষদীয় দল। তাদের প্রতিনিধিদলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যেরও থাকার কথা।
একই দাবি জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি। রাজ্য বিজেপি’র সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন বলেন, “নিজের দলেরই এক সাংসদ এখন মুখ্যমন্ত্রীর সততার ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করছেন! সেই ভাবমূর্তি রক্ষা করতে সিবিআই হওয়াটা আরও জরুরি।” রাহুলবাবুর মতে, এই কেলেঙ্কারি এত ব্যাপক যে, রাজ্য পুলিশ, সিট বা শ্যামল সেন কমিশনের পক্ষে নিরপেক্ষ তদন্ত করা অসম্ভব।
বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য রাজ্য শাখার সঙ্গে সহমত নয়। এ দিন দিল্লির বিজেপি সদরে দলীয় মুখপাত্র রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “কংগ্রেস কেন এত তড়িঘড়ি সিবিআই-তদন্তের দাবি তুলছে? রাজ্য পুলিশ তো এমনিতেই বিষয়টির তদন্ত করছে! তদন্ত হওয়াই উচিত।” বস্তুত যে ভাবে সিবিআই-কে দিয়ে তদন্তের কথা বলা হচ্ছে, তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেস আবার সিবিআই-অস্ত্রই ব্যবহার করতে চাইছে কি না, সে সম্পর্কে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব সন্দিহান। “মমতার সঙ্গে কংগ্রেসের এখন যা সম্পর্ক, তার প্রেক্ষাপটে বিষয়টি পর্যালোচনা করলে কংগ্রেসের অভিসন্ধি বোঝা যাবে।” মন্তব্য রবিশঙ্করের। যদিও রাহুলবাবুর ব্যাখ্যা, “আমার আর রবিশঙ্করের বক্তব্য একই। উনিও বলেছেন, তদন্ত হওয়া উচিত। কংগ্রেস এত দিন যে সব কুকর্ম করেছে, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই উনি এ কথা বলেছেন।”
সারদা-কাণ্ড নিয়ে বিরোধীরা যখন তাঁকে আক্রমণের নিশানা করছে, তখন সিপিএম-কে পাল্টা আক্রমণের পথে হেঁটেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন উত্তর দিনাজপুরের জনসভায় তিনি বলেন, “চিটফান্ড তো সঞ্চয়িতার আমল থেকে এ রাজ্যে চালু। সে ২০-২৫ বছর হবে। তা হলে কাদের সময় এদের বৃদ্ধি হল? ওঁরা ক্ষমতায় ছিল ৩৪ বছর। আমরা তো মাত্র দু’বছর এসেছি। আমরা ক্ষমতায় এসে গ্রেফতার পর্যন্ত করিয়েছি। সাধারণ মানুষের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কমিশন করিয়েছি। আজ যারা বড় বড় কথা বলছে, তারা কেন ওই সব সংস্থার (সঞ্চয়িতা) সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা ফেরত দিল না? আমরাই তো এ সব করছি।”
গ্রেফতার হওয়ার পরে কুণালের ফেসবুক পেজে দলের বেশ কিছু নেতা-নেত্রীর নাম উল্লেখ করে লেখা হয়েছিল, সারদা-কাণ্ডের তদন্তে এঁরা পুলিশকে সাহায্য করতে পারেন। গ্রেফতার হওয়ার পরে তিনি কী ভাবে সেটি ফেসবুকে ‘পোস্ট’ করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ দিন সূর্যবাবু বলেন, “কিন্তু এখন এক টিভি চ্যানেলে সাংসদের রোমহর্ষক বিবৃতি পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, এটা আগাম রেকর্ড করা ছিল। এখন আর কোনও সন্দেহের অবকাশ থাকে না। ওই সাংসদ যাঁদের নাম করেছেন, তাঁরা তো অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! যাঁদের নাম করা হয়েছে, সরকারের উচিত সকলকে জেরা করা।”
এ নিয়ে আপনি কি মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইবেন? বিরোধী দলনেতার জবাব, “সেটা করব না। করলে তো ওঁরা (তৃণমূল) ছেড়ে পালিয়ে যাবেন! এঁরা তার সুযোগ খুঁজলেও আমরা তা মেনে নেওয়ার পক্ষে নই। পাঁচ বছর কাটিয়ে যেতে হবে।”
এ দিন সিপিএম-প্রভাবিত সরকারি কর্মী সংগঠন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি আয়োজিত সমাবেশের বক্তৃতাতেও একই প্রসঙ্গ তোলেন সূর্যবাবু। বলেন, “সারদা-কাণ্ডে এক তৃণমূল সাংসদ হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন। তাই ওঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উনি যাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে কে নেই! উনি তো মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও আঙুল তুলেছেন!” বিরোধী নেতার অভিযোগ, “সারদা-কাণ্ডে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় লুঠ হয়েছে। এখন সেই টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে মারামারি, খুনোখুনি হচ্ছে।” কুণালবাবুর সিডি প্রকাশ্যে আসার ব্যাপারটাও পুলিশ খতিয়ে দেখছে। পুলিশ-সূত্রের খবর: কোথায় বসে তিনি রেকর্ডিং করেছেন, রেকর্ডেড সিডি কাদের তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন, এবং কী ভাবে তা বৈদ্যুতিন মাধ্যমের হাতে এল এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর পেতে মঙ্গলবার রাতে কুণালকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করেন বিধাননগর কমিশনারেটের তদন্তকারী অফিসারেরা। কমিশনারেট-সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সিডি সম্প্রচারের পরেই পুলিশ-কর্তারা তাঁকে জেরা শুরু করেন। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার ও গোয়েন্দা-প্রধান অর্ণব ঘোষ দফায় দফায়, প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত জেরা চালিয়ে যান। তাঁরা এখন কী বলছেন?
বিধাননগরের গোয়েন্দা-প্রধান এ দিন বলেন, “কুণালবাবুকে গ্রেফতারের পরে বেশ কিছু নতুন তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। সেগুলো খতিয়ে দেখছি।’’ সিডি-তে কুণালবাবু যাঁদের নাম বলেছেন, তাঁদের ডেকে জেরা করা হবে কি? অর্ণববাবুর জবাব, “এক জন অভিযুক্ত বাইরে কোথায় কার নাম বললেন, সে নিয়ে আমরা মাথা ঘামাচ্ছি না। তদন্ত চলাকালীন কারও নাম উঠে এলে সেটাই আমাদের কাছে বিবেচ্য হবে।’’

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.