কাজের সময়ে নবান্নে আন্দোলন বরদাস্ত করবে না রাজ্য
বান্ন চত্বরে কো-অর্ডিনেশন কমিটির ব্যানার খুলে দিয়ে ক’দিন আগেই সরকারি কর্মী সংগঠনগুলিকে বার্তা দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মঙ্গলবার রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার জানিয়ে দিল, ওই ভবন চত্বরে কোনও অ্যাসোসিয়েশন বা কর্মী সংগঠন কোনও রকম মিছিল-মিটিং কিংবা অবস্থান আন্দোলন করতে পারবে না। এ দিনই সব সরকারি দফতরে ও সংগঠনগুলির কাছে ওই বিজ্ঞপ্তি পৌঁছে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
কেন এই বিজ্ঞপ্তি?
রাজ্য প্রশাসনের একাংশ বলছেন, বিগত বছরগুলিতে মহাকরণে একের পর এক গজিয়ে উঠেছিল বিভিন্ন সংগঠনের অফিস। কাজ ছেড়ে সংগঠনের কর্মী-সমর্থকেরা সেখানে বসে গল্পগুজব করতেন।
এমনও দেখা গিয়েছে, কাজের সময় দফতরে পাওয়া যায়নি বলে হয়তো কোনও কর্মীকে শো-কজ করা হল, এর প্রতিবাদেও সংগঠনের তরফে দিনভর বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের অফিসের সামনে। এ ছাড়া নানান দাবিদাওয়া বা প্রতিবাদ জানাতেও অধিকাংশ কাজের দিনে মিটিং-মিছিল, কর্মীদের সভা লেগেই ছিল মহাকরণে। ডান-বাম সব সংগঠনই ছিল তাতে।
কিন্তু কমর্সংস্কৃতি গোল্লায় দিয়ে কেবল সংগঠন করা যে নতুন সরকার কোনও ভাবেই বরদাস্ত করবে না, তা ক্ষমতা দখলের পরেপরেই কর্মী সংগঠনগুলিকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সমস্ত সংগঠনের নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠক করে মমতা জানিয়েছিলেন, সরকার কর্মীদের পাশে থাকবে। কিন্তু অফিস টাইমে কাজ ছাড়া অন্য কিছু হবে না।
প্রশাসনের একাধিক কর্তার বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ ধীরে ধীরে অমান্য করতে শুরু করে অধিকাংশ সংগঠন। শেষ পর্যন্ত এক রকম বাধ্য হয়েই অর্থ দফতর এ দিনের নির্দেশ জারি করেছে বলে ওই অফিসারদের মত।
প্রশাসনের অন্য একটি অংশ অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, দিন দুই আগেই নবান্নে বকেয়া ডিএ-র দাবিতে স্লোগান দিয়েছিলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (নবপর্যায়)-এর কর্মীরা। রাজ্য সরকার তা ভাল চোখে নেয়নি। ওই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নবপর্যায়ের সাধারণ সম্পাদক সমীররঞ্জন মজুমদারকে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদে এবং যুগ্ম সম্পাদক সন্দীপ দাশগুপ্তকে দার্জিলিঙে জিটিএ-তে বদলি করে প্রশাসন। তার প্রতিবাদে সরব হয়েছে নবপর্যায় ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর)।
আজ, বুধবার দুপুরে নবান্নের সামনে বিক্ষোভ দেখাবে নবপর্যায়। পাশাপাশি বকেয়া ৩৮ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা-সহ আট দফা দাবিতে বুধবারই বিধানসভা অভিযানের ডাক দিয়েছে সিপিএম প্রভাবিত সরকারি কর্মচারী সংগঠন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি। প্রশাসনের ওই অংশের বক্তব্য, তার আগেই নবান্নে মিছিল-মিটিং ও অবস্থান বিক্ষোভের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সংগঠনগুলিকে সতর্ক করল রাজ্য সরকার।
এ দিনের বিজ্ঞপ্তিটি জারি করেছে অর্থ দফতর। ওই দফতরের সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি কর্মীদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, কেউ যদি ওই নির্দেশ অমান্য করেন, তা হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সার্ভিস রুল মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে রাজ্য প্রশাসন। এ দিনই খাদ্য ভবনেও মিছিল-মিটিং করে কর্মসংস্কৃতি অমান্য করার অভিযোগ এনে সংগঠনের কর্তাব্যক্তিদের চিঠি দিয়েছে খাদ্য দফতরের শীর্ষ প্রশাসন। তাতে বলা হয়েছে, দুপুরে টিফিনের সময়ে অফিসের ভিতরে ও বাইরে চিৎকার করে স্লোগান দিয়ে কাজের পরিবেশ নষ্ট করছেন বিভিন্ন সংগঠনের এক দল কর্মী। স্লোগানের শব্দে যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁদের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটছে।
তাই ওই কাজ থেকে বিরত থাকতে সব সংগঠনের নেতৃত্বকে অনুরোধ করেছে খাদ্য দফতরের শীর্ষ প্রশাসন। এ দিনই ওই চিঠির প্রতিলিপি নোটিস বোর্ডে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, শুধু নবান্ন কেন, কাজের সময় মিছিল-মিটিংয়ের উপরে যদি নিষেধাজ্ঞা জারি করে অর্থ দফতর, তা হলে সমস্ত সরকারি ভবনেই তা কার্যকর হওয়া উচিত। কিন্তু কেন কেন্দ্রীয় ভাবে ওই নির্দেশ জারি করা হল না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অফিসারদের একাংশ।
অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, নবান্ন বর্তমানে রাজ্য সরকারের সদর দফতর। মুখ্যমন্ত্রী-সহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা এখানেই বসেন। ওই ভবনে যাতে কোনও ভাবে কর্মসংস্কৃতি নষ্ট না হয় তাই মহাকরণ থেকে উঠে যাওয়া সমস্ত দফতরকে বিকল্প অফিস দেওয়া হলেও সংগঠনগুলিকে কোনও জায়গা দেওয়া হয়নি। নবান্নে তো নয়ই। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, নতুন সচিবালয়ের চারপাশে একাধিক ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভি লাগানো হয়েছে। কিন্তু ভবনের ভিতরে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এ বার সব তলাতেই সিসি টিভি লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নবান্নের এক কর্তা। রাজ্য প্রশাসনের এই পদক্ষেপ সরকারি কর্মীদের অধিকার হরণের চেষ্টা বলে অভিযোগ করেছেন কো-অর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক অনন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন “কর্মীদের কন্ঠ রোধ করতেই মিটিং-মিছিলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। কিন্তু আমরা আন্দোলন করবই।” অনন্তবাবুর দাবি, বাম আমলে টিফিন টাইমে মিছিল-মিটিং করায় কোন সরকারি মানা ছিল না। তাতে কর্মীরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিদাওয়া জানাতে পারতেন। অনন্তবাবুর ওই দাবি উড়িয়ে দিয়ে রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “অর্থ দফতর কর্মীদের সার্ভিস রুল তৈরি করে। তারা যদি নতুন কোনও নির্দেশ জারি করে তা হলে সেটাই মেনে চলতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.