লগ্নি-বিল নিয়ে জট রইলই
রাষ্ট্রপতির সইয়ের পরে কেন্দ্রের প্রস্তাব জুড়তে চায় রাজ্য
গ্নি সংস্থা সংক্রান্ত বিলে সংশোধনের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তিন প্রস্তাবে আপত্তি নেই রাজ্যের। শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, কেন্দ্র যে তিনটি বিষয়ে স্পষ্টীকরণ চেয়েছে, তার ব্যাখ্যা অবিলম্বে দিল্লিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে মহাকরণ সূত্রের খবর, এখনই ওই বিলে নতুন বিষয়গুলি জুড়লে অযথা বিলম্ব হয়ে যাবে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার। তাই রাজ্যের তৈরি করা বিলটিতে রাষ্ট্রপতি সই করার পরই তাদের সেগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে দিক কেন্দ্র, দিল্লিকেও সেটাই জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হল, কেন্দ্র কি রাজ্যের এই আর্জি মানবে? দিল্লির একটি সূত্র বলছে, সম্ভবত না।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক তিনটি প্রস্তাব-সহ বিলটি রাজ্যপালের কাছে ফেরত পাঠিয়েছে। শুক্রবার মহাকরণে বিলটিতে কেন্দ্রের মতামত নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও আমলাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের তৈরি করা বিলটি কেন্দ্রীয় সরকার ফেরত পাঠায়নি। বিল একেবারে ঠিক আছে। কেন্দ্র ওই বিলের কয়েকটি ব্যাখ্যা চেয়েছে মাত্র। তাতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অবিলম্বে ব্যাখা পাঠিয়ে দেব।”
ওই তিনটি প্রস্তাব কী কী, তা এ দিন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, “লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত অপরাধের বিচারে যে বিশেষ আদালতের কথা বিলে বলা আছে, কেন্দ্র তার ক্ষমতা বাড়াতে বলেছে। যাতে অন্য কোনও রাজ্যে থাকা মামলার বিচারও ওই আদালতে হতে পারে। এটা মেনে নিতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই ধরনের মামলায় অভিযুক্ত যাতে আগাম জামিন না পায়, সেই বিষয়টিও বিলে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছে কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, “ওরা ঠিকই তো বলেছে। অপরাধী আগাম জামিন যাতে না পায় সেই ব্যাপারটা আমরা দেখব।”
কেন্দ্রের তৃতীয় প্রস্তাবেও যে তাঁর সরকারের আপত্তি নেই তা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “তৃতীয় প্রস্তাবে কেন্দ্র ‘কম্পাউন্ডিং অব অফেন্সেস’ কথাটি যোগ করতে বলেছে। যার অর্থ হল, কোনও অভিযুক্ত কারাদণ্ড এড়াতে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে রাজি থাকলে তার সংস্থানও রাখতে হবে। আমরা এই প্রস্তাবেও রাজি আছি।”
রাজ্যের আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “সরকার চায় অতি দ্রুত আইনটি চালু হোক। তাই দিল্লিকে বলা হবে, রাজ্যের বিলটিতে আগে রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিন। তার পরে কেন্দ্রের প্রস্তাবগুলি অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হবে। তাতে অনেক দ্রুত আইনটি তৈরি হয়ে যাবে।” কিন্তু দিল্লির খবর, রাজ্যের এমন আর্জি কেন্দ্র না-ও মানতে পারে। সাধারণ নিয়মে কোনও আইন নিয়ে কেন্দ্র আপত্তি করলে বা নতুন প্রস্তাব দিলে রাজ্য তাতে তার মতামত জানায়। উভয় পক্ষ সম্মত হলে বিধানসভায় সংশোধনী এনে রাজ্যকে নতুন করে পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করতে হয় কিংবা আপত্তিকর অংশ বাদ দিতে হয়। এর পরে ফের তা কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়। ২০০৩-এর লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত বিলটি বার বার কেন্দ্রের আপত্তির কারণেই আইনে পরিণত হতে পারেনি। এ বারও রাজ্যের প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আপত্তি তুলতে পারে বলে দিল্লির একটি সূত্র জানিয়েছেন। সূত্রটি বলেন, কেন্দ্র যদি রাজ্যের প্রস্তাব মেনে নিলে ভাল কথা। কিন্তু তা না হলে বিলটি আইনে পরিণত করতে অনেক সময় লেগে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রের তিন প্রস্তাব সংযোজন করে, বিধানসভায় সংশোধনী পাশ করিয়ে তার পরে আবার তা রাষ্ট্রপতির সইয়ের জন্য পাঠাতে হবে।
সরকারি মহলের ব্যাখ্যা, কেন্দ্রের ওই তিন প্রস্তাবে আইনটি আরও শক্তিশালী হবে। অর্থ মন্ত্রক চায়, বিশেষ আদালতের বিচারপতিকে লগ্নি সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে অন্য রাজ্যের কোনও লগ্নি সংস্থা নিয়ে কোনও অভিযোগ জমা পড়লেও যাতে এই আইনে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেই ক্ষমতা দিতে বলা হয়েছে। তামিলনাড়ুতে এই ব্যবস্থা রয়েছে। জেলের বদলে জরিমানা আদায়ের বন্দোবস্তও সেখানে রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তথা তৃণমূলের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে বলেন, কেন্দ্রীয় অর্থসচিব, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গর্ভনর এবং সেবির চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গত মাসের তিনটি (১৭, ২৪ এবং ৩১মে) বৈঠকে বেআইনি লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিলটির বিশদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেসের রেনুকা চৌধুরি, বিজেপি-র রবিশঙ্কর প্রসাদ, সিপিআই-এর গুরুদাস দাশগুপ্তরা। ওই বৈঠকে বিলটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সুদীপবাবু জানান, সেখানে বেআইনি লগ্নি সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, প্রয়োজনে দফতরগুলিতে ঢুকে তল্লাশি, অধিগৃহীত সম্পত্তির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার মতো বিষয়গুলিও এই বিলে রয়েছে। সুদীপবাবুর বক্তব্য, সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বিলটি বিবেচনা করে একটি ‘অ্যাকশন টেক্ন রিপোর্ট’ আসন্ন অধিবেশনে লোকসভায় পেশ করবে।
কেন্দ্র বিলটি ফের রাজ্যকে ফেরত পাঠানোয় সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। এ দিন টিটাগড়ে সিটু-র এক সভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, “দু’বছরে এ রাজ্যে কাজ বলতে কিছু চিট ফান্ড হয়েছে। ২০ জন আত্মহত্যা করেছেন। আরও অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই সরকার একটা বিল করেছিল। বিধানসভায় বিলটা আসার সময়েই বলেছিলাম, এটা ভুলে ভরা। আপত্তি উঠবে। ফেরত আসবে। তাই-ই হয়েছে।” কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, “বিধানসভায় বিলটি আলোচনার সময়ই সংশোধনী এনে আমরা বলেছিলাম, সাংবিধানিক, প্রশাসনিক, ভারতীয় দণ্ডবিধি, ইত্যাদি বিষয়গুলি যেন এড়ানো না হয়। কিন্তু সরকার আমাদের সংশোধনী নেয়ইনি। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ফের অভিযোগ করেন, বাম জমানায় এই সংক্রান্ত বিলটির উপর কেন্দ্র তথা রাষ্ট্রপতির সুপারিশ মানা হয়নি। জবাবে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “একেবারে অসত্য অভিযোগ। আগেও উনি এ কথা বলেছিলেন, আমরা জবাব দিয়েছি। আবার একই কথা বলছেন বলে বলতে হচ্ছে, রাষ্ট্রপতির বার্তা মেনেই তখন বিল পাশ করানো হয়। কিন্তু সেটা পরে আর দিল্লির অনুমোদন পায়নি। তত দিনে তৃণমূল দিল্লিতে গিয়ে সরকারে যোগ দিয়েছে।” তাঁর দাবি, “যে সব ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে, তা দ্রুত স্পষ্ট হোক, সেটাই চাই।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.