ওয়াংখেড়েতে তখন সচিন তেন্ডুলকরের বিদায়ী ভাষণের আবেগে ভাসছে সারা দেশ। শেষের আগের টেস্ট খেলে যাওয়া ইডেনে যে ওই সময়ই আর এক বিদায়যজ্ঞের আয়োজন শুরু হবে, কে জানত? বাংলার ব্যাটিংয়ে ধস নামা দেখে, নিজেদের মাঠেই লক্ষ্মীদের ফলো অন করা দেখে যে কোনও ক্রিকেটপ্রেমী প্রশ্ন তুলতেই পারেন, ক্রিকেট-ঈশ্বরের দেশে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং সম্ভব? এমন ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী চললে রঞ্জি ট্রফির গ্রুপ থেকেই হয়তো বিদায় ঘটবে বাংলার।
যাঁর শিকারে সচিনের শেষ টেস্ট সিরিজের দুটো ম্যাচই জিতল ভারত, সেই মহম্মদ শামি সন্ধ্যায় এই ঘটনার কথা শুনে বেশ লজ্জা পেয়ে গেলেন। বলতে পারলেন না কিছুই। শুধু বললেন, “কিছুই বলার নেই আমার।” সকালে ওপেনার অরিন্দম দাসের (১০৪) সেঞ্চুরিতে যখন তিন পয়েন্টের লক্ষ্যপূরণ হতে চলেছে বলে মনে হচ্ছিল, সেখান থেকে দিনের শেষে বাংলার ব্যাটসম্যানরা এক পয়েন্ট বাঁচানোর কথা ভাবতে ভাবতে যে যাঁর ঘরে ফিরবেন, এ অভাবনীয়। খেলার শেষ দিকে কোচ অশোক মলহোত্রকে জুনিয়র দলের দুই নির্বাচকের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলতে দেখা গেল। চেতেশ্বর পূজারার সৌরাষ্ট্রর বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে যদি কোচ জুনিয়র দল থেকে কয়েক জন ক্রিকেটার নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন, তা হলে ভুল হবে না। আর যাই হোক, এর চেয়ে খারাপ কিছু হবে না বোধহয়। |
চিন্তিত লক্ষ্মী। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
ইডেনের স্কোরবোর্ডে এক সময় দেখা যাচ্ছিল ১৯২-২। এখান থেকে মাত্র এক সেশনে ২৬৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার গ্রহণযোগ্য যুক্তি কী হতে পারে? উইকেটের দোহাই? আগের দিনই খেলার পর ঋ
দ্ধিমান সাহা বলেছিলেন, “বড় ভুল বা খুব বাজে শট না খেললে এই উইকেটে আউট হওয়া শক্ত।” এ দিন মধ্যপ্রদেশের ছয় উইকেট পাওয়া অফস্পিনার জলজ সাক্সেনা সাফ বলে দিলেন, “উইকেটে ঘূর্ণি-টুর্নি কিছু ছিল না। ওরা বাজে শট খেলে আউট হল। আমি শুধু সোজাসুজি বল করে গিয়েছি।” দিনের সবচেয়ে সফল বোলারের যেখানে কৃতিত্ব নিতে এত অনীহা, সেখানে ব্যাটসম্যানরা আর কি অজুহাত দেবেন? পারলেনও না। অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল বললেন, “দলের এই ব্যাটিংয়ে আমি খুব হতাশ। কিন্তু এখনও সময় আছে, আশা করি আমরা দ্বিতীয় বারে ভাল ব্যাটিং করব। করতে হবে, না হলে ওরা এই ম্যাচ থেকে সাত পয়েন্ট নিয়ে চলে যাবে। আমরা কিছুই পাব না।”
আপাতত ইঙ্গিত সে রকমই। রবিবার ৯০ ওভার বাংলাকে ব্যাট করতেই হবে। তা হলে তারা ১ আর মধ্যপ্রদেশ ৩ পয়েন্ট পাবে। কিন্তু শনিবার দিনের শেষে বিনা উইকেটে ৪৩-এ দাঁড়িয়ে থাকা বাংলার ব্যাটিংয়ে যদি ১৬৮-তে পৌঁছনোর আগেই ধস নামে, তা হলে সাত পয়েন্ট নিয়ে যাবে মধ্যপ্রদেশ। বাংলার ভাগ্যে কিছুই জুটবে না। |
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মধ্যপ্রদেশ ৪৩১
বাংলা ২৬৩
(অরিন্দম দাস ১০৪, জলজ সাক্সেনা ৬-৫৩) ও ৪৩-০। |