সাজবে বাঁশদহ বিল, চাঁদের বিল
পর্যটক টানতে আবাস ও নৌকাবিহারের ভাবনা
র্যটকদের কাছে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নানা জায়গাকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য অর্থ বরাদ্দ করল রাজ্যের পর্যটন দফতর। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঢেলে সাজাতে সম্প্রতি বরাদ্দ হয়েছে দেড় কোটি টাকা। ওই ব্লকেরই বাঁশদহ বিল ঘিরে পর্যটক আবাস, নৌকাবিহার-সহ বেশ কিছু পরিকল্পনার জন্য গৃহীত হয়েছে আরও ১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা।
নদিয়া জেলার নবদ্বীপের গা ঘেঁষেই রয়েছে পূর্বস্থলী ১ ব্লক। প্রতি বছর শুধু এ দেশ থেকেই নয়, দেশের বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ আসেন নবদ্বীপ ও মায়াপুরে। জনশ্রুতি, বিদ্যাচর্চা করে উত্তর শ্রীরামপুরে বিশ্রামের জন্য আসতেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। বর্তমানে সেই বিশ্রামস্থলে হয়েছে গোপীনাথ মন্দির। গঙ্গানন্দপুর গ্রামে রয়েছে তাঁর বিদ্যাশিক্ষার স্থান। শোনা যায়, পণ্ডিত বাসুদেব সার্বভৌম থাকতেন বিদ্যানগর গ্রামে। পাণ্ডিত্যের জন্য তাঁকে সভাকবি করেছিলেন ওড়িশার রাজা প্রতাপ রুদ্র।
জনশ্রুতি, ‘গীতগোবিন্দ’-এর শেষ অংশ কবি জয়দেব পূর্বস্থলীতেই রচনা করেছিলেন। গুরু-শিষ্যের নামে একটি মন্দিরও রয়েছে এখানে। জাহান্নগরে রয়েছে সাড়ঙ্গ-মুরারি আশ্রম। পূর্বস্থলীর ব্রহ্মানিতলায় প্রত্যেক বছর মহা আড়ম্বরে পুজো হয় দেবী মনসার। বসে গাছ মেলা। ব্রহ্মানিতলার পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে চাঁদের বিল।

পর্যটন দফতরের উদ্যোগে সাজবে এই বাঁশদহ বিল। চলছে কচুরিপানা পরিস্কারের কাজ। —নিজস্ব চিত্র।
কথিত আছে, চাঁদ সদাগরের সপ্তডিঙা এখানেই ডুবে যায়। আবার এখানেই রয়েছে চৈতন্য ভাগবতের রচয়িতা বৃন্দাবন দাসের পাঠবাড়ি। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে জনপ্রিয় দোগাছিয়া গ্রামের রায়চৌধুরী পরিবারের দশভূজা এবং মদনমোহন মন্দির। রয়েছে দ্বিজ বংশীদাস প্রতিষ্ঠিত নিমতলা এলাকায় গৌর-গদাধর মন্দির। এ ছাড়া, পূর্বস্থলী ১ ব্লকে রয়েছে বেশ কিছু মুসলিম স্থাপত্যকীর্তি। জাহান্নগর গ্রামে অষ্টাদশ শতাব্দীর কারুকার্যমণ্ডিত জাহান আলি খাঁর মসজিদ হল এরকম একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি। রয়েছে খোনকারতলার বিখ্যাত পীরের মাজার।
তিন বছর আগে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নানা দর্শনীয় স্থানগুলিকে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরার জন্য উদ্যোগী হন এলাকার বিধায়ক স্বপন দেবনাথ। তাঁর চেষ্টায় তৈরি হয় প্রাচীন ঐতিহ্য বিষয়ক একটি তথ্যচিত্র। সেটি বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনও করা হয়। ওই তথ্যচিত্রের সিডি পর্যটন দফতরেও পাঠান স্বপনবাবু। দু’বছর আগে তৎকালীয় পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ পূর্বস্থলীতে এলে তাঁকেও বিষয়টি জানান স্বপনবাবু। কয়েকটি দ্রষ্টব্য স্থান ঘুরে দেখেন মন্ত্রী। পূর্বস্থলীর বাঁশদহ বিলকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করা তোলার জন্য রাজ্যের পর্যটন দফতরে প্রস্তাব পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, বিলের আশপাশে তৈরি করা হবে পর্যটক আবাস। বাঁশদহ বিলের জলে বোটিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। বাঁশদহ বিল এবং পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নানা দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার পর পর্যটন দফতর অর্থ বরাদ্দ করে।
স্বপনবাবু বলেন, “ইতিমধ্যে বাঁশদহ বিলমুখী একটি রাস্তাও তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকদের আবাস তৈরির জন্য বিলের কাছাকাছি একটি জমি দেখা হয়ে গিয়েছে। শুধু প্রকল্প দু’টির ব্যাপারে পর্যটন দফতরে একটি ডিটেল্স প্রোজেক্ট রিপোর্ট পাঠানোর দরকার। এর ভার দেওয়া হয়েছে পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিককে।” দিলীপবাবুর বক্তব্য, “ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকা ১৫টি স্থানকে বাছা হয়েছে। কোথাও সৌন্দর্যায়নের জন্য ফুলের বাগান, কোথাও মন্দির সংস্কার আবার কোথাও পানীয় জলের সমস্যা মেটানো-সহ স্থান পিছু গড়ে ১০ লক্ষ টাকার পরিকল্পনা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.