মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ফিরলেন কুণাল, খেলেন মৃদু বকুনি
সারদা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোর পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে তাঁকে দেখা যায়নি বেশ কিছু দিন। ইদানীং দলের কর্মসূচিতেও তিনি সামনাসামনি আসেননি।
প্রায় দেড় মাস পরে, শুক্রবার দুপুরে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষকে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ঢুকতে দেখা গেল। অবশ্য তিনি একা নন, দলের রাজ্যসভার অন্য সাংসদরাও এলেন। উপলক্ষ, সাংসদদের উন্নয়ন তহবিলের টাকা খরচের অগ্রগতি সংক্রান্ত বৈঠক।
বৈঠক শেষে কুণালকে পাশে নিয়েই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন আর এক সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন। জানা গিয়েছে, বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত সব সাংসদকে একসঙ্গেই সভাকক্ষ ছেড়ে যেতে বলেছিলেন। নেত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ ছিল, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন শুধু ডেরেকই। তবে সেই কথাবার্তা চলার সময় ডেরেকের পাশে আগাগোড়াই থেকে যান কুণাল। প্রশ্ন উঠছে, এ ভাবেই কুণালকে ফের দলের পক্ষ থেকে জনসমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা হল কি না! আখেরে এটা কুণালের রাজনৈতিক পুনর্বাসনেরই বার্তা দিচ্ছে কি না!
গত দু’মাসের বেশি সময় ধরে কুণাল ঘোষ কার্যত আত্মগোপন করে ছিলেন। ৩ মে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে তৃণমূলের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে তাঁকে দেখা যায়নি। হাওড়ায় লোকসভা উপনির্বাচনের প্রচারেও কুণাল আড়ালে থেকে গিয়েছিলেন। অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে সিপিএমের সভার পাল্টা-প্রচারেও তিনি থাকেননি। শেষ বার তাঁকে জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল বিধাননগর কমিশনারেটে। সারদা মামলায় পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল।
প্রত্যাবর্তন। শুক্রবার মহাকরণে। —নিজস্ব চিত্র
বস্তুত সারদা গোষ্ঠীর কাছের লোক হিসেবে কুণাল ঘোষের নামই জনমানসে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিল। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন সিআইডি-কে যে চিঠি লিখেছিলেন, তাতে ব্যবসায় ভরাডুবির জন্য অন্য আরও কয়েক জনের সঙ্গে কুণাল ঘোষের নামেও অভিযোগ ছিল। সার্বিক পরিস্থিতিতে যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছিলেন মমতা। তৃণমূলের বহু নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে কুণালের পদত্যাগ করা উচিত বলেই মত প্রকাশ করে এসেছেন। কিন্তু ঘটনা হল, মমতা নিজে কোনও দিনই কুণালের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার ইঙ্গিত দেননি। গত ২৬ এপ্রিল কুণাল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে তিনি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিতে রাজি আছেন।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিন বৈঠকে কুণালকে মুখ্যমন্ত্রী খুবই মৃদু বকুনি দেন। অত্যন্ত নরম গলায় বৈঠকের মধ্যে মমতা কুণালের কাছে জানতে চান সারদা গোষ্ঠী যে বাজার থেকে এই ভাবে টাকা তুলছিল, তা কি তিনি জানতেন না? বার তিনেক মমতা কুণালকে এই প্রশ্নটা করেন। তৃণমূলের ভিতরে ছোট-বড় বহু নেতাই এত দিন ভেবে আসছিলেন, সারদা কেলেঙ্কারির জেরে মুখ্যমন্ত্রী কুণালকে কোনও কড়া বার্তা দেবেন। এ দিনের বৈঠকের অভিজ্ঞতা তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করেনি।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে কুণাল নিজে বেশ খোশমেজাজেই ছিলেন। তাঁর শরীরী ভাষাতেও স্বস্তি ধরা পড়ছিল। দলীয় সূত্রের খবর, এ সপ্তাহের গোড়াতেই মমতা কুণালকে ফোন করে শুক্রবারের বৈঠকে আসার কথা বলেন। সেই ফোন পাওয়ার পরেই কুণালের ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছিল। সতীর্থদের ফোন করে নিজের উচ্ছ্বাস গোপন করেননি তিনি। তার পর এ দিনের বৈঠক ভালয় ভালয় মিটে যাওয়ার পরে কুণাল এখন আরও ফুরফুরে বোধ করছেন। দলীয় কোনও কোনও মহলে সে কথা নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি। সরাসরি সারদা মামলায় না হলেও অর্থলগ্নি সংস্থার বিতর্কে নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের আর এক সাংসদ কে ডি সিংহের। কুণালের পাশাপাশি এ দিন তিনিও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিবেক গুপ্ত এবং নাজিমুল হক শুধু হাজির থাকতে পারেননি।
বৈঠক শেষে ডেরেক জানান, প্রত্যেক সাংসদ বছরে পাঁচ কোটি টাকা করে পান। সেই টাকা রাজ্যের উন্নয়নে কোন কোন খাতে কী ভাবে খরচ হবে, কোন প্রকল্পের কতখানি অগ্রগতি হয়েছে তা জানতেই মুখমন্ত্রী বৈঠক ডেকেছিলেন। ডেরেক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো, অ্যাম্বুল্যান্স প্রদান, সৌন্দর্যায়ন এ সব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।” পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে ডেরেক বলেন, “জেলাওয়াড়ি উন্নয়নের তথ্য বই আকারে প্রকাশ করে ভোটের আগে বিলি করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যসভার সাংসদেরাও প্রচারে নামবেন।” উত্তরবঙ্গে প্রচারের দায়িত্বে থাকবেন সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় এবং সামগ্রিক দায়িত্বে থাকবেন মুকুল রায়।
পঞ্চায়েতের প্রচারে কুণাল ঘোষের ভূমিকা কী হবে? ডেরেক কোনও মন্তব্য করেননি।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.