পড়ন্ত বিকেলে নেট টাঙানো হল ইডেনের প্র্যাকটিস উইকেটে। একে একে সেখানে ঢুকে পড়লেন বাংলার ব্যাটসম্যানরা। রাত পোহালেই তো তাঁদের যুদ্ধ। সারা দিনে অর্ধেকের বেশি মাঠে ফিল্ডিং করার ক্লান্তিও পাত্তা পেল না। অন্ধকার নামার আগে পর্যন্ত চলল সংক্ষিপ্ত নেট প্র্যাকটিস। শনিবার বারবেলায় তাঁদের লড়াইটা নেহাত সোজা নয় যে।
হোম ম্যাচ। পাঁচ পয়েন্ট। এ সব এখন শিকেয়। চাই ৩১৫। শুক্রবার শেষ বিকেলে ইডেনে বাংলার ড্রেসিং রুমে একমাত্র স্লোগান এটাই। তা হলে পাঁচ পয়েন্ট না হোক, অন্তত তিন পয়েন্ট পাওয়া যাবে এই ম্যাচ থেকে। শনিবার সকালে এই লক্ষ্য নিয়েই নামবেন অরিন্দম দাসরা। ঋদ্ধিমান সাহা, সন্দীপন দাস, লক্ষ্মীরতন শুক্ল, শুভময় দাসদের ব্যাট হাতে নামা বাকি। পারবেন না?
এ দিন সন্ধ্যায় ইডেন ছেড়ে বেরনোর সময় যা বলে গেলেন ঋদ্ধিমান-অরিন্দমরা, তাতে বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীদের আশাবাদী হয়ে ওঠার যথেষ্ট কারণ আছে। ও দিকে ওয়াংখেড়ের উইকেটের হাল ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের বেহাল দশা যেমন চিৎকার করে বলে দিচ্ছে শনিবার সেখানে সারা দিন খেলা হলে এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটবে, ইডেনের উইকেট কিন্তু বলছে অন্য কথা। ঋদ্ধিমান বললেন, “এখন উইকেটের যা অবস্থা, তাতে ভালই ব্যাট করা যাবে। খুব বড় ভুল না করলে বা বাজে শট না খেললে এই পিচে আউট হওয়া শক্ত।” দিনের শেষে যিনি ৭০-এ অপরাজিত, সেই বাংলার ‘ডন’ অরিন্দম বললেন, “উইকেট ঠিকই আছে। ব্যাট করতে খুব অসুবিধা হচ্ছে না। আশা করি কাল আমরা ভাল ব্যাট করব।”
|
শনিবার ইডেনে অরিন্দম দাস। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
অধিনায়ক লক্ষ্মী যে ভাবে গম্ভীর মুখে “কাল কথা বলব, প্লিজ...কাল”, বলতে বলতে দৌড়ে বেরিয়ে গেলেন, তাতে মনে হওয়া স্বাভাবিক, শনিবার বিকেলে হাসিমুখেই ওই পথ দিয়ে বেরোবেন তিনি!
উইকেট নিয়ে আগের দিন বোলাররা যতটা ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন, এ দিন ব্যাটসম্যানদের গলায় অন্য সুর শুনে ইডেন-কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা তোপ, “ওদের (বাংলার ক্রিকেটারদের) ভাল খেলতে বলুন, তা হলেই ভাল হবে। ভাল খেলে তবেই ম্যাচ জেতা যায়। ভাল পিচ পেলে নয়।” যে ব্যাটসম্যানদের স্বর্গে মধ্যপ্রদেশকে অল আউট করতে বাংলার বোলারদের প্রায় সওয়া দশ ঘন্টা ও প্রায় ১৩৬ ওভার লেগে গেল, দিন্দা দিনের দ্বিতীয় স্পেলে পেলেন জোড়া উইকেট, অনুষ্টুপ মজুমদার ফেরালেন তিন ব্যাটসম্যানকে ও শিবশঙ্কর পাল শেষ করলেন ৩-৬৮-তে, দুপুরের পর সেই উইকেটে অবশ্য মাঝে মাঝেই ঈশ্বর পাণ্ডে, আনন্দ রাজনরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন। ইনিংসের শুরুতে পাণ্ডের বাউন্সার ওপেনার রোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (২৯)। হেলমেটে ধাক্কা মারে। তার পরই তিনি বাঁহাতি স্পিনার অঙ্কিত শর্মার পাতা এলবিডব্লু-র ফাঁদে পা দেন। পেসার আনন্দ রাজনও ব্যাটসম্যানের বুকের উপর বল ওঠান। কিন্তু গত মরসুমে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ৯৮-এ অপরাজিত থাকা অরিন্দম মনে করেন সে সব সামলে নেওয়া যাবে। কোচ অশোক মলহোত্রও গাড়িতে উঠতে উঠতে বললেন, “আমি আশাবাদী।”
কিন্তু বারবেলায় উইকেটে যদি বল ঘুরতে শুরু করে...। মনে রাখবেন, ঈশ্বরদের দলে কিন্তু দুই স্পিনার। |
সংক্ষিপ্ত স্কোর
মধ্যপ্রদেশ ৪৩১ (নমন ওঝা ১১৫, উদিত বিড়লা ৬৮, মণীশ মিশ্র ৬৪,
শিবশঙ্কর ৩-৬৮, অনুষ্টুপ ৩-৪২) বাংলা ১১৭-১ (অরিন্দম ব্যাটিং ৭০)। |