সারদা-কাণ্ডে একই সুরে সরকার-বিরোধিতায় নামল কংগ্রেস ও বামেরা।
সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছে দু’পক্ষই। মঙ্গলবার সেই দাবিতেই বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনেন বামেরা। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা খারিজ করে দিলে বাম বিধায়কেরা অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াক-আউট করেন।
পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “রাজ্য সরকার এত আতঙ্কিত যে প্রস্তাবটা বিধানসভায় পড়তে পর্যন্ত দেওয়া হল না।” তাঁর আরও অভিযোগ, “প্রস্তাবে আমরা বলেছিলাম, রাজ্যের বেশ কয়েকটি চিটফান্ড সংস্থা গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা তছরুপ করেছে। এই তছরুপের অভিযোগ নিয়ে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত হওয়া দরকার। সে জন্যেই আমরা সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের দাবি করছি।”
সারদা-কাণ্ডে ধৃত তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষের নাম না করে সূর্যবাবু বলেন, “ওই সাংসদ ফেসবুকে যা লিখেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরাও মনে করি, শাসক দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কয়েক জন নেতা সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত।” বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কাজ বন্ধে রাজ্য সরকার ব্যর্থ বলেও তিনি অভিযোগ করেন। সারদা কাণ্ডের সিবিআই তদন্ত চেয়ে এ দিন কলেজ স্কোয়্যার থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত মিছিলও করে সিপিআইয়ের যুব সংগঠন।
কংগ্রেস নেতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরী এ দিন বামেদেরই সুরে বলেন, “কুণালবাবু যে সমস্ত নাম বলেছেন, তা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।” এ দিন শিয়ালদহে রেলের এক অনুষ্ঠানের পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধীরবাবু বলেন, “আমি তো আগেই বলেছি, সারদা নিয়ে সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।’’ কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও সিবিআই তদন্তের দাবি বারবার জানানো হচ্ছে। এ দিন বিধানসভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, “বামেরা কী বলছেন জানি না। আমরা প্রথম থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের স্বার্থে সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছি।”
বামেদের মুলতুবি প্রস্তাব খারিজ করার বিষয়ে স্পিকার বলেন, এই বিষয়ে কমিশন গঠিত হয়েছে, তদন্তও চলছে। তা ছাড়া বিধানসভার বিধির বিশেষ ধারায় তিনি মুলতুবি প্রস্তাবটি খারিজ করেছেন বলে স্পিকার জানান। তাঁর নির্দেশ শোনার পর বাম বিধায়করা আলোচনার দাবিতে বিক্ষোভ জানান। বামেদের মুলতুবি প্রস্তাবটি পাঠ করতে না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে পরে স্পিকার বলেন, “সভার বিধি মেনে যে প্রস্তাব খারিজ করেছি, তা পাঠ করতে দিই কী ভাবে?”
অভিযোগ, পুরভোটে বিপুল জয়ের পরে বিরোধীদের প্রতিবাদকে গ্রাহ্য করছেন না শাসক দলের নেতৃত্ব। কংগ্রেস ও বামেদের একসুরে প্রতিবাদকে কটাক্ষ করে এ দিন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এখন তো মামা-ভাগ্নের যৌথ কণ্ঠস্বরই শোনা যাবে। কারণ একই কাজে ওরা দু’জনেই দায়ী।” বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আশি সাল থেকে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় যে সাধারণ মানুষ টাকা জমা করেছে, সিপিএমের সরকার তাদের স্বার্থ দেখেনি। সিপিএমের সমর্থন পাওয়ার জন্য কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারও চোখ বুজে ছিল। মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের সরকারই যা করার করেছেন।” |