রেল-আইনে জমির বদলে চাকরি দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই বলেই দাবি করেছিলেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। তাঁর পূর্বসূরিদের ইঙ্গিত করে সে সময়ে অধীরের কটাক্ষ ছিল, “এ ভাবে রেল চালাতে হলে মন্ত্রকটাই তো উঠে যাবে!” ডানকুনি ফ্রেট করিডর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু প্রকল্প তাই জমি-জটে থমকে রয়েছে।
মঙ্গলবার নিজের খাসতালুকে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে সেই অধীরের প্রতিশ্রুতি, মুর্শিদাবাদের নসিপুরে মাত্র ৭ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ২২০ জন জমিদাতাকে চাকরি দেবে রেল কর্তৃপক্ষ।
দিন কয়েক আগে ডানকুনি-ফুরফুরা রেলপথে জমিদাতাদের চাকরির ব্যাপারে প্রথমে ‘না’ বলেও পরে সম্মতি দিয়েছিলেন তিনি। এই হ্যাঁ, না এবং হ্যাঁ, ক্রমান্বয়ে এই অবস্থান বদলে জমিদাতারা স্পষ্টই বিভ্রান্ত। মুর্শিদাবাদের নসিপুরেই হা আচমকা তাঁর অবস্থান বদল কেন?
রেল প্রতিমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেন, প্রশ্নটা তাঁর ‘অবস্থান’ বদলের নয়। রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর পূর্বসূরিদের ‘প্রতিশ্রুতি’ মতো জমিদাতাদের চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু নতুন কোনও প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলে নিয়ম মাফিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলেও চাকরির প্রশ্ন নেই।
অধীর বলেন, “আজিমগঞ্জ-নসিপুর রেল সেতু নির্মাণের জন্য জমিদাতাদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ২০১১ সালের ১৮ নভেম্বর। ওই সময়ে রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব ছিল রাজ্যের শাসক দলের হাতে। ওই সাত একর জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে গ্রামবাসীরা চাকরির দাবিতে বেঁকে বসলে তৎকালীন রেলমন্ত্রী চাকরির দাবি মেনে নিয়েই জমিদাতাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলে। আমি সে দাবিই মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছি।”
তবে, রেল বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে, রেলমন্ত্রক কংগ্রেসের হাতে আসার পরে রেল কর্তৃপক্ষ ওই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসেছিল। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, নসিপুরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ অবস্থায় কাজ বন্ধ হয়ে গেলে হাওড়া-দিল্লি বিকল্প রেলপথ তৈরিই থমকে যাবে দেখে রেল প্রতিমন্ত্রী বিশেষ উদ্যোগী হয়েছিলেন। অধীর বলেন, “সেতু তৈরির প্রায় ৯৬ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। রেলের স্বার্থেই আমি বিশেষ আইনে চাকরির দেওয়ার কথা রেল কর্তৃপক্ষকে বোঝাই। শেষ পর্যন্ত রেল বোর্ড সম্মত হওয়ায় ওই দিন জমিদাতাদের চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।” রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রকল্প নির্মাণে প্রয়োজন ছিল ৫৩ একর জমি। তার মধ্যে সাত একর জমি নিয়ে জটিলতার জেরেই থমকে রয়েছে প্রকল্প। ২০০৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর নসিপুর-আজিমগঞ্জ রেল সেতুর শিলান্যাস করে ছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। তবে সেতু নিমার্ণের কাজ শুরু হতে আরও দু’বছর গড়িয়ে গিয়েছিল। রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাস ছিল চার বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। কিন্তু ওই সাত একরের জটে আজও থমকে রয়েছে সেতু নির্মাণ। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকেও কোনও সহযোগিতা মিলছে না বলে রেলের অভিযোগ। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আজিমগঞ্জের মুকুন্দবাগ পঞ্চায়েতের চরমহিমাপুর মৌজার ৪.৪৪ একর এবং মাহিনগর দিয়ার মৌজার ৩.১৪ একর জমি নিয়েই জটিলতা। জেলা প্রশাসন প্রাথমিক ভাবে চরমহিমাপুরের ১৬২ জন এবং মাহিনগর দিয়ারের ১২০ জন জমিদাতার তালিকা তৈরি করে। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকের দু’টি মৌজায় জমি থাকায় শেষ পর্যন্ত জমিদাতার সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২২০ জনে। তবে, ভূমি সংস্কার দফতরের জেলা আধিকারিক নিরঞ্জনকুমার বলেন, “এখন পর্যন্ত জমিদাতাদের ৮০ জন ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন। বাকিরা এখনও অনিচ্ছুক।” পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার শান্তনু সাহা বলেন, “ঠিক কত জন জমিদাতা রয়েছেন, তার চূড়ান্ত তালিকাই এখনও দিতে পারেনি প্রশাসন। ফলে জমি জট কেটেও কাটছে না।” |