দিনে দুপুরে আশ্রমিক পরিচয় দিয়ে একটি বহুতলের ফ্ল্যাটে ঢুকে ছুরি দেখিয়ে গৃহকর্ত্রীর গয়না লুঠ করে পালাল এক দুষ্কৃতী। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটে পাটুলি থানা এলাকায় গড়িয়ার রথতলার কাছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোডে। বুধবার সকালে এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেন ওই মহিলা। এ দিন তিনি লালবাজারে গিয়ে পুলিশকে দুষ্কৃতীদের বিবরণও জানান। বুধবার রাত পর্যন্ত অবশ্য এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ জানায়, জয়িতা চৌধুরী নামে বছর চল্লিশের ওই গৃহকর্ত্রী মঙ্গলবার সকালে বাড়িতে একাই ছিলেন। ওই সময়ে তাঁর স্বামী সুমন চৌধুরী ছিলেন অফিসে এবং তাঁদের মেয়ে ছিল স্কুলে। পুলিশকে জয়িতাদেবী জানান, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ফ্ল্যাটের কলিং বেল বাজে। দরজা খুলে তিনি দেখেন, সাদা ফতুয়া পরা ৬ ফুট লম্বা এক যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছেন। জয়িতাদেবী জানান, জিজ্ঞাসা করলে ওই যুবক জানায় সে দেশপ্রিয় পার্কের এক ধর্মীয় আশ্রম থেকে এসেছে। আশ্রমের জন্য চাঁদা হিসেবে এগারো টাকা চাইলে জয়িতাদেবী দরজা খোলা রেখেই টাকা আনতে ভিতরে যান। জয়িতাদেবী বলেন, “টাকা দেওয়ার পরই ওই যুবক এক গ্লাস জল চায়। খেয়ালই করিনি কখন ও আমার পিছন পিছন ঘরে ঢুকে পড়ে। জল নিয়ে ফিরে আসতেই ও নিজের ঝোলা থেকে জং ধরা একটি ছুরি বার করে আমার দিকে তাক করে ঘরের দামি জিনিস তাকে দিয়ে দিতে বলে।” |
চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডাকলে পরিস্থিতি খারাপ হবে বলে হুমকিও দেয় বলে জানান জয়িতাদেবী। এর পরই তাঁর গায়ের গয়না নিয়ে চম্পট দেয় সে। জয়িতাদেবীর অভিযোগ, ওই যুবক কিছু সোনার গয়না ও একটি হিরের আংটি লুঠ করে।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন কেন জানতে চাইলে জয়িতাদেবী বলেন, “খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এ ভাবে সাতসকালে চার তলার ফ্ল্যাট থেকে লুঠ হয়ে যাবে, ভাবতেই পারিনি। স্বামী বাড়ি ফেরার পরে তাঁকে সব কথা জানাই। তার পরই বুধবার থানায় অভিযোগ দায়ের করি।” এ ঘটনায় বহুতলের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ দিন ঘটনার সময়ে ওই বহুতলের নিরাপত্তারক্ষীও উপস্থিত ছিলেন বলে জয়িতাদেবীর স্বামী সুমনবাবু জানান।
ওই আবাসনের বাসিন্দাদের তরফে শেখর মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনার কথা জানতে পেরেই নিরাপত্তারক্ষীকে প্রশ্ন করি। কারণ, আমাদের বহুতলে সেলসম্যানদের ঢোকা নিষিদ্ধ।” শেখরবাবুকে নিরাপত্তারক্ষী জানান, ওই যুবক চাঁদা তোলার জন্য আবাসনের সমিতির কর্মকর্তার কাছেই যেতে চেয়েছিল। ঘটনার সময়ে পাম্প মেরামতির কাজে ব্যস্ত থাকায় বেশি জিজ্ঞাসাবাদ না করেই ওই যুবককে যেতে দেন তিনি। বাবু হরিজন নামে ওই নিরাপত্তারক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ওই বহুতলে ঢোকার আগে আশেপাশের বহুতলেও যায় ওই যুবক। সব জায়গাতেই সে দেশপ্রিয় পার্কের আশ্রমের নাম করে চাঁদা চায়। ওই বহুতলে কোনও সিসিটিভি-র ব্যবস্থা ছিল না বলে পুলিশ জানিয়েছে। জয়িতাদেবীকে পুলিশ এ দিন লালবাজারে ডেকে পাঠায় এবং তাঁর বিবরণ অনুযায়ী দুষ্কৃতীর স্কেচ আঁকানো হয়। |