তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষের গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে আবার চর্চায় ফিরে এসেছে সারদা-কাণ্ড। নতুন করে সরব হয়েছে বিরোধীরা। এরই মধ্যে বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে সাত মাস আগে পেশ করা বিলটি প্রত্যাহার করে বিধানসভায় নতুন বিল আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। কুণাল-পর্বে যে অস্বস্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে, লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে কড়া বিল এনে সেই পরিস্থিতি খানিকটা সামাল দেওয়া যাবে বলেই শাসক দল আশাবাদী।
সারদা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরেই গত ৩০ এপ্রিল বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে একটি বিল পাশ করিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রপতির সম্মতির অপেক্ষায় থাকা বাম আমলের একই রকমের একটি বিল। এপ্রিলে ওই নতুন বিল পাশের সময়েই বিরোধী শিবিরের তরফে বাম ও কংগ্রেস দাবি করেছিল, এমন সব সংস্থান বিলে রয়েছে, যা সংবিধান এবং ফৌজদারি দণ্ডবিধির বিরোধী। ফলে, ওই বিল ফের বিধানসভায় ফেরত আসবে বলে আশঙ্কা করেছিল বিরোধীরা। কার্যক্ষেত্রে কেন্দ্রের আপত্তির প্রেক্ষিতে বিল প্রত্যাহারই করে নিতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। অর্থাৎ সাত মাসের মধ্যে একই বিষয়ে দু’বার বিল প্রত্যাহার হয়ে দু’টি নতুন বিল আসছে!
ত্রুটি সংশোধন করে নতুন যে বিলের খসড়া রাজ্য অর্থ দফতর তৈরি করেছে, তারও নাম ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোটেকশন অফ ইন্টারেস্টস অফ ডিপোজিটর্স ইন ফিনান্সিয়াল এস্টাব্লিশমেন্টস্ বিল, ২০১৩’। এই বিল পেশ হওয়ার আগেই অবশ্য আজ, মঙ্গলবার সারদা-কাণ্ড ও অর্থলগ্নি সংস্থা প্রসঙ্গে বিধানসভায় মুলতবি প্রস্তাব আনতে চায় বিরোধী বামফ্রন্ট। গত বছর ডিসেম্বরে শীতকালীন অধিবেশনে এই সংক্রান্ত প্রস্তাব ঘিরেই তৃণমূল ও বাম বিধায়কদের মধ্যে প্রায় সংঘর্ষ বেধেছিল! এ বারের প্রস্তাব নিয়ে কী হবে, স্বভাবতই তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অবশ্য সোমবার বলেছেন, “বিরোধিতার জন্য আমরা বিরোধিতা করব না।” বিল নিয়ে আলোচনার আগে লগ্নি সংস্থার প্রশ্নে সরকারের মনোভাব বুঝে নিতে চায় বিরোধীরা।
নতুন বিলটিতে সংযোজন ও সংশোধন মিলে মোট পাঁচটি ধারা ও উপধারার রদবদল করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই অভিযুক্ত লগ্নি সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত সংক্রান্ত। এই বিল অনুযায়ী, আমানতকারীদের টাকা ফেরত না দেওয়া বা প্রতারণার অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য রাজ্য সরকার অর্থনৈতিক অপরাধ বিষয়ে এক জন ডিরেক্টর নিয়োগ করতে পারবে। তিনিই হবেন এই বিষয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ। নতুন বিলে সংযোজন করা হয়েছে, লগ্নি সংস্থাগুলি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সময়ে সময়ে স্টেটমেন্ট জমা দেবে। সেই তথ্য আবার ওই কর্তৃপক্ষ সেবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা কোম্পানি নিয়ামকের (আরওসি) কাছে পাঠাতে পারে। সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত সংক্রান্ত আইনি সংস্থানগুলি আরও জোরালো করতে চাওয়া হয়েছে বিলে। পাশাপাশিই বলা হয়েছে, প্রতারণায় অভিযুক্ত সংস্থার থেকে কেউ ঋণ নিয়ে থাকলে, তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা যাবে। অভিযুক্ত সংস্থা তাদের কোনও সম্পত্তি বেআইনি ভাবে হস্তান্তর করেছে (সেটা এই আইন চালুর আগে হলেও) কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে পারবে সরকার।
বিরোধী শিবিরের এক বিধায়কের কথায়, “আগের বার সরকার বলেছিল, বজ্রকঠিন বিল! সেই বিলই ফিরিয়ে নিতে হল। এ বার দেখা যাক! তবে এই বিল তো আর সারদা গোষ্ঠীর উপরে প্রযোজ্য হবে না!”
কুণাল-পর্ব নিয়েও সরকারকে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে বিরোধীরা। সারদা-কাণ্ড থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই রাজ্য সরকার তৃণমূল সাংসদ কুণালকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা অরুণাভ ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, “একটি চ্যানেলের কর্মী হিসেবে কুণালের বিরুদ্ধে পিএফ, আয়কর সংক্রান্ত যে অভিযোগে মামলা করা হয়েছে, তার সঙ্গে সারদার টাকা নেওয়ার ব্যাপারটির যোগই নেই। কুণালকে গ্রেফতার করে সারদার টাকা নেওয়ার মূল বিষয়টি থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে!” সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের কথাও ফের বলেছে কংগ্রেস। দলের নেতা নির্বেদ রায়ের কথায়, “তৃণমূলের প্রসাদ ভোগ করা পুলিশকে দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হতে পারে না। তাই আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিক, সেটাই আমরা চাই।” কুণালের ফেসবুক পেজের বক্তব্যের প্রসঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেছিলেন, যে যার নিদের বক্তব্য জানাতেই পারে। তা-ই নিয়ে তাঁরা ভাবিত নন। নির্বেদবাবুর পাল্টা কটাক্ষ, “এই কথাটা অম্বিকেশ মহাপাত্রের সময় উনি মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে পারলেন না! যে ফেসবুকের মন্তব্য নিয়ে মাথা ঘামাতে নেই!”
|