কলকাতা পুরসভায় তেল চুরির ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি তুললেন কংগ্রেস ও বাম সদস্যেরা। সম্প্রতি পুরসভার ৬টি গ্যারাজ থেকে বিভিন্ন গাড়িতে তেল দেওয়ার বিষয়ে অভ্যন্তরীণ অডিট করতে গিয়েই তেলের হিসেবে প্রচুর গরমিল মেলে। তোলপাড় হয় পুরসভার অন্দরমহল।
বুধবার পুরসভার মাসিক অধিবেশনে ওই বিষয়টি নিয়ে সরব হন কংগ্রেস ও বাম কাউন্সিলরেরা। তাঁদের দাবি, অডিটে তেলের হিসেবে গরমিল ও অপব্যয় প্রমাণিত। তাই অবিলম্বে এ ব্যাপারে কোনও বিচারপতিকে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হোক। যদিও বিরোধীদের তোলা ওই প্রস্তাব খারিজ করে দেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনতে আমরাই অডিট করিয়েছি। এর পর যা করার পুর-বোর্ডই করবে।”
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন গাড়িতে পুরসভার তেল বরাদ্দ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে বহুদিন থেকেই। কিন্তু এর আগে কোনও পুর-বোর্ডই এ নিয়ে মাথা ঘামায়নি। দিন কয়েক আগে শহরের একটি জায়গায় পুরসভার গাড়ি থেকে তেল বিক্রির ঘটনা নজরে আসে পুরসভার এক পদস্থ কর্তার। তার প্রেক্ষিতেই পুরসভার অভ্যন্তরীণ অডিট বিভাগকে ওই বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার নির্দেশ দেন পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ। এর পরেই ওই ৬টি গ্যারাজ ধরে অডিট করা হয়।
অডিট রিপোর্টে বলা হয়, ডিজেল গাড়ির জন্য বরাদ্দ হয়েছে পেট্রোল। এমন অনেক গাড়ি পুরসভার গ্যারাজ থেকে তেল ভরেছে, যেগুলি আদৌ পুরসভার কোনও কাজে নিযুক্তই ছিল না। অডিটে আরও বলা হয়েছে, শুধু ২০১২-র সেপ্টেম্বরেই প্রায় সাড়ে ৫৩ লক্ষ টাকার তেল পুরসভার গ্যারাজ থেকে বেরিয়েছে, যা পুরসভার কোনও কাজে ব্যবহৃত হয়নি।
অডিট অনুযায়ী শহরে পুরসভার সবক’টি ট্যাঙ্কেই ডিজেলের হিসেবে গরমিল পাওয়া গিয়েছে। খাতা-কলমের হিসেবে সঙ্গে কোথাও বাড়তি, কোথাও বা ঘাটতি পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া, পুরসভার বিভিন্ন দফতর থেকে তেলের যে স্লিপ (আউটওয়ার্ড রিসিপ্ট বা ওআর) মিলেছে, তার কোনওটাতে ক্রমিক নম্বরের সঙ্গে তারিখ মিলছে না, কোনও গাড়িতে আবার দৈনিক বরাদ্দের চেয়ে বেশি তেল নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার সরকারি সিলমোহর ছাড়াই স্লিপ বা ওআর ইস্যু করা হয়েছে, যা ঠিক নয়। অথচ সেই স্লিপ দেখেই তেল সরবরাহ করেছেন ট্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।
এ দিন অধিবেশনে এ সব নিয়েই সরব হন কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায় ও সিপিএমের দীপু দাস। অধিবেশনের মধ্যেই কিছু কাগজপত্র দেখিয়ে প্রকাশবাবু বলতে থাকেন, “মেয়র কলকাতাতেই ছিলেন না। অথচ তাঁর জন্য বরাদ্দ গাড়ির তেল তোলা হয়েছে।” তাঁর ওই বক্তব্য শুনেই চেঁচামেচি শুরু হয়। প্রকাশবাবুর পরে একই বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন সিপিএমের দীপুদেবীও। তাঁর দাবি, অবিলম্বে এ ব্যাপারে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা হোক। তাঁর দাবিকে সমর্থন করেন বিরোধী দলনেত্রী রূপা বাগচীও। যদিও অডিট রিপোর্টে রূপাদেবীর গাড়িতে তেল ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, রূপাদেবীর গাড়ির জন্য বরাদ্দ তেলের পরিমাণের থেকে কয়েক লিটার বেশি নেওয়া হয়েছে। রূপাদেবী অবশ্য জানান, পরে তেল কম নিয়ে সেই হিসেব মেটানো হয়েছে।
এ দিকে, তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশবাবুর অভিযোগ নিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অধিবেশনে ওঁর কথা শুনলাম। সঙ্গে সঙ্গে তো এর জবাব দেওয়া যায় না। অভিযোগ খতিয়ে দেখছি।” শহরের বাইরে থাকাকালীন গাড়ি ব্যবহারের কোনও প্রশ্ন নেই বলে মেয়র এ দিন জানান।
তবে তেলের হিসেবে গরমিল নিয়ে অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে কোনও বিচারবিভাগীয় তদন্ত যে হবে না, তা অধিবেশন কক্ষেই সাফ জানিয়ে দেন মেয়র। তাঁর কথায়, “বিরোধীরা অধিবেশন কক্ষ গরম করতেই এ সব বলছেন। ওঁদের আমলে ক’টা ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত হয়েছে?” শোভনবাবু জানান, পুরসভার যুগ্ম কমিশনারকে তেলের হিসেবে গরমিলের বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। রিপোর্ট হাতে এলেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
|