দু’জনের আলাদা মানসিকতাই বোর্ডে ফুটে উঠছে
তেন্ডুলকরের বিদায়ের দিন ভারতীয় খেলাধুলোর আর এক নক্ষত্রেরও দাপট শেষের ইঙ্গিত! নিজের শহরে দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পরপর দুটো গেমে যে ভাবে বিশ্বনাথন আনন্দ হারল তার পর কিন্তু এটাই মনে হচ্ছে।
চেন্নাইয়ের এক বন্ধুর মুখে শুনছিলাম আনন্দের জনপ্রিয়তা ওখানে ঠিক কতটা। প্রায় গোটা শহর ওর কাট-আউট, পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছে। ঘরের ছেলের লড়াই দেখতে চেন্নাই থেকে সাড়ে চারশো কিলোমিটার দূরের মাদুরাই থেকেও লোক এসেছে। আনন্দের ক্যারিশমার গুণে ওকে নিয়ে উৎসাহে পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। আসলে পাঁচ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, দাবার জগতে অসাধারণ সব উচ্চতা ছোঁয়ার জন্যই শুধু নয়, কিংবদন্তি হয়েও আনন্দের শান্ত, মাটিতে পা থাকা, বিতর্কহীন, ভাবমূর্তির কারণেই ও এত জনপ্রিয়। কিন্তু সমর্থকদের প্রত্যাশার এ বারের বিশ্ব মিটে আনন্দ এখন অবধি মেটাতে পারছে কোথায়?
শুক্রবারই বলেছিলাম এর আগে অনেক বারই পিছিয়ে পড়ে পরের গেমেই উঠে দাঁড়িয়েছে আনন্দ। তবে এ বার হারের পর টিভি-তে ওর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে ভাল লাগেনি আমার। বড্ড বেশি হতাশ মনে হচ্ছিল।
কার্লসেন: ৪ আনন্দ: ২
বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
চাপে পড়ে গেলে যে রকম দেখায়। চেন্নাইয়ের দাবামহলে নিয়মিত ফোনটোন করে যা জানছি, দু’টো টিম দেখেও বোঝা যাচ্ছে কারা বেশি চাপে। ওখানে যে হোটেলে টুর্নামেন্ট হচ্ছে তার সাততলায় কার্লসেন আর এগারো তলায় আনন্দের এখন অস্থায়ী ডেরা। কার্লসেন আর সেকেন্ডরা ফুরফুরে আছে। কার্লসেন কখনও টিমের সঙ্গে বাইরেও খেতে যাচ্ছে, বিশ্রামের দিন ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরের রিসর্টে ফুটবল-টেবল টেনিসে মজে থাকছে। কখনও রিসর্টের বিচে মনোরম দৃশ্য উপভোগ করছে। কিন্তু আনন্দ বা সেকেন্ডদের টুর্নামেন্ট শুরুর পর ফ্লোরের বাইরে সে ভাবে দেখাই যাচ্ছে না!
আমার মনে হয় কার্লসেনের চেয়ে শ’খানেক রেটিং পয়েন্টে পিছিয়ে লড়াইয়ে নামার আনন্দের উপর একটা মানসিক প্রভাব হয়তো পড়েছে। পঞ্চম গেমে প্রথম হারের পর মানসিক ভাবে আরও খারাপ জায়গায় চলে যেতে পারে। যেটা এ দিনের গেমে কাটাতে পারল না। আগের গেমই জেতা আত্মবিশ্বাসী কার্লসেন সেই সুযোগ নিতে ভুল করেনি।
ষষ্ঠ গেমের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, আনন্দ ওপেনিংয়েই কার্লসেনের ফাঁদে পড়ার থেকে সতর্ক, মন্ত্রীকে রেখে দিয়ে একটা ডায়ানামিক গেম খেলবে। কিন্তু গেম যত এগোল ততই পঞ্চম গেমের মতো একই ছবি দাঁড়াল। মানে সেই লং গেম আর বোর্ডের পজিশন কার্লসেনের পছন্দের জায়গায় চলে যাওয়া। আনন্দের মন্ত্রীর শেষ দিকের চালের মাথামুন্ডু বুঝতে পারিনি। একটা বোড়ে ‘স্যাক্রিফাইস’ করেও গেম বাঁচাতে পারল না।
বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের আসরে প্রচণ্ড অভিজ্ঞ আনন্দের বিরুদ্ধে কার্লসেনের এ রকম পরপর জয় অবাক করার মতো। আসলে এটাই বোধহয় কার্লসেন। যার বিরুদ্ধে হোমওয়ার্ক কাজ করবে না। যে কোনও নির্দিষ্ট থিওরিতে না গিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীকে কোণঠাসা করে ফেলবে। ভুল করতে বাধ্য করাবে। এখনও ছ’টা গেম বাকি ঠিকই, তবে কার্লসেন যে রকম ফর্মে আছে, তাতে ২-৪ পয়েন্ট পিছিয়ে পড়ে টুর্নামেন্টে ফিরে আসা আনন্দের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এ দিন খেলার পর টিভি-তে সাংবাদিক বৈঠকে ওকে মেজাজ হারাতেও দেখলাম। যেটা কখনও করে না!

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.