কয়লার সেস নিয়ে বাম দাবিও তৃণমূল দখলে
কেন্দ্রের বঞ্চনার যে অভিযোগের উপরে বরাবর রাজনৈতিক ভাবে ভর করতেন বামেরা, সেটা আগেই ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল। এ বারে তারা সরব হল কয়লার সেস ও রয়্যালটি বাবদ পাওনার বিষয়টি নিয়েও। বঞ্চনার কথা বলতে গেলেই বামেরা এই উদাহরণটি তুলতেন। তাঁদের সেই প্রিয় বিষয়েও এ বারে ভাগ বসাল তৃণমূল।
শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় এ নিয়ে বলতে গিয়ে বামেদেরও জুড়লেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। জানালেন, বাম সরকারও দীর্ঘদিন সেই অভিযোগ জানিয়েছে দিল্লির বিরুদ্ধে। বিষয়টি এমনই যে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তও একমত হলেন অমিতবাবুর সঙ্গে। আর এই ভাবে কেন্দ্র-বিরোধী আওয়াজ আরও জোরালো করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তথা দল। এ দিন বিধানসভায় অমিতবাবু অভিযোগ করেন, কয়লার সেস ও রয়্যালটি বাবদ কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। গত দু’বছরে এই নিয়ে কেন্দ্রকে তিনটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিন বার কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ কমিশনের কাছেও বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতেও লাভ হয়নি।
রাজ্যের এই দাবি মানতে নারাজ কেন্দ্র। খনি মন্ত্রকের বক্তব্য, একমাত্র পশ্চিমবঙ্গই কয়লায় উচ্চ হারে (২৫%) সেস নেয়। তাই বর্ধিত হারে রয়্যালটি দেওয়া হয় না। কেন্দ্রের এক মুখপাত্রের কথায়, “একই পণ্য থেকে সেস ও রয়্যালটি দু’টিই দেওয়া যায় না।”
কেন্দ্র-রাজ্য ঠোকাঠুকি শুরু হয় ইউপিএ সরকারের উপর থেকে তৃণমূলের সমর্থন প্রত্যাহারের পরই। তখন থেকে সুর চড়াতে শুরু করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মূল বিষয় আর্থিক দাবিদাওয়া। আগে রাজ্যের দাবি ছিল, তিন বছরের জন্য ঋণের সুদ ও আসল শোধ করার উপর স্থগিতাদেশ দিক কেন্দ্র। পরে কেন্দ্রের কাছে বিশেষ আর্থিক সাহায্যও চায় রাজ্য। তার পরে দাবি জানানো হয়, রাজ্য কর্মীদের বাড়তি বেতন ও বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মেটানোর দায়িত্ব নিক দিল্লি। এ রাজ্য থেকে কর বাবদ যে টাকা নেয় কেন্দ্র, তার একটা বড় অংশ রাজ্যকেই দেওয়া হোক। সেই তালিকায় নয়া সংযোজন কয়লার রয়্যালটি ও সেস।
বিরোধ অবশ্য সেই জ্যোতি বসুর আমল থেকে। এ দিন বিধানসভায় প্রশ্নটি তুলেছেন সূর্যবাবুও। অর্থমন্ত্রীর কাছে তিনি জানতে চান, রয়্যালটি বাবদ কেন্দ্রের কাছে পাওনা উদ্ধারে কী ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য? অমিতবাবু বলেন, এই রাজ্যের ক্ষেত্রে রয়্যালটি দেওয়া হচ্ছে ১৯৮৭ সালের আগের হিসেব অনুযায়ী। তার পর কেন্দ্র চার বার হার বদলালেও রাজ্যকে বঞ্চিত করেছে। এখন অন্য কয়লা উৎপাদক রাজ্যগুলি কয়লার গুণগত মানের উপর ভিত্তি করে রয়্যালটি পায় টনপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৮০ টাকা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ পাচ্ছে ৫.৫০ টাকা-৭ টাকা। অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য, রয়্যালটি পাওনা নিয়ে সূর্যবাবুর সঙ্গে তাঁরাও একমত।
অমিতবাবু যা বলছেন, কয়েক বছর আগে তা শোনা গিয়েছে অসীম দাশগুপ্তর মুখে। এ দিনও তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী কয়লার উপর সেস ও রয়্যালটি দু’টোই রাজ্যের প্রাপ্য। তিনি ২০০৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় উল্লেখ করে জানান, সেস ও রয়্যালটি দুই-ই পাওয়ার অধিকার রয়েছে রাজ্যের। অসীমবাবুর কথায়, ওই নির্দেশ সত্ত্বেও ১৯৮৭ সাল থেকে কেন্দ্র বর্ধিত রয়্যালটি থেকে বঞ্চিত করছে পশ্চিমবঙ্গকে। তাঁর দাবি, রাজ্যের বকেয়া মেটাতে তিনি ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনকে বলেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে অবশ্য সর্বোচ্চ আদালতেরই উচ্চতর বেঞ্চে আবেদনের কথা ভাবছে খনি মন্ত্রক।
অসীমবাবুর বক্তব্য, কয়লার উপর একই সঙ্গে রয়্যালটি ও সেস নিলে দাম বেড়ে যাবে বলে কেন্দ্র তখন যুক্তি দিয়েছিল। রাজ্য প্রস্তাব দিয়েছিল, বর্ধিত রয়্যালটি বাবদ বকেয়া পাওনা যদি কেন্দ্র মেটায়, তা হলে তাঁরা সেসের পরিমাণ কমিয়ে দিতে রাজি। তিনি বলেন, “আগে কয়লার উপর এই রাজ্যে সেস ছিল ৪০%। পরে তা কমিয়ে ২৫% করা হয়েছে। তা আরও কমাতে রাজি ছিলাম আমরা। কিন্তু কেন্দ্র কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি।” সেস-রয়্যালটির প্রশ্নে একমত হলেও এ দিন বিরোধী দলনেতাকে কটাক্ষ করে অমিতবাবু বলেন, ২০০৪-০৮ সালে আপনাদের সাহায্যেই কেন্দ্র টিকে ছিল। তখন ব্রিগেডের এক সভায় আপনাদের এক নেতা বলে ছিলেন, কেন্দ্র আপনাদের কথায় ওঠে-বসে। তবু কেন আপনারা কেন্দ্রের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করতে পারেননি! সূর্যবাবু পরে দাবি করেন, তাঁদের নেতার বক্তব্য বলে যা বলা হয়েছে, তা সভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দিতে হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.